কম বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে, অল্প সময়ে ক্রিকেটের ইতি টানতে হয়েছে অনেক ক্রিকেটারকে। বিশেষ করে অনেক পেস বোলারের ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি ইনজুরির কারণে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরিপক্ব হওয়ার আগেই ইনজুরির সাথে লড়াই করতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছেন এমন অনেকেই আছেন।
অস্ট্রেলিয়ার জন হেস্টিংস তাদের একজন। ফুসফুসের ইনজুরির কারণে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে অবসর নিতে হয়েছিল। হেস্টিংসের মত আরও অনেক পেস বোলার ছিলেন যারা, অল্প বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলেন এবং ক্যারিয়ারে জুড়েই ইনজুরির সাথে লড়াই করতে করতে হারিয়ে গিয়েছেন।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) কাছে একজন পেস বোলারের শরীর পরিপক্ক হয় পঁচিশে, কিন্তু তার অনেক আগেই অনেকেই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন। হেস্টিংসও তাদের একজন, মাত্র ২৪ বছর বয়সে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। অভিষেকের আগেও তিনি বড়সড় ইনজুরিতে ভুগেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এমন আরও অনেক পেস বোলার ছিলেন যাদের ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি ইনজুরির কারণে, আবার কেউ ইনজুরির সাথে লড়াই করে ফিরে এসেছেন ক্রিকেটে। তারা অনেকে এখনও খেলে যাচ্ছেন। আজ তাদের গল্প পড়ে আসা যাক!
- ব্রুস রিড
মাত্র ২২ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হয় রিডের। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র ২৭ টেস্ট আর ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয়েছিল তার। মোটে ২৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইতি ঘটে তার। তাঁর ক্যারিয়ার দীর্ঘ না হওয়ার মূলে ছিল ইনজুরি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে পরিনত করার আগে তাকে থামতে হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া অবশ্য চেষ্টার কোনো কমতি করেনি। ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি লম্বা রিড, আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ার পেস বোলিংয়ের পতাকাবাহী ছিলেন রিড। রিডের ২৪.৬৩ গড়ের বোলিং সেটাই প্রমাণ করে। তবে, ইনজুরির বিষে নীল হয়ে ধারাবাহিকতা রাখতে পারেননি তিনি।
- জো অ্যাঞ্জেল
আঞ্জেল ছিলেন ছয় ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতা আরেক অজি পেসার। ক্যারিয়ারের শুরুতেই তাঁকে বিপজ্জনক বোলার ধরা হত, বিশেষত ঘরের বাউন্সি উইকেট কাজে লাগাতে জানতেন তিনি। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে না পারায় দল থেকে বাদ পরেছিলেন, আবার ইনজুরি তার দলে ফিরে আসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।
ইনজুরির পরম্পরায় বলে গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। মাত্র চার টেস্ট আর তিন ওয়ানডেতে সীমাবদ্ধ হয়েছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। শেফিল্ড শিল্ড/পুরা কাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়েছিলেন।
- ডেমিয়েন ফ্লেমিং
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ভাষ্যমতে অপরিণত বয়সে অভিষেক হয়েছিল ফ্লেমিংয়ের। মাত্র ২৪ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকে হ্যাটট্রিক দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রত্যাবর্তন। অভিষেকে যে প্রত্যাশার আলো জ্বালিয়ে ছিলেন যদিও ইনজুরির কারণে তা পূর্ণ করতে পারেন। তবে, তার ছোট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন।
- নাথান ব্র্যাকেন
টেস্ট অভিষেকের আগেও ইনজুরিতে পরেছিলেন নাথান ব্র্যাকেন। ২০০১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন, সে সময় কাঁধের ইনজুরির কারণে সিরিজের মাঝপথেই দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল তাঁকে। একটা সময় অজি ওয়ানডে দলে নিয়মিত ছিলেন, কিন্তু তখন হাঁটুর অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল।
- শন টেইট
