ছক্কা হাঁকানোটা তাঁর কাছে দুনিয়ার সহজতম কাজ। সেই সুবাদেই কিনা সিঙ্গাপুর থেকে সোজা ঢুকে গেছেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে। এবারে আইপিএলেও নিজের সামর্থ্যের জানান দিচ্ছেন টিম ডেভিড।
আইপিএল কিংবা অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলার আগেই ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে রীতিমতো বৈশ্বিক তারকা হয়ে উঠেছিলেন টিম ডেভিড। বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর নিয়মিত মুখ ছিলেন এই তারকা। সিপিএল, পিএসএল কিংবা বিগ ব্যাশ যেখানেই খেলেছেন, নিজের ছক্কার জাদুতে মুগ্ধ করেছেন এই বিগ হিটার।
অথচ ক্যারিয়ারের শুরুটা এত মসৃণ ছিল না এই তারকার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে একপ্রকার সুযোগ না পেয়ে নাম লেখান সিঙ্গাপু্রের হয়ে। এমনকি তাঁর বাবাও নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন।
সিঙ্গাপুরের হয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতেই আলো ছড়ান এই তারকা। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ারের ফাইনালে খেলেন ম্যাচ জেতানো এক ইনিংস। দলটির হয়ে ১২ ম্যাচে প্রায় দেড়শো স্ট্রাইকরেট আর ৩৭ গড়ে সংগ্রহ করেন ৪০৮ রান।
তবে টিম ডেভিডের পরিচিতি মূলত ফ্যাঞ্চাইজি তারকা হিসেবে। অনায়াসে বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে পটু এই তারকা। ইনিংসের শেষদিকে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলে জয় এনে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ছয় ফুট দুই ইঞ্চির দীর্ঘদেহী এই তারকার ক্রিকেটে আসাই যেন ছক্কা হাঁকানোর জন্য।
ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তাঁর উত্থানের সুবাদেই কিনা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। হেলায় হারানো প্রতিভার প্রতি অবিচার বুঝতে পেরে তোড়জোড় শুরু করে দলে ফেরাতে। ডেভিডও নিজের ক্যারিয়ারকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সিঙ্গাপুর ছেড়ে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে। এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাঠে নামেন এই তারকা।
আইপিএলে নিজের প্রথম দল রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি ডেভিড। সেবারে মাত্র এক ম্যাচে মাঠে নেমেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। তবে ২০২২ আইপিএল নিলামের আগে মূলত তাঁকে নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়।
নিলামের টেবিলেও দেখা গিয়েছিল তার প্রতিফলন, দলগুলো রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেছিল ডেভিডকে দলে ভেড়াতে। শেষপর্যন্ত ৮.২৫ কোটি রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
মুম্বাইতে নিজের প্রথম মৌসুমে নিজের নামের প্রতি মোটেই সুবিচার করতে পারেননি এই তারকা। কয়েকটি ম্যাচে হয়তো ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে মুম্বাই ভরসা হারায়নি তাঁর উপর থেকে। বরং কাইরন পোলার্ডের অবসরের পর ফিনিশারের দায়িত্বটা তুলে দেয় তাঁর কাঁধেই।
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে কি দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেই না দলকে জিতিয়ে ফিরলেন এই তারকা। তিনি যখন ক্রিজে আসেন, তখনো জিততে মুম্বাইয়ের প্রয়োজন ২৬ বলে ৬২ রান। জয়টা তখনো বহু দূরের পথই মনে হচ্ছিল, কিন্তু ক্রিজে এসেই মারকুটে ব্যাটিং শুরু করেন এই অজি তারকা।
শেষ ওভারে ১৭ রান দরকার হলেও জেসন হোল্ডারের প্রথম তিনটি বলই গ্যালারীতে পাঠিয়ে দিয়ে লিখে ফেলেন ম্যাচের চিত্রনাট্য। শেষপর্যন্ত দুই চার এবং পাঁচ ছক্কায় ১৪ বলে অপরাজিত ছিলেন ৪৫ রানে।
কাইরন পোলার্ডের রেখে যাওয়া জায়গাতে এখনো পর্যন্ত ভালোই খেলছেন এই তারকা। তবে দেখার বিষয় ফর্মটা তিনি কতদিন ধরে রাখতে পারেন।