সাধু ইকার বৃত্তান্ত

২০০৯-১০ মৌসুমে সেভিয়ার বিপক্ষে এক খেলায় ক্যাসিয়াস অসাধারণ একটা সেভ করেন। তিনি অবিশ্বাস্য গতিতে গোলবারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যান। সেখানে দিয়াগো পেরেত্তির সাথে খুব কাছাকাছি অবস্থায় ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে পেরত্তিকে হারিয়ে গোল সেভ করেন। এই সেভ দেখে ইংল্যান্ডের এর খ্যাতনামা গোলরক্ষক গর্ডন বাঙ্কস বলেন, ‘গোলমুখে ইকার ক্যাসিয়াসের প্রতিক্রিয়া (রিফ্লেক্স) অসাধারণ। এমন দ্রুত গতির রিফ্লেক্স তিনি কখনো দেখেন নি। যদি ইকার এভাবে খেলতে থাকেন তাহলে তিনি ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষকের জায়গা দখল করে নেবেন।’

২০০২ সালের কথা। তখন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অল্প অল্প দেখি। সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সালোনা। সমর্থন করলাম বার্সেলোনার। বার্সাকে সমর্থন করার কোন স্পেশাল কারণ ছিল না। আমার প্রিয় একজন খেলোয়াড় ছিল মার্ক ওভারমার্স। ওর জন্যেই মূলত বার্সাকে সমর্থন করেছিলাম। তবে সেই ম্যাচে রিয়ালের গোলরক্ষক সিজার সানচেজ দুর্দান্ত কয়েকটি সেভ করেছিল।

ফাইনালে সমর্থন করেছিলাম রিয়ালকে। লেভারকুসেনের কাউকে সেই অর্থে চিনতাম না। সেই ম্যাচে জিদানের ম্যাজিক্যাল গোলে মাদ্রিদ শিরোপা জিতে। কিন্তু আমি ভড়কে গিয়েছিলাম যখন ৬৮ মিনিটে সানচেজ ইনজুরিতে পড়ে মাঠ থেকে চলে যায়। তার জায়গায় নামে এক নতুন গোলরক্ষক। ‘প্রায় আমার বয়সী এই কিশোর কি পারবে এই বিগ ম্যাচের চাপ নিতে’ – এই ভাবনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল কয়েকটি দুর্দান্ত সেভ করে। পছন্দের তালিকায় তখনই সে এসে পড়লো।

অথচ তখন আমার জানা ছিল না যে এই ছেলেটাই ছিল রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক হিসেবে প্রথম পছন্দ। ফর্মহীনতার কারণে মাঝে প্রথম একাদশে জায়গা হারিয়েছিল। ছেলেটার নাম ইকার ক্যাসিয়াস।

ইকার ক্যাসিয়াস ১৯৯০-৯১ মৌসুমে রিয়ালের যুব দলের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ২৭ শে নভেম্বর মাত্র ১৬ বছর বয়সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের একটা ম্যাচে সিনিয়র একাদশে ডাক পান। তবে স্থায়ী ভাবে ডাক পান ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে। ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়াকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচে তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর ৪ দিন যা কিনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে সবচেয়ে কম বয়সী গোলরক্ষকের রেকর্ড।

মাঝে খারাপ ফর্মের কারণে প্রথম একাদশে জায়গা হারালেও ২০০২ এর ফাইনালের পর আবার স্থায়ী হন।

ক্যাসিয়াস আসলে কেমন গোলরক্ষক ছিলেন?

২০০৯-১০ মৌসুমে সেভিয়ার বিপক্ষে এক খেলায় ক্যাসিয়াস অসাধারণ একটা সেভ করেন। তিনি অবিশ্বাস্য গতিতে গোলবারের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যান। সেখানে দিয়াগো পেরেত্তির সাথে খুব কাছাকাছি অবস্থায় ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে পেরত্তিকে হারিয়ে গোল সেভ করেন।

এই সেভ দেখে ইংল্যান্ডের এর খ্যাতনামা গোলরক্ষক গর্ডন বাঙ্কস বলেন, ‘গোলমুখে ইকার ক্যাসিয়াসের প্রতিক্রিয়া (রিফ্লেক্স) অসাধারণ। এমন দ্রুত গতির রিফ্লেক্স তিনি কখনো দেখেন নি। যদি ইকার এভাবে খেলতে থাকেন তাহলে তিনি ইতিহাসের সেরা গোলরক্ষকের জায়গা দখল করে নেবেন।’

২০১১-১২ মৌসুমে ক্যাসিয়াস আইএফএফএইচএসের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার অর্জন করেন। বুফন এর পর ইকার ক্যাসিয়াস ছিলেন একমাত্র গোলরক্ষক যিনি পরপর চারবার এই অ্যাওয়ার্ড জিততে সক্ষম হয়েছিলেন। সংস্থাটি একুশ শতকে বুফনের পর এই ক্যাসিয়াসকেই সেরা গোলরক্ষক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০১২-১৩ মৌসুমে ইকার ক্যাসিয়াস পঞ্চম বারের মত আইএফএফএইচএস সেরা গোলরক্ষক পুরস্কার জেতেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মত টানা পাঁচবার এই অ্যাওয়ার্ড জয়ী গোলরক্ষক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান।

২০০২ বিশ্বকাপে জাতীয় দলের হয়ে সেই বিশ্বকাপের সবচেয়ে কমবয়সী গোলরক্ষক হিসেবে খেলেন। এই টুর্নামেন্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো পেনাল্টি সেভ করলে সবাই তাকে ‘সেইন্ট ইকার’ উপাধি দেয়। কোয়ার্টারে দক্ষিন কোরিয়ার বিপক্ষে একটা অসাধারণ সেইভ ফিফার সর্বকালের সেরা ১০ সেভ এর তালিকায় জায়গা পেয়েছিল।

২০০৮ ইউরোতে ইকার অধিনায়ক হিসেবে ইউরো জিতেন। সেই ইউরোতে ইতালির বিপক্ষে দুটো পেনাল্টি দূর্দান্ত ভাবে সেভ করে দলকে জিততে সাহায্য করেন। এছাড়া তাঁর অধিনায়কত্বে স্পেন ২০১০ বিশ্বকাপ আর ২০১২ ইউরোও জেতে। বোঝা যায়, নেতৃত্বগুণেও অনন্য ছিলেন তিনি।

রিয়ালের হয়ে ১৬ বছর ও ৫১০ টি প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচের ক্যারিয়ার তাঁর। ২০২০ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোর হয়ে। রিয়ালে থাকার সময় ২০০৭ থেকে ২০১২ – টানা ছয় বছর উয়েফার বর্ষসেরা দলে ঠাই পেয়েছেন, জিতেছেন অসংখ্য ট্রফি – অর্জনের খাতাটা সব দিক থেকেই পরিপূর্ণ সাধু ইকারের। এখন একটু লাইমলাইটের আড়ালে থাকলেও ইতিহাসের পাতায় তিনি অমর হয়েই থাকবেন চিরকাল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...