‘আম্পায়ার’ শব্দটা শোনার সাথে সাথে ঠিক কোন চিত্রটা আপনার মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে? আচ্ছা, হাঁটু পর্যন্ত ঝোলা ল্যাবকোট পরে উইকেটের পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে, এমন কোন দৃশ্য কি আপনার মনে ভেসে ওঠে? না উঠলে আপনাকে দোষ দেওয়া যায়না, ১৮৬১ সালের আম্পায়ারদের ফ্যাশন আর কতজনই বা মনে রাখে বলুন?
তখন আদতেই আম্পায়াররা সাদা রঙের ল্যাবকোট পরতেন।
এই নিখাঁদ সাদা ল্যাবকোট নিয়ে একটা বেশ মজার গল্পও আছে।
১৮৬১ সালেরই ঘটনা এটি। ইংল্যান্ড একাদশ আর ফ্রি ফরেস্টারের মধ্যকার ম্যাচ চলছিল। হঠাৎ করেই ইংলিশ ক্রিকেটার উইলিয়াম আরমিটসটিড আম্পায়ারের কাছে ছুটে যান অভিযোগ জানাতে, সেই অভিযোগ আবার আম্পায়ারের বিরুদ্ধেই- সাদা পোশাক সামনে রেখে বোলিং করতে নাকি বড্ড অসুবিধা হচ্ছিল ওর।
এরপর আম্পায়ারের নিঁখাদ সাদা ল্যাবকোটে কালো দাগ যুক্ত হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে মাথার হ্যাটও। যুগে যুগে আম্পায়ারদের ফ্যাশন পরিবর্তন হয়েছে বেশ অনেকবার।
তবে, আম্পায়ারদের পোশাকে একটা ছোটখাট বিপ্লবের ডাক দেওয়া হয় ২০০৪ সালে। ডাকটা দেয় অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স। এই ডাকটা শুরুতেই অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্যে দেওয়া হয়েছিল বললে ভুল বলা হবে, সূচনাটা ছিল কাউন্টি ক্রিকেটের জন্যে।
সংস্থাটির ভাষায় আম্পায়ারদের পোশাক নাকি আরো আধুনিক হওয়া উচিত । ঠিক সেসময় থেকেই সাদা ল্