‘ইয়েস বয়!’ প্রায় সজোরে চিৎকার করে এভাবেই নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন জেমি সিডন্স। কারণটা স্পষ্ট। তার শীর্ষ্য তাওহীদ হৃদয় দূর্দান্ত এক পুল শট খেলেছেন। না সেটা কোন ম্যাচে নয়। বরং সিলেটে চলমান ক্যাম্পে বাকি সবার মতই নিজের স্কিল ঝালিয়ে নিচ্ছেন তাওহীদ হৃদয়।
সম্ভাবনার উজ্জ্বল এক প্রদীপ জ্বেলেই তাওহীদ হৃদয় পা রেখেছেন জাতীয় দলের গণ্ডিতে। ইতোমধ্যেই দলের অন্যতম সদস্য বনে গেছেন তিনি। কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে দলের সবার প্রিয় হতেও সময় নেননি। ক্রিকেটীয় সামর্থ্য প্রমাণ করে এভাবে প্রিয় ক্রিকেটার বনে যাওয়ার নজির আছে অনেক।
তবে সবাই একেবারে শতভাগ দক্ষ নয়। প্রতিটা খেলোয়াড়েরই কিছু না কিছু দূর্বলতা থাকে। তেমন এক মৃদু দূর্বলতা ছিল হৃদয়ের মাঝে। সেটা ছিল তার পুল শট। তিনি এক ভিন্নধর্মী পুল শট খেলতেন। সেটা নিশ্চয়ই দূর্বলতা হবার কথা নয়। তবে হৃদয়ের এখন অবধি খেলা ম্যাচগুলো দেখলেই বিষয়টি বেশ পরিষ্কার হয়ে যায়।
তিনি সাধারণত বেশ আগেভাগেই পুল শট খেলতে পছন্দ করেন। মিড উইকেট অঞ্চলটা মূলত তার পুল শটের স্কোরিং জোন। তবে সাধারণত অধিকাংশ সুদক্ষ ব্যাটাররা পুল শট খেলে থাকেন ব্যাকফুটে। তাছাড়া মাঝেমধ্যে ফ্রন্টফুটেও খেলে থাকে। তবে বলকে শরীরের বেশ কাছে আসার সুযোগ করে দেয়।
অধিকাংশ পুল শটের স্কোরিং জোন তাই স্কোয়ার লেগ কিংবা ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ। কিন্তু হৃদয় চাবুক চালানোর মত করে ব্যাট চালান পুল শট খেলার সময়। সেটা স্লো উইকেটে ততটা বিপজ্জনক নয়। তবে ফাস্ট এবং বাউন্সি উইকেটে টপএডজ হয়ে হৃদয়ের আউট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রবল।
নিজের সেই দূর্বলতা থেকে বেড়িয়ে আসতে তিনি প্রায় ঘন্টাখানেক অনুশীলন করেছেন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। তিন দিনের ক্যাম্পের শেষদিন, পিচে সিমেন্টের স্ল্যাপ বসিয়ে বোলিং মেশিনের সাহায্যে একটানা অনুশীলন করে গেছেন হৃদয়। ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স তাকে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন। ভাল শটের প্রশংসা করেছেন।
হাততালি দিয়ে অভিবাদনও জানিয়েছেন। ব্যাকফুটের পুলশট বেশ আয়ত্ত্বেও নিয়ে এসেছেন হৃদয়। সিমেন্টের স্ল্যাপ থেকে বাড়তি বাউন্সগুলো দেখেশুনে সজোরে চালিয়েছেন। শুরুর দিকে খানিকটা ব্যাটে বলে সংযোগ হচ্ছিল না। তবে শেষদিকে হৃদয়ের দক্ষতায় ব্যাট আর বলের যুগলবন্দীতে ধ্বনিত হয়েছে শ্রুতিমধুর শব্দ।
মূলত সিলেটে ক্লোজডোর অনুশীলনে খেলোয়াড়দের দক্ষতার বাড়ানোর কাজটাই প্রাধান্য পেয়েছে তিন দিনের ক্যাম্পে। কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহের তত্ত্বাবধানে দলের বাকি কোচিং স্টাফরা প্রতিটা খেলোয়াড়ে দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সহয়তা করেছে। অন্তত হৃদয়ের এই কিঞ্চিৎ দূর্বলতাও বাদ যায়নি।
হয়ত দেশের মাটিতে তিনি বিন্দাস হয়ে তার সেই চাবুক পুল শট খেলে দিন পার করে দিতে পারতেন। তবে তাওহীদ হৃদয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ। সেটা বুঝতে ভুল করেননি হাতুরু কিংবা সিডন্স। তাইতো হৃদয়ের প্রতি দেওয়া হয়েছে বাড়তি নজর। তাকে গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বসেরা হওয়ার জন্যে।
তাছাড়া আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজের ম্যাচগুলো হবে ইংল্যান্ডে। সেখানকার উইকেট বেশ পেসবান্ধব। বাউন্স, সুইং আর গতি সবকিছুই পেয়ে থাকেন পেসাররা। সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের ব্যাটিং স্তম্ভ হতে হবে হৃদয়কেই। তাইতো বাড়তি সতর্কতা হিসেবে পুল শটের লম্বা অনুশীলন। নিজের সব দূর্বলতা কাটিয়ে উঠে হৃদয় হয়ে উঠবেন বিশ্বসেরা। তেমনটাই হয়ত প্রত্যাশা কোচ থেকে শুরু করে ক্রিকেট ভক্তদের।