বিশ্বব্যাপী শান্তির নানাবিধ রূপ আর নানাবিধ সংজ্ঞা আছে! সেসব সংজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে বিধিবিধৌত যেটা সেটার ভিত্তিতে পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তি শহরগুলোর একটা কোপেনহেগেন, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন!
সেই কোপেনহেগেনের অন্তত আধা ঘণ্টায় নেমে আসে দুনিয়ার অন্ধকার। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ঢলে পড়ে যাওয়ার পর নব্বই সেকেন্ড লাগেনি মানুষের বুঝতে এই জল গড়াতে পারে কোথায় কোথায়!
অল্প সময়ের মধ্যে পুরো পৃথিবীর প্রার্থনা জড়ো হয় এই উপকূলীয় শহরে। উপকূল ঘেষে তৈরি হয় সুরক্ষা বলয়, স্ক্যান্ডিনেভিয় শীতল সমুদ্রে নোনাজল মেশে ঈশ্বরে, ঈশ্বর ভর করে সিমোন ক্যার আর অ্যান্থনি টেলরে, দূত হয়ে আসে মোর্টেন বোসেনের দল!
ক্রীড়ায় ঘৃণার চর্চায় আমিও দায়ী কোথাও না কোথাও, আজ না করি গত হয়ে যাওয়া কালে নানা বিভেদে পক্ষ নেয়ার দোষে দুষ্ট, আবার কালও পক্ষ নেবো না তা হলফ করে বলতে পারি না। কিন্তু এসব পক্ষ বিপক্ষ খেলায় আমরা এটা মনে রাখবো ফিনল্যান্ডের পতাকায় তৈরি হয় ইমার্জেন্সি মেডিকেল কক্ষ, সিমোন ক্যার হয়ে ওঠেন তাৎক্ষণিক চিকিৎসার গুরু।
এই ম্যাচ, একটা থ্রো-ইন থেকে বল রিসিভ করার সময় এরিকসেনের লুটিয়ে পড়া, লুটিয়ে পড়া শব্দটা ক্রীড়ায় আগে ব্যবহৃত হয়েছে নিশ্চিত কিন্তু এতো নিখুতভাবে ব্যবহার হয়েছে বোধহয় দুই কি একবার! আগের ঘটনার ফলাফল বিবেচনা করলে আপনার আমার মনে পড়বে ফিল হিউজের কথাই!
হিউজের চেহারা কল্পনাতেই কাল চলে গেছে প্রায় ৪৫ মিনিট, একের পর এক টুইট ফলো, ইউরো, ইউয়েফা, বিবিসি, স্কাই, বেইন স্পোর্টসের টুইটারে বারবার রিফ্রেশ! সব মিলিয়ে দুই লুটিয়ে পড়ার ফলাফলে কোন মিল না থাকায় স্বস্তির সুবাতাস বয়ে গেছে একুল-অকুল।
সাবরিনা জেনসেনের কান্না, তাকে জড়িয়ে ধরে স্মাইকেল, ক্যারের সান্তনা। সেন্ট পিটার্সবার্গে লুকাকুও দৌড়ে এলেন ক্যামেরায়, ভালোবাসা জানালেন ইন্টার মিলানের সতীর্থকে।
ঘটনা ঘটার সময়েই নিজের ছবি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেয়া রোনালদো সেটা মুছে ফেলেন, নতুন করে প্রার্থনা করলেন এরিকসেনের জন্য।
ফিনল্যান্ড ফুটবল ইতিহাস এই ম্যাচটা ভুলবে না। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের প্রথম বড় টুর্নামেন্টের ম্যাচ, প্রথম গোল, উদযাপন করতে গিয়েও নিজেকে থামালেন জোয়েল, উদযাপন এখানে মানাচ্ছে না, উদযাপন হবে সেদিন যেদিন আবার এরিকসেন ফিরবেন সুস্থ হয়ে, সেদিন ইউরোপজুড়ে গান হবে। বিশ্বজুড়ে হবে করতালি।