উইকেটকিপার-ব্যাটার থেকে ব্যাটার-উইকেটকিপার

১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড বনাম ভারতের ম্যাচ; ভারতের উইকেটরক্ষক কিরণ মোর সেদিন লর্ডসের মাটিতে গ্রাহাম গুচের একটি সহজ ক্যাচ ফেলে দেন। এরপর ইংল্যান্ড অধিনায়ক ৩৩৩ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে ভারতকে লজ্জায় ডোবান। উইকেটরক্ষকের ভুলের কারণে দলের কেমন ক্ষতি হয় সেটার একটি উদাহরণ হয়েই আছে সেই ঘটনা।

তাই তো সেসময় উইকেট রক্ষকদের নিয়ে আলাদা সতর্ক থাকতো দলগুলো। একাদশে জায়গা দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাটিংয়ের চেয়ে স্ট্যাম্পের পিছনের পারফরম্যান্সের উপরই জোর দেয়া হতো। জেফ ডুজন, রডনি মার্শ, জ্যাক রাসেল, অ্যালান নট, ওয়াসিম বারী, সৈয়দ কিরমানি – এরাই ছিলেন তখনকার কিংবদন্তি উইকেটরক্ষক, তবে ব্যাটিংটা ছিল গড়পড়তা।

কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে যাওয়ার মত ক্রিকেট নিয়ে ধ্যান ধারণাও বদলে গিয়েছে। এখন আর কোন দল শুধু উইকেট কিপার কোটায় কাউকে একাদশে রাখতে আগ্রহী নয়। একুশ শতকের শুরুর দশকে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এই ধারণা জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনিই সম্ভবত সেরা উইকেটরক্ষক, যার ব্যাট আর গ্লাভস সমানতালে চলতো।

বর্তমান সময়ে তাই ক্রিকেট দলগুলো ভালো ব্যাটিং করতে পারে এমন কিপারদের পছন্দ করেছে। এজন্যই পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রশিদ লতিফ মনে করেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান বলার পরিবর্তে শব্দটি ব্যাটসম্যান-উইকেটরক্ষক হওয়া উচিত।

চলতি টেস্ট সিরিজগুলোর দিকে তাকালেও ব্যাপার স্পষ্ট হয়। ইংল্যান্ড তো বটেই, পুরো বিশ্বেরই অন্যতম সেরা উইকেট রক্ষক বেন ফোকস; অথচ তাঁকে বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে কেবল ব্যাটিংটা কম পারেন তাই। এছাড়া ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচেও ঈশান কিষাণ সুযোগ পেয়েছেন শ্রীকর ভরতের জায়গায়; যদিও কিপিং দক্ষতা বিবেচনায় ভরত যোজন যোজন এগিয়ে।

এসব কারণে উইকেট রক্ষকদের ভুল করার সংখ্যাও বাড়ছে। এই যেমন অ্যাশেজে বেশকিছু সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন জনি বেয়ারস্টো, আবার স্ট্যাম্পিংও মিস করেছেন তিনি। গ্লাভস হাতে স্বস্তিতে ছিলেন না কিশানও, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বাউন্সি পিচে কিংবা দেশের মাটিতে র‍্যাংক টার্নার পিচে কেমন উইকেটকিপিং করেন এই তরুণ সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

ব্যাটসম্যান-কিপার ধারণা যে দেশ থেকে প্রথম জনপ্রিয় হলো সেই অস্ট্রেলিয়া কিন্তু প্রথাগত উইকেট কিপার নির্বাচন করে থাকে। তাঁদের কাছে উইকেটের পিছনের পারফরম্যান্সই মুখ্য; সাফল্যও মিলেছে অজিদের। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি গ্লাভস হাতে নিজের কারিশমা দেখিয়ে যাচ্ছেন; বিশেষ করে জনি বেয়ারস্টোকে করা ক্যারির সেই আলোচিত স্ট্যাম্পিং তাঁর গেম এওয়ারনেস এবং তীক্ষ্ণতার প্রমাণ দেয়।

এটা অন্তত স্পষ্ট যে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে বড় ভূমিকা রাখছেন উইকেটরক্ষকরা। শুধু ডিসমিসাল-ই নন, অতিরিক্ত রান বাঁচানোর ক্ষেত্রেও একজন ‘টপ নচ’ উইকেটরক্ষক বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও তাই সাদা পোশাকে নুরুল হাসান সোহানকে আলাদা চোখে দেখা হয়, যদিও টিম কম্বিনেশনের কারণে এই সময়ে তাঁকে একাদশে রাখা একটু কঠিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link