‘বাংলাদেশ মানসিকভাবে খুব কঠিন প্রতিপক্ষ’

বেতন নিয়ে বোর্ডের সাথে ঝামেলা হওয়াতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা। সেই সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিলেন এক ঝাক তরুণ ক্রিকেটার। দেশের মাটিতে সেই সিরিজে টেস্ট অভিষেক হয়েছিলো কেমার রোচের।

করোনা ইস্যুতে বাংলাদেশের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজ থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা। এবারও বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন টেস্ট স্কোয়াডের ৯ জন ও ওয়ানডে স্কোয়াডের ৪ জন ক্রিকেটার। তবে দলের সাথে এসেছেন অভিজ্ঞ পেসার কেমার রোচ।

এক যুগ আগের সিরিজে রোচ ছিলেন তরুণ গতিময় এক পেসার, আর এখন তিনি টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের বড় এক অস্ত্র। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও এক যুগ আগের সিরিজের সাথে মিল দেখছেন এই পেসার।

মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেটে একাডেমি মাঠে শুক্রবার অনুশীলনের পর রোচ বলেন, ‘তখন আমিও বেশ অনভিজ্ঞ ছিলাম। ছেলেরা তখন বেশ চাপে ছিল ভালো করার জন্য কিন্তু তারা পারেনি। আমাদের বেশিরভাগের জন্যই সেই সিরিজ বড় একটা শিক্ষা ছিল। আর এবার এটা আমাদের জন্য দ্বিতীয়বার একই পরিস্থিতি হয়েছে। গ্রুপ হিসেবে, দল হিসেবে আমাদের কি করতে হবে এর ভালো পারিকল্পনা করেছি আমরা। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ভালো আলাপ হচ্ছে, আজকে এবং গতকালকে তাদের দেখে ভালোই মনে হচ্ছে। আশা করছি ভালো প্রস্তুতি নিয়েই আমরা টেস্ট সিরিজ শুরু করব।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে ৮ টেস্টে ১৯.৭৮ গড়ে ৩৩ উইকেট নিয়েছেন কেমার রোচ। তবে বাংলাদেশের মাটিতে ৩ টেস্টে পেয়েছেন মাত্র ৪ উইকেট। তবে এবার বাংলাদেশের মাটিতে ভালো পরিকল্পনা করে সফল হতে আশাবাদী রোচ।

তিনি বলেন, ‘সবাই জানি বাংলাদেশ সবসময় পেসারদের জন্য কঠিন। যদি ভালো পরিকল্পনা করতে পারি, ভালো জায়গায় বল করতে পারি তা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। এসব ঠিকমতো করতে পারলে আমি মনে করি, আমরা সিরিজে ভালো করতে পারব। বাংলাদেশের বিপক্ষেই টেস্টে আমার শুরু হয়েছিল, অবশ্য সেটা ঘরের মাঠে ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশে আসা হয়েছে। ওয়ানডে ও টেস্ট খেলেছি এখানে। এটা সবসময় আমাকে বিশ্বাস জোগায় মানসিকভাবে। তাঁরা মানসিকভাবে খুব কঠিন প্রতিপক্ষ। দল হিসেবে তারা গড়ে উঠেছে।’

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬৪ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ইনিংস ও ১৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিলো ক্যারিবিয়ানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চার ইনিংসের ৪০ উইকেটের প্রতিটাই শিকার করেছিলেন স্পিনাররা। সিরিজে সাকিব আল হাসান ৯ উইকেট, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৫ উইকেট, নাইম হাসান ৬ উইকেট ও তাইজুল ইসলাম শিকার করেছিলেন ১০ উইকেট।

এবারও বাংলাদেশের টেস্ট স্কোয়াডে রয়েছে এই চার স্পিনারই। বাংলাদেশ এবারও স্পিন ট্র্যাক বানাবে এটাও জানা আছে রোচের। রোচ তাই মনে করেন মূল কাজটা করতে হবে তাঁদের স্পিনারদেরই। তারা যতটা সম্ভব সহায়তা দিয়ে যাবেন।

রোচ বলেন, ‘বোলিং ইউনিটের সাফল্যের জন্য দলীয় প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে। আর সেরকমটা হলে আমাদের বোলিং ইউনিট ভালোভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। আমরা ভালো পরিকল্পনা করছি, বোলিং কোচের সাথে কথা হচ্ছে, নিজেদের মধ্যেও আলাপ আলোচনা করছি। আমরা জানি, আমাদের কি করতে হবে।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনভিজ্ঞ দল নিয়ে আসলেও অভিজ্ঞতায় পূর্ণ বাংলাদেশ। তবে এগুলো নিয়ে না ভেবে রোচ মনোযোগ দিতে চান নিজেদের দিকেই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে মাঠে থাকতে চান আক্রমণাত্মক।

এই পেসার বলেন, ‘তামিম ইকবাল তাদের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের একজন। সাকিব আল হাসান ফিরেছে। মুশফিকুর রহিম আছে, তাদের অধিনায়ক মুমিনুল হকও ভালো ব্যাটসম্যান। বেশ কিছু ভালো নাম আছে তাদের। তবে আমরা আসলে নিজেদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরতে হলে মাঠে আক্রমণাত্মক থাকতে হবে।’

ঢাকা এবং চট্টগ্রামে স্পিন ট্র্যাকে কি রকম সংগ্রাম করতে হবে তা ভালো করেই জানা আছে রোচের। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ভালো একটি পরিকল্পনা এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নে পাল্টাতে পারে পরিস্থিতি।

তিনি বলেন, ‘পিচে খুব একটা বাউন্স থাকবে না। মাঠে পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক করতে হবে এবং সেটার প্রয়োগও। বোলিংয়ে ক্ষেত্রে গতির সংমিশ্রণ করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভালো জায়গায় টানা বল করে যেতে হবে যতটা সম্ভব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link