বিরাট কোহলির কাছে থেকে অধিনায়কত্ব পাবার বছর পেরোলেও এখনো আইসিসি আসরে সাফল্য এনে দিতে পারেননি রোহিত শর্মা। সবেধন নীলমণি বলতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সফলতা। নিজের বয়সটাও ৩৬ বছর, অন্যদিকে, নতুন অধিনায়ক হিসেবে জোর দাবি জানাচ্ছেন তরুণ হার্দিক পান্ডিয়া। সব মিলিয়ে নতুন বছরে রোহিত শর্মার জন্য অপেক্ষা করছে অগ্নিপরীক্ষা।
অধিনায়কত্ব পাবার পর রোহিতের লক্ষ্য ছিল দুটো – ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতকে শিরোপা এনে দেয়া। কিন্তু ২০২২ সালের টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত ছিল এক প্রকার ব্যর্থ। এশিয়া কাপে বিদায় নিয়েছে ফাইনালের আগেই। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটের অসহায় আত্নসমর্পন। দল নির্বাচনে ব্যর্থতা, ইনজুরি সমস্যা, অ্যাপ্রোচে ঘাটতি – সব মিলিয়ে ভারতের ব্যর্থতার কারণও বেশ কয়েকটা।
তবে নতুন বছরের নতুন শুরু করতে চান অধিনায়ক রোহিত। তিনি জানেন ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ জিততে পারলে পুরনো হারের কথা কেউই মনে রাখবেন না। তবে অধিনায়কত্বের পাশাপাশি রোহিতের ব্যাটের ধারও কমছে খানিকটা। গত বছরের বড় একটা সময় ইনজুরির কারণে কাটিয়েছেন মাঠের বাইরে। বয়সও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে, বিশ্বকাপ শেষ হতে হতে পা রাখবেন জীবনের ৩৬ বসন্তে। বিশ্বকাপের ফলাফল তাই যাই হোক, গুঞ্জন আছে বিশ্বকাপ শেষেই ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন তিনি।
নতুন অধিনায়ক খুঁজতে অবশ্য বেগ পেতে হবে না বিসিসিআইকে। ইতোমধ্যেই টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে অধিনায়কত্বের হাতটা পাকিয়ে নিচ্ছেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাঝে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও প্রবলভাবে ফিরে এসেছেন এই অলরাউন্ডার। সব মিলিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে হার্দিককে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দেখতে পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
বোর্ডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘এই সময়ে ২০২৩ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবার জন্য রোহিতই সবচেয়ে যোগ্য। কিন্তু আমাদের পরের বছরের কথাও ভাবতে হবে। বাজে কিছু ঘটার জন্য অপেক্ষা করার চাইতে আগে থেকে প্রতিরোধ করাই উত্তম। এছাড়া বিশ্বকাপ শেষেই রোহিত ওডিয়াই ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে কখনো অধিনায়কত্ব না করলেও বর্তমানে দারুণ করছেন তিনি। নিজের প্রথম দায়িত্বেই আইপিএলের নবাগত দল গুজরাট লায়ন্সকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। জাতীয় দলেও অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছেন আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
অধিনায়ক হিসেবে তাঁর রেকর্ডটাও ঈর্ষণীয়, মাত্র দুটো ম্যাচে হেরেছেন। অথচ প্রতিবারই তাঁকে খেলতে হয়েছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছাড়াই, বরং অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়ে ভবিষ্যতের ভারত দল গড়ায় মনোযোগ দিয়েছেন হার্দিক। কোহলি এবং রোহিত পরবর্তী যুগে অধিনায়কত্ব হিসেবে ভারতকে সামনে এগিয়ে নেবার ভারটা তাই বর্তাবে এই অলরাউন্ডারের কাঁধেই।
এছাড়া নেতৃত্ব পাবার পর থেকেই হার্দিককে পরিণত লাগছে ভীষণ। ব্যাটিংয়ে উন্নতি করেছেন, বোলিংয়ে পুরনো ঝলক দেখাচ্ছেন প্রায়ই। অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা পরিণতবোধ এনে দিয়েছে, আগের মত এলোপাথারি শট খেলার প্রবণতা থেকে ফিরে এসেছেন। বরং দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটা তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধেই।
বোর্ডের সেই কর্মকর্তা হার্দিকের প্রশংসা করে বলেন, ‘হার্দিক দারুণ করছে। সে তরুণ এবং ত্রমশই উন্নতি করছে। রোহিতের উত্তরসূরী হিসেবে হার্দিকই সবচেয়ে যোগ্য। তাঁকে লম্বা সময়ের জন্য ভারতের অধিনায়কত্ব দেয়া যেতে পারে।’ বোঝাই যাচ্ছে হার্দিকের ওপর ভরসা বাড়ছে ভারতীয় বোর্ডের।