সুপার লিগে বাংলাদেশের ‘সুপারম্যান’ যারা

বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শেষ হয়েছে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ। সুখকর ব্যাপার হচ্ছে, তিন বছর ধরে চলা এ সুপার লিগে তৃতীয় অবস্থানে থেকে শেষ করেছে বাংলাদেশ। এ যাত্রায় তাঁরা পিছনে ফেলেছে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোকে।

২০২০ সালে চালু হওয়া এই আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগকে মূলত ২০২৩ বিশ্বকাপের মূল বাছাইপর্ব হিসেবেই ধরা হয়। যেখানে স্বাগতিক দেশসহ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ৮ দল বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে। এরই মধ্যে সেই ৮ টি দল নির্ধারিতও হয়ে গিয়েছে।  ২৪ ম্যাচে ১৬ জয়ে মোট ১৭৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার লিগ শেষ করেছে নিউজিল্যান্ড।

১৫ জয়ে ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ১৫ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্টও অবশ্য ইংল্যান্ডের সমান। তবে রান রেটে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকায় তাদের অবস্থান দুইয়ে, আর বাংলাদেশের স্থান তিনে।

ওয়ানডে সুপার লিগে শুধু দলগত অর্জন নয়, ব্যক্তিগত অর্জনেও আধিপত্য দেখিয়েছে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা।অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৩৪.০৪ গড়ে এই সুপার লিগে ৭৮৩ রান করেছেন। যা ওয়ানডে সুপার লিগের সপ্তম সর্বোচ্চ।

আর ৪৪.৪১ গড়ে ৭৫৫ রান করা মুশফিক রয়েছেন দশে। এর বাইরে ২৩ ম্যাচে ২৮.৪৭ গড়ে ৬৫৫ রান করেছেন লিটন দাস। ৩৬.৪১ গড়ে ৬১৯ রান করেছেন সাকিব, ৪০.২১ গড়ে ৫৬৩ রান রিয়াদের, ৩৮.৬০ গড়ে ৩৮৬ রান করেছেন আফিফ আর ৩৮.৩৩ গড়ে নিজের নামের পাশে ৩৪৫ রান যোগ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

অন্যদিকে বোলারদের মধ্যে ২০ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী সাকিব আল হাসান। যা আবার ওয়ানডে সুপার লিগের ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ। আর ২৩ ম্যাচে ৩০ উইকেট নিয়ে ৯ নম্বরে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এর বাইরে ২০ ম্যাচে ২৭ টি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর ১৮ ম্যাচে তাসকিন নিয়েছেন ২৬ টি উইকেট। ওয়ানডে সুপার লিগে ৬ টি ম্যাচ খেলা হাসান মাহমুদের উইকেটসংখ্যা ১০ টি।

এবার আসা যাক, ম্যাচসেরায়। এখানে সবার চেয়ে এগিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের মধ্যে সুপার লিগে সর্বোচ্চ ৪ বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠেছে তাঁর হাতে । যেটার শুরু হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে।

সে ম্যাচে খাদের কিনারায় থাকা বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছিলেন আফিফ আর মিরাজ। তাদের জুটিতেই প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতে ফিরেছিল বাংলাদেশ। ৮১ রান করে অপরাজিত থাকা মিরাজকেই সে দিন ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই ৩ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলেন মিরাজ। তবে ক্যারিয়ারের সেরা সিরিজটি বোধহয় কাটিয়েছিলেন গত বছরের শেষ দিকে, ভারতের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। ঐ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আর দুটি ম্যাচেই ম্যাচসেরা হন মিরাজ।

সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতে বলতে গেলে তাঁর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের উপরে ভর করেই জিতেছিল বাংলাদেশ। ৩৮ রান করে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। তবে ম্যাচ পরিস্থিতিতে ঐ ৩৮ রানের গুরুত্ব ছাপিয়ে গিয়েছিল সবার অবদানকে।

ভারতের বিপক্ষে এর পরের ম্যাচটা ছিল একরকম মিরাজময়ই। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারপর বল হাতে নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। এমন ম্যাচজয়ী অলরাউন্ডিং নৈপুণ্যের পর অনুমিতভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার গিয়েছিল মিরাজের হাতে।

মিরাজের পর ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুইবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সাকিব। এর একটি পেয়েছিলেন গত বছর সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ম্যাচে ৭৭ রানের ইনিংস খেলার জন্য। আর পরেরটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের আগে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ইংল্যান্ড।

৩ ম্যাচের সে ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হারলেও শেষটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের ঐ জেতা ম্যাচে ব্যাট হাতে ৭৫ এবং বল হাতে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। দ্বিধাহীনভাবেই ম্যাচসেরার সে পুরস্কারটা গিয়েছিল সাকিবের হাতে।

মিরাজ, সাকিবের পর ওয়ানডে সুপার লিগে একটি করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোট ১০ জন ক্রিকেটার। সেই তালিকায় আছেন লিটন দাস (আফগানিস্তান, ১৩৬ রান), তাসকিন আহমেদ (দক্ষিণ আফ্রিকা, ৫ উইকেট) , নাসুম আহমেদ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৩ উইকেট) , তাইজুল ইসলাম (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৫ উইকেট) , আফিফ হোসেন (জিম্বাবুয়ে ৮৫ রান), তাওহীদ হৃদয় ( আয়ারল্যান্ড, ৯২ রান) হাসান মাহমুদ (আয়ারল্যান্ড ৫ উইকেট), নাজমুল হোসেন শান্ত (আয়ারল্যান্ড, ১১৭ রান) আর মুস্তাফিজুর রহমান (আয়ারল্যান্ড, ৪ উইকেট)।

বুঝাই যাচ্ছে, এই সুপার লিগে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার দিকেই চোখ ছিল দলের সবার। নিজেদের উন্নতি, প্রমাণ করার এমন ক্ষুধা থাকলেই দলের চেহারা পাল্টে যায়। এখন দেখার পালা, ওয়ানডে সুপার লিগের এই সুখকর স্মৃতি দলের ক্রিকেটাররা ঠিক কতটা টেনে নিয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপে।

 

 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link