ক্রিকেট বিশ্বে শন টেইট ছিলেন অন্যতম দ্রুততম বোলার। ২০১০ সালে টেইট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১৬১.১ কিলোমিটারে গতিতে বল করেছিলেন। যা তখন পর্যন্ত দ্বিতীয় দ্রুততম বল হিসেবে রেকর্ড করেছিলেন। তবে গতির সন্ধানে সাহসিকতা, কাঁধের উপরের চাপটা টেইটের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পেলে ছিল।
ফলে মাত্র তিনটি টেস্ট খেলে মাত্র ২৫ বছর বয়সে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এজন্য তার পিছু ধরা ইনজুরিই দায়ী। পরে আরও ইনজুরির কারণে, তিনি মাত্র ২৮ বছর বয়সে ওয়ানডে থেকে অবসর নেন এবং তার ক্যারিয়ারের বাকি সময়টায় তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মনোনিবেশ করেন।
- মিশেল স্টার্ক
মাত্র ২৭ বছর বয়সে, মিশেল স্টার্কের অভিষেক। ভারতের মত দলের বিপক্ষে ছিলেন অবসরে, যাতে অ্যাশেজে শতভাগ দিতে পারেন। বোর্ড তাঁর ইনজুরির ব্যাপারে সতর্ক ছিল। তবে, ডান পায়ের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল ইনজুরি, বাঁ-পাও বাদ ছিল না। সাথে ছিল স্ট্রেস ফ্র্যাকচার।
২০১৫-১৬ সালে তিনি ডান পায়ের গোড়ালিতে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করান, এর জন্য তাঁকে দীর্ঘ ছয় মাস দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল। ইনজুরির সাথে লড়াই করে জিততে পারেননি কখনও। ফলে বেশিরভাগ সময়ই মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে। তবে, একটা কথা ঠিক যে – তিনি সময়ে অন্যতম সেরা পেসারদের একজন।
- জেমস প্যাটিনসন
২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভক্তদের আশাবাদী হওয়ার কারণ ছিল,প্যাট কামিন্স এবং জেমস প্যাটিনসন দু’জনেরই অভিষেক হয়েছিল – মনে হচ্ছিল তাঁরা ভয়ংকর এক পেস জুটিতে পরিণত হবেন শিগগিরই।
তবে প্যাটিনসন খুব অল্প বয়সেই গুরুতর ইনজুরিতে পড়েন। তার ছোট ক্যারিয়ারে, প্রায় ৩৮ মাস ইনজুরিতে অতিবাহিত করেছেন। দীর্ঘস্থায়ী পিঠের সমস্যাগুলির পুনরাবৃত্তি কারণে তিনি ২০১৭-১৮ অ্যাশেজ থেকে বাদ পড়েছিলেন। ইনজুরির সাথে লড়াই তিনি ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট দিয়ে তিনি আবারও মাঠে ফেরেন। প্যাটিনসন এখনও খেলে যাচ্ছেন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছেন গেল বছর জুন মাসে।
- প্যাট কামিন্স
২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্যাট কামিন্সের টেস্ট অভিষেক যিনি দেখেছেন, তিনি আশাও করেননি যে আগামী সাত বছরে, তিনি কেবল ১৪ টি টেস্ট খেলতে পারবেন। কামিন্সের গতি ছিল এবং অল্প বয়সে বল স্যুইং করার ক্ষমতা ছিল, তবে তাঁর পা এবং পিঠে ইনজুরির কারণে তাকে দীর্ঘ একটা সময় দলের বাইরে থাকতে হয়েছিল এবং অভিষেকের ছয় বছর পর তিনি দ্বিতীয় টেস্ট খেলেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া,যথাযতভাবেই, প্রথম দিকে ইনজুরি থেকে কামিন্সকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরিয়ে আনতে অনেক সতর্ক ছিল, ২০১৭ সালে ভারত সফর আগ পর্যন্ত তাকে সীমিত ওভারের খেলাগুলির জন্য বিবেচনা করেছিল সিএ। সেই সফর থেকেই কামিন্সের পিঠে আরও একটি ইনজুরি হয়েছিল, যার ফলে তিনি ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাদ পড়েন।
- জন হেস্টিংস
২৪ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে দুরন্ত এই ফাস্ট বোলারের। পাশাপাশি তার ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে রান করে দলে অবদান রাখার সামর্থ্য ছিল। ক্যারিয়ারের অগ্রগতির সাথে সাথে অনেক গুলো ইনজুরিতে পড়েন। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি, দুই ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেকের পরে কাঁধের গুরুতর ইনজুরির কারণে তিনি ২০১১-১২ মৌসুমের পুরোটা সময় দলে বাইরে ছিলেন, তারপরে তিনি কাউন্টি সার্কিটে ডারহাম ও ওরচেস্টারশায়ারের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
২০১৬ সালটা তার ক্যারিয়ারের সোনালি বছর ছিল, যখন ১৫ টি ওয়ানডেতে তার ২৯ উইকেট তাঁকে বছরের পেস বোলারদের মধ্যে শীর্ষ উইকেট শিকারী করে তুলেছিল। ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে পিঠের চোটের ফলে প্রথম শ্রেণির এবং লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট উভয়ই থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মন দেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। ২০১৮ সালে, একটি রহস্যজনক ফুসফুসের জটিলতার কারণে সব ধরণের থেকে ক্রিকেট থেকে তাকে অবসর নিতে হয়েছিল।