উঁকি দিচ্ছে ভুটান ট্র্যাজেডির দু:স্বপ্ন

২০১৬ সালের কথা ফুটবলপ্রেমীদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এক ভুটানেই স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে গোলশুন্য ড্রয়ের পর ভুটানের মাটিতে ৩-১ গোলে পরাজয় খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছিল জামাল ভূঁইয়ার দল। হিসাব করে ১৬ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এসময় নিজেদের আয়োজনেই কেবল ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল।

২০১৬ সালের কথা ফুটবলপ্রেমীদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এক ভুটানেই স্বপ্নের সলিল সমাধি হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। ঘরের মাঠে গোলশুন্য ড্রয়ের পর ভুটানের মাটিতে ৩-১ গোলে পরাজয় খাদের কিনারে পৌছে গিয়েছিল জামাল ভূঁইয়ার দল। হিসাব করে ১৬ মাস আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। এসময় নিজেদের আয়োজনেই কেবল ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল।

এরপর কাতার বিশ্বকাপের প্রাক বাছাইয়ের খেলায় লাওসের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ১-০ গোলের জয় আর হোম ম্যাচে গোলশুন্য ড্র করে মূল পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। গ্রুপ ‘ই’তে খেলা বাংলাদেশের বাকি তিনটি ম্যাচের একটিতে আজকে মাঠে নামছে। কাতারের দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মাঠে নামবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

বাকি তিনটি ম্যাচের শেষ দুটিতে ভারত ও ওমানের বিপক্ষে আগামী ৭ ও ১৫ জুন মাঠে নামবে জামাল ভুইয়ার দল। কিন্তু এই ম্যাচের আগে বারবারই ফিরে আসছে ভুটানের মাটিতে হারের সেই ট্র্যাজেডি। যদিও এসব নিয়ে এখন আর ভাবতে চাননা খেলোয়াড়রা। নিজেদের সেরাটা মেলে ধরে কাতার থেকে পয়েন্ট নিয়েই বাংলাদেশের বিমানে উঠতে চান তারা।

সেখানে কিছুটা হলেও পিছিয়ে রয়েছে লাল সবুজ পতাকাধারীরা। বিশেষত প্রতিপক্ষ হিসেবে র‌্যাংকিংয়ের মতো অনেক জায়গাতেই এগিয়ে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি। ১৮৯ এর বিপরিতে বাংলাদেশের র‌্যাংকিং এখন ১৮৪। আফগান দলটিকে ইউরোপের কোন দল বললেও যে ভুল বলা হবেনা। কারণ এই দলটিতে অনেক কিছুর মিশেল রয়েছে।

এই দলটিই যে সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। অথচ ২৬ সদস্যের পুরো দলের মাত্র তিন জনই থাকেন নিজ দেশে। বাংলাদেশ, ভারত,যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে খেলা ফুটবলাররাই দলে রয়েছেন। শক্তির বিচারে তারাই যে এগিয়ে রয়েছেন। এই যেমন করে দলটির শক্তি বাড়াতে নেওয়া হয়েছে মাসিহ সাইগানিকে। ১৯৮৮ সালে মাত্র দুই বছর বয়সে পরিবারের সাথে জার্মানী পাড়ি দেওয়ার পর দেশে খুব কম সময়ই থেকেছেন।

এখন বাংলাদেশের আবাহনীতে খেলার কারণে দুই বছর পর তার ডাক পড়েছে জাতীয় দলে। এতেই বোঝা যায় এই ম্যাচটি নিয়ে খুব বেশি সিরিয়াস আফগানিস্তান। তাজিকিস্তানের দুশাবনে প্রথম লেগের খেলায় ১-০ গোলে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। এবার কাতারে সেই ম্যাচের প্রতিশোধ নেওয়ার একটা সুযোগও তৈরি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৭৯ সালে এশিয়ান কাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে আফগানিস্তানের সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল।

সেই সময় ঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ, কাতার ও আফগানিস্তানকে নিয়ে দুই নম্বর গ্রুপের খেলা হয়েছিল। ডাবল লিগ পদ্ধতির সেই বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ ২-২ গোলের ব্যবধানে ড্র করার পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেছিল ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে। ৪২ বছরের এই সময়টাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি বাংলাদেশের।

