সময়টা ভাল যাচ্ছে না একসময়ের পরাক্রমশালী দল দক্ষিণ আফ্রিকার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতেও সিরিজ হেরে গিয়েছে তারা। এছাড়া মাঠের বাইরের বিভিন্ন ইস্যুতেও বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দল এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। এসব কিছুর মাঝেই এবার কোচ মার্ক বাউচার জানিয়েছেন সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে নিজের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিবেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান কোচ মার্ক বাউচার। প্রায় তিন বছর কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলের সাথে ছিলেন তিনি। আর এই সময়ে বাউচার এবং তাঁর দলের সঙ্গে ঘটেছে নাটকীয় অনেক কিছু; এক নজরে সেসব দেখে নেয়া যাক।
- ডিসেম্বর ২০১৯ (অভিষেক)
মার্ক বাউচার আসলে কোচিং প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন অপ্রত্যাশিতভাবেই। ২০১৯ সালে গ্রায়েম স্মিথ ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার (সিএসএ) ডিরেক্টর হওয়ার পর সাবেক এই ক্রিকেটারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেসময় আরো অনেক সংস্কার হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট পাড়ায়। শেষপর্যন্ত অবশ্য গ্রায়েম স্মিথ অনেকটাই গুছিয়ে তোলেন সবকিছু।
বক্সিং ডে টেস্ট দিয়ে কোচ হিসেবে মার্ক বাউচারের অভিষেক হয়। সে ম্যাচ জিতে দারুণভাবেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বাউচার। কিন্তু পরের তিন ম্যাচ হেরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপরে ঘরের মাঠেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে বসে তারা। তবে ওয়ানডে সিরিজে অজিদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে ভুল করেনি প্রোটিয়ারা।
- ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ (পরিস্থিতির পরিবর্তন)
দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস হঠাৎ করেই সাদা বলের অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় কুইন্টন ডি কককে। ঘরের মাঠে ডি ককের দল শ্রীলঙ্কাকে ২-০ তে সিরিজ হারালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে রীতিমতো লজ্জাজনক পারফর্ম করে তারা। তিন ফরম্যাটেই সিরিজ হেরে বসে প্রোটিয়ারা।
এরপর টেস্ট ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকেও দূরে সরে যান ফাফ ডু প্লেসিস। তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে ডিন এলগারকে টেস্টে এবং রঙ্গিন পোশাকে নিয়মিত অধিনায়ক করা হয় টেম্বা বাভুমাকে।
- ২০২০ এর শেষ থেকে ২০২১ এর শুরু (বর্ণবাদ)
২০২০ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে হাঁটু গেঁড়ে প্রতিবাদ জানাতে অসম্মতি জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পরবর্তীতে মার্ক বাউচার সেটির কারণ ব্যাখ্যা করলেও সন্তুষ্ট হয়নি ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা। অনেক আলোচনা – সমালোচনার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হাঁটু গেঁড়ে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য বোর্ড থেকে ক্রিকেটারদের নির্দেশ দেয়া হয়।
- জুলাই ২০২১ (ভরাডুবি এবং নতুন নাটকীয়তা)
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টেস্ট র্যাংকিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অবস্থান সেসময় ছিল সপ্তম স্থানে। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেয় ডিন এলগারের দল। কিন্তু ওয়ানডেতে আবার আয়ারল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে হতাশা উপহার দেয় দর্শকদের।
একইসাথে স্বয়ং মার্ক বাউচারের উপর বর্ণবাদের অভিযোগ নেমে আসে। স্পিনার পল অ্যাডামসের চামড়ার রং নিয়ে কটাক্ষের ব্যাপারে শুনানিও হয়েছিল বাউচারের বিরুদ্ধে। শেষপর্যন্ত উকিলের মাধ্যমে ক্ষমা চান দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
- জানুয়ারি ২০২২ থেকে মে ২০২২ (ব্যর্থতা এবং সাফল্য)
আরব আমিরাতে দুর্দান্ত এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন সমাপ্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা, তবে নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সেমিফাইনালে জায়গা পায়নি তারা। এরপর ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজও জিতে নেয় প্রোটিয়ারা, একইসাথে ওয়ানডেতে এশিয়ান জায়ান্টদের হোয়াইট ওয়াশ করে দলটি।
কিন্তু এত সাফল্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় মার্ক বাউচারের শিষ্যরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র তিনদিনে টেস্ট হেরে যায় তারা, এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের মাঠেই ওয়ানডে সিরিজে পরাজয় মেনে নিতে হয় রাবাদাদের। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে শীর্ষস্থান দখলে রাখে ডিন এলগারের দল।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে অসহায় আত্মসমর্পণের পরেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন মার্ক বাউচার। সাফল্য, ব্যর্থতা আর বিতর্কের মাঝ দিয়েই শেষ হতে যাচ্ছে তাঁর তিন বছরের কোচিং অধ্যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরে আবার নতুন কোচ খুঁজে নিতে হবে প্রোটিয়াদের। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত বাউচারের অধীনে সেরাটা প্রত্যাশা করছে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটপ্রেমীরা।