শেষ দুই বলে দুই ছক্কা। প্রথমটা লং অন দিয়ে। পরের টা ডিপ স্কোয়ার লেগ পেরিয়ে গ্যালারিতে পেয়েছে ঠাঁই। তবুও তাওহীদ হৃদয় হতাশ বদনেই বেড়িয়ে গেলেন সাগরিকার সবুজ ঘাস মাড়িয়ে। তিনি যেন বুঝে গেলেন, পরিসংখ্যানের সেই শুভংকরের ফাঁকি পেরিয়ে, কেউ তার এই ইনিংসটি মনে রাখবে না। সে দায় যে তার নিজের।
হ্যা, মনে রাখার মতই এক ইনিংস তিনি খেলেছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী, বিপর্যয় পেরিয়ে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন একেবারে শেষ অবধি। বাংলাদেশি ব্যাটারদের চাপের মুখে ভেঙে পড়ার গল্প তো রয়েছে অনেক। হৃদয়ের ক্যারিয়ারটা আর কতটুকুই বা লম্বা! তবুও সেই ‘স্টারবয়’ তকমার মানই রাখলেন তিনি।
আগের দিন শতক হাঁকিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এদিনও ব্যাট হাতে দারুণ গতিতেই এগিয়ে যেতে থাকেন। তবে ইনিংসের শুরুর দিকে দুই দফা আউট হতে গিয়েও হননি শান্ত। তাতে করে আরও একটি বড় ইনিংস তিনি খেলবেন, তেমনটিই ছিল প্রত্যাশিত। তবে প্রত্যাশা হয়নি পূরণ। ৪০ রানে শান্ত আউট হলেই বাইশ গজে হাজির হন হৃদয়।
তাওহীদ যখন ক্রিজে এলেন তখন স্রেফ প্রথম পাওয়ার প্লে শেষ হয়েছে। এরপর একেবারে ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে ছক্কা মেরেই তবে ক্ষান্ত হয়েছেন হৃদয়। না, মারকাটারি এক ইনিংস খেলে, বন্দর নগরীতে উচ্ছ্বাসের বন্যা বইয়ে তিনি দেননি। তিনি যা করেছেন তাকে বলা যেতে পারে ‘ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস’।
কেননা সৌম্য সরকারের সাথে ৫৫ রানের একটু দারুণ জুটির পর, দ্রুতই সৌম্য আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে হারান হৃদয়। তিন বলের ব্যবধানে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার প্যাভিলিয়নে। স্বাভাবিকভাবেই চাপ তখন হৃদয়ের ঘাড়ে। যদিও তখনও ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিম ছিলেন হৃদয়কে ভরসা জোগাতে।
তবুও ম্যাচের বয়স যখন স্রেফ ২২ ওভার তখনই সাজঘরে চারজন ব্যাটার। ২১ বলে ১৭ রান নিয়ে তখনও হৃদয় একটু ইতস্তত। তার উপর অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। এসবকিছুকে একপাশে রেখে, হৃদয় মনোযোগ দিলেন নিজের ইনিংস বড় করবার দিকে।
মুশফিকের উপর ইনিংস বিল্ডআপের দায়িত্ব দিয়ে রয়েসয়ে খেলতে থাকেন হৃদয়। একেবারে নিজের ঘরনার বাইরে গিয়ে ব্যাটিং করেছেন তিনি। অপেক্ষা করেছেন। যতটা সম্ভব দলের ব্যাটিং ইনিংসের গভীরে নিজেকে নিয়ে যেতে চেয়েছেন। সফলও হয়েছেন। একটা প্রান্তে অটল থেকেছেন। অন্যপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিল চলেছে অসম বেগে।
তবুও হৃদয় এদিন পুরো চেষ্টাই করেছেন শেষ অবধি টিকে থাকার। তাতে করে যতটুকু রান যুক্ত হয় বোর্ডে তাই তো লাভ। শেষ অবধি তিনি অপরাজিতই থেকেছেন। তবে আফসোস সঙ্গী হয়েছে তার। নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আফসোস। ৯৬ রানে যে অপরাজিত থাকতে হয়েছে তাকে।
তবে সে দায়টা নিজের উপরই দিতে চাইবেন হৃদয়। কেননা তিনি সোজা ব্যাটেই দারুণ খেলেন। ইনিংসের শেষ তিন বল যখন বাকি, তখন হৃদয়ের সেঞ্চুরি হতে প্রয়োজন ১৬ রান। পঞ্চাশতম ওভারের চতুর্থ বলটিতে স্কুপ করতে যান হৃদয়। সেই বলটি ব্যাটে লাগেনি। কেননা সচারচর তো তিনি তেমন আন-অর্থোডক্স শট খেলেন না।
অথচ অফ সাইডের সেই লেন্থ বলটিতে চাইলেই হৃদয়, লং অন, মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে পারতেন। সেই আফসোসে পরবর্তী দুইবলই তিনি করেছেন সীমানা ছাড়া। তবুও আক্ষেপের সেই চার রানে পুড়েছেন তিনি।
৮০ বল অবধি কোন ছক্কা হাঁকাননি হৃদয়। এরপর হাঁকিয়েছেন পাঁচটি ছক্কা। অর্ধশতক পর্যন্ত মেরেছেন মাত্র দুই চার, গোটা ইনিংসে বাউন্ডারি ৩টি। বাড়তি কোন ঝুঁকি নিয়ে দলকে ফেলতে চাননি তিনি বিপদে। দলকে ২৮৬ রানের যথেষ্ট পুঁজি এনে দেন লড়াই করবার। একেবারেই নিজের বিপরীত ধাঁচের ইনিংস খেলেছেন তিনি। তবুও দিনশেষে ছোঁয়া হয় না তার সেই ম্যাজিকাল থ্রি-ফিগার।