৮ বারের দেখায় জয়-পরাজয় সংখ্যাটা সমানে সমান। ২০০৪ সালে সর্বশেষ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে সাফ গেমস ফুটবলে আফগানিস্তানকে ২-১ গোলে হারানোর পর আর জয়ের মুখ দেখেনি লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। এর ১১ বছর পর ২০১৫ ভারতে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের জয় এসেছিল ৪-০ গোলের বড় ব্যবধানে। ৮ বারের লড়াই বেশিরভাগই শেষ হয়েছে সমতায়।

সেখানে চারটি ম্যাচই ড্র হয়েছে। নবম লড়াইয়ে কে জিতবে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইপর্বের খেলা শেষ এখন প্রায় হতে চলেছে। পয়েন্টি টেবিলে তলানিতে এখন বাংলাদেশ। সামনের তিন ম্যাচে আফগানিস্তান ও ভারতকে টপকে যেতে না পারলে বাংলাদেশকে আবারো প্লে-অফ খেলতে হবে। সে ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য নির্বাসনে যাবার শঙ্কা দেখা দেবে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের দ্বিতীয়পর্বের শেষ তিন ম্যাচ তাই অনেকটা অগ্নিপরীক্ষা বাংলাদেশের জন্য। কাতারে শেষ তিনটি ম্যাচের দুটিতে জিততে পারলেই কেবল পাঁচ বছর আগে পাওয়া লজ্জা থেবে বাচঁতে পারবে।

বাকি তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষের মধ্যে র‌্যাংকিং এ ৮০ তে থাকা ওমানই সবচেয়ে এগিয়ে। ভারতের ১০৫ আর আফগানিস্তানের ১৪৯ এর সাথে বাংলাদেশের ১৮৪। পয়েন্ট তালিকায় পিছিয়ে থাকা তাই একেবারে অমূলক নয়। এত বড় আসরে খেলার আগে যতটা প্রস্তুতির প্রয়োজন ততটা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। বিদেশী কোন দলের সাথে খেলতে পারেনি প্রস্তুতি ম্যাচ। দেশে একমাত্র শেখ জামালের বিপক্ষে খেলে নিজেদের শক্তিমত্তা যাচাই করতে পেরেছ।

যদিও সেই ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। কাতারের গরমও এবার বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্ধী। ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অনুশীলন করে নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়েছে। মানিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছেন খেলোয়াড়রা। প্রস্তুতি যেমন তেমন ঘাটতি বলতে গেলে ম্যাচ খেলার। ম্যাচের আগেরদিন কোন অনুশীলন করেনি দল। কোচিং স্টাফের সদস্যরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ সাজাতেই ব্যস্ত সময় পার করেছেন। পাশাপাশি অনুশীলনে যতটা ফাকফোকর ছিল সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। কড়া রোদে অনুশীলন করলেও বাংলাদেশ কিন্তু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে খেলবে। ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য তৈরি করা ষ্টেডিয়ামগুলোতে ২২/২৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় খেলার সুযোগ মিলেছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের এখন অনেককিছুর সাথে মোকাবেলা করে তবেই জয়ের চিন্তা করতে হবে। শক্তির বিচারে পিছিয়ে থাকলেও ম্যাচের দিন সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাইছে জামাল ভুইয়া। দেশের মানুষের কাছে দোয়া কামনা করে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ’আমাদের সাথে শক্তির বিচারে আফগানিস্তান আর ভারতের মধ্যে খুববেশি পার্থক্য নেই। প্রথম লেগে ১-০ গোলে হারের পর কাতারে জয়ের আশা করতেই পারি। নিজেদের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে জয় পেতে চাই।’

কোচ জেমি ডে বলেন, ‘শুরুতে ছেলেদেরকে কাতারের আবহওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর কিভাবে শেষ তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলবে সেই সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি একটা ভাল ফলাফল নিয়ে দেশে ফিরতে পারব। আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিন ম্যাচের জন্যই দোয়া চাইছি।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...