সবাইকে চমকে দিতে বোধহয় ভালবাসেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি হয়ত চান সবাই তাঁর খেলা দেখুক মুগ্ধ হয়ে, সবাই তাঁর প্রশংসা করুক সব কাল অধ্যায় ভুলে। তিনি যেন চান প্রতিটা মুহূর্ত চর্চায় থাকতে। তাইতো এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তিনি লড়াই করে যাচ্ছেন ‘টক অব দ্য টাউন’ হবার।
তবে ইতোমধ্যেই তিনি চলে এসেছেন আলোচনায়। ভারতের কিংবদন্তি খেলোয়াড়েরা তাঁকে নিয়ে মেতেছেন আড্ডায়। এমনকি ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জয় করা সুনীল গাভাস্কার এবারের হার্দিকের মধ্যে রোহিত শর্মার ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। পাওয়াটাও স্বাভাবিক। তিনি ব্যাট হাতে যেমন ফর্মে রয়েছেন ঠিক তেমনি দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার নতুন দায়িত্বে তিনি অনবদ্য।
গুজরাট টাইটান্স নতুন দল। আর এই নতুন দলে অধিনায়কের দায়িত্বে একেবারেই নতুন হার্দিক পান্ডিয়া। তবে দেখে বোঝার যেন কোন উপায়ই নেই। কি বলিষ্ঠ দলনেতা তিনি! তাঁর নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত দল রয়েছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। অভিষেক মৌসুমে এমন সাফল্য নিশ্চয়ই গুজরাট টাইটান্স ফ্রাঞ্চাইজিও প্রত্যাশা করেনি। অন্যদিকে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ব্যাটটাও হাসছে তাঁর।
তিনি প্রায় তিনশর বেশি রান করে ফেলেছেন প্রায় ১৩৫ এর আশেপাশের স্ট্রাইকরেটে। নিজের ব্যাটিং পজিশনটা পরিবর্তন করে বেশ সুফল পাচ্ছেন তিনি তা বলাই যায়। অথচ নিলামে পর বেশ নড়বড়ে মনে হচ্ছিলো গুজরাট দলকে। ইংল্যান্ডের ওপেনার জৈব-সুরক্ষা বলয়ের কারণ দেখিয়ে নাম প্রত্যাহার করে খানিক দুলতে থাকা মনোবলকে আরও খানিকটা দূর্বল করে দেয়।
তবে সে দূর্বলতা কাটিয়ে পুরো দলকে এক সুঁতোয় বেঁধেছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর এমন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব নিয়ে গাভাস্কার বলেন, ‘আমি আসলে যা ২০১৩ সালে মৌসুমের মাঝ পথে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া রোহিত শর্মার একটা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি হার্দিক পান্ডিয়ার মধ্যে।’ আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ক রোহিত শর্মার সাথে তুলনা নিশ্চয়ই বেশ প্রফুল্ল করবে হার্দিক পান্ডিয়াকে।
সে আসরে বেশকিছু ভাল ক্যামিও ইনিংস খেলছিলেন রোহিত শর্মা। তারপর অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে রোহিত আরও সতর্কতা মেনেছেন রোহিত, আরও বেশি দায়িত্ববান হয়ে তিনি খেলেছেন তাঁর সবগুলো ইনিংস। ঠিক তেমনই এক প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন গাভাস্কার হার্দিকের মাঝে। গাভাস্কার বলেন, ‘ঠিক একই রকম ঘটনা দেখা যাচ্ছে হার্দিকের মাঝে। তাঁর শট নির্বাচনগুলো বেশ দূর্দান্ত। তাছাড়া সে দারুণ একজন ফিল্ডার, সেসময়ের রোহিতও ছিল। অতএব সার্বিকভাবে হার্দিক ভাল করছে বলেই গুজরাট ভাল খেলছে।’
শুধু যে হার্দিকের প্রশংসা কেবল গাভাস্কারই করেছেন তা নয়। সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফের মতে হার্দিককে স্লগার তকমা দেওয়াটা যথার্থ নয়। তিনি বলেন, ‘সে স্লগার নয়। তাঁর ভীতটা বেশ মজবুত, তাছাড়া তাঁর ব্যাটিং টেকনিকও বেশ সমৃদ্ধ। সে সমানতালে স্পিনারদের বিপক্ষেও খেলতে পারে। তাছাড়া সে বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি দু’টোতেই বেশ পটু। সে দূর্দান্ত কভার ড্রাইভ, পুল শট খেলতে পারে। এসব কিছুই একজন ভাল ব্যাটারের নমুনা।’
তাঁর ব্যাটিং নিয়ে প্রশংসায় ভাসছে পুরো ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গন। সাবেক ক্রিকেটার পিযুষ চাওলা বলেন, ‘সে যেভাবে ব্যাটিং করছে তা বেশ প্রশংসনীয়, তাছাড়া সে দায়িত্ব নিয়েই ব্যাটিং করছে। আগে সে পাঁচ-ছয় নম্বরের ব্যাটিং করত এখন সে তিন-চারে ব্যাটিং করে ভাল করছে। তাঁকে বেশ সলিড মনে হয়েছে। ভরকে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা নেই তাঁর মাঝে।’
এই যে হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং নিয়ে এত বন্দনা হওয়ার কারণও রয়েছে। একসময় নিন্দুক কিংবা সমালোচকরাও তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। অলরাউন্ডার হার্দিক ছাড়া আদৌ কি দলে সুযোগ পাবেন হার্দিক? সে প্রশ্নের জবাবটাই যেন দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি প্রমাণ করছেন একজন পুরোদস্তুর ব্যাটার হিসেবেও তিনি খেলতে পারেন জাতীয় দলে।