রিয়াল মাদ্রিদ, নামটি যেন আলাদা জায়গা করে রেখেছে সকল ফুটবল প্রেমীর হৃদয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। এই ক্লাবের ইতিহাসের জুড়ি নেই। বিশ্বের সবথেকে বেশি সংখ্যক ইউরোপিয়ান ট্রফি রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের দখলে। তারা ১৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জিতেছেন যা তাদের এই প্রতিযোগিতায় বাকি সবার থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে রেখেছে।
বিশ্বের এই অন্যতম সেরা ক্লাবে খেলেছেন ইতিহাসের বড় বড় তারকারা। এইসকল বড় তারকার মধ্যে অনেকেই বনে গেছেন মাদ্রিদের কিংবদন্তি হিসেবে। সেই সকল কিংবদন্তিদের মধ্যে অন্যতম সেরা কিংবদন্তির তালিকা তৈরি করা প্রায়ই অসম্ভব।
- আলফ্রেডো ডি স্টেফানো (আর্জেন্টিনা)
বুয়েন্স আইরেসের এই ব্যক্তি মাদ্রিদকে ‘রিয়াল’ বানিয়েছিলেন। ‘দ্য গোল্ডেন অ্যারো’ নামে খ্যাত সেই ফুটবলার ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা।
আলফ্রেডো ডি স্টেফানো ছিলেন এক পূর্ণাঙ্গ ফুটবলার। তার শক্তি, দক্ষতা এবং অসাধারণ সহনশীলতা সেই সময়ে ছিল খুবই বিরল। তার দৃষ্টি শক্তি ছিল অবিশ্বাস্য। তার গতিময় দৌড় যেন চমকে দিত দর্শকদের। তিনি ১১টি মৌসুমে প্রায় ৪০০ ম্যাচে ৩০০-এরও বেশি গোল করেছিলেন। প্রথম পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের প্রত্যেকটিতেই তিনি গোল করেছিলেন।
আটটি লিগ শিরোপা এবং পাঁচটি ইউরোপিয়ান শিরোপা জিতেছিলেন সুপারস্টার ডি স্টেফানো। ৫০-এর দশকে শুধু তার কারণেই অন্য তারকারা স্পেনের রাজধানীতে ছুটে এসেছিলেন।
- ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (পর্তুগাল)
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তার শারীরিক শক্তি, গতি, নিখুঁত বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অতুলনীয়। গোল করার ক্ষেত্রে তিনি সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন।
এই পর্তুগিজ রিয়ালের হয়ে ৪৫০ গোল করেছেন। রিয়ালে কাটানো প্রতিটি মৌসুমেই তিনি ৩০-এর বেশি গোল করেছিলেন। এমনকি দুই মৌসুমে তিনি ৬০-এরও বেশি গোল করেছেন। তিনি যেন একটি গোল-মেশিন। দলের পারফরম্যান্স ভালো হোক বা খারাপ, রোনালদো একাই এই দলকে জয়ের পথে নিয়ে যেতে পারতেন।
শারীরিক দক্ষতার বাইরে, রোনালদোর মানসিক শক্তি ছিল সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে দৃঢ়। আট বছরে ১৫ টি শিরোপা এবং অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত যেমন– বাইসাইকেল কিক, এল ক্লাসিকোতে গোল, অসম্ভব ফিনিশিং, হ্যাটট্রিক, এবং জাদুকরী পারফরম্যান্স রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। তিনি নিজেকে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অনেকের মতে, তিনি ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সেরা।
- রাউল (স্পেন)
রাউল ছিলেন মাদ্রিদের জন্য এক অতুলনীয় শক্তির নাম। রাউলের মাঝে স্বভাবজাত প্রতিভার ঘাটতি ছিল। তবে তার অপরিসীম আত্মবিশ্বাসের বদৌলতে তিনি নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছিলেন।
তিনি রিয়াল মাদ্রিদের জন্য হয়ে উঠেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এক অস্ত্র। লিগে রিয়াল মাদ্রিদ দুর্বল থাকলেও তিনি গোল করে সাহায্য করে গেছেন তাদেরকে। মাদ্রিদে তার সময়কালে তিনি ছয়টি লিগ শিরোপা এবং তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন। ডেভিড বেকহ্যাম এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো তারকারা ক্লাবে এসেও তার কাছ থেকে সাত নম্বর জার্সি ছিনিয়ে নিতে পারেনি কেউই। রাউল সবসময়ই মাদ্রিদের রাজা ছিলেন।
- জিনেদিন জিদান (ফ্রান্স)
জিনেদিন জিদান টানা আট বছর ধরে বিশ্বের সবথেকে দামী খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে রবার্তো কার্লোসের ক্রসটিকে থেকে যেভাবে তিনি অসাধারণ এক ভলিতে জালে জড়িয়েছিলেন তাতে প্রতিটি পয়সাই সার্থক হয়ে উঠেছিল বলে মনে করেন সমর্থকরা।
জিদান ছিলেন গ্যালাকটিকো যুগের প্রতীক। তিনি একজন খেলার জাদুকর, যার খেলায় ছিল কোমলতা ও সৌন্দর্য। দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠতেন ভয়ংকর শক্তি নিয়ে। ২০০০-এর দশকে বেড়ে ওঠা ফুটবল ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তি।
পরবর্তীতে তিনি মাদ্রিদকে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতিয়েছিলেন কোচ হিসেবে ফিরে এসে। যা তাকে মাদ্রিদের কিংবদন্তি হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টিকে আরো জোরালো করেছে।
- ফেরেঙ্ক পুসকাস (হাঙ্গেরি)
‘দ্য গ্যালোপিং মেজর’ নামে খ্যাত ফেরেঙ্ক পুসকাস স্পেনে আসার আগেই একটি অসাধারণ ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন। বুদাপেস্ট হোনভেদের হয়ে ৩৫০ ম্যাচে ৩৫৮ গোল করেছিলেন তিনি।
রিয়াল মাদ্রিদে এসে পুসকাস নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলেছিলেন। তার ফার্স্ট টাচ, ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা এবং অবিশ্বাস্য সেট-পিস দক্ষতা ছিল। নতুন তারকাখচিত সতীর্থদের সঙ্গে তিনি গোল করানোর দায়িত্বও হাসিমুখে গ্রহণ করেছিলেন। রিয়ালের হয়ে তিনি তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন এবং একটি ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তার প্রথম মৌসুমেই তিনি চারটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন, যা তাকে ক্লাবের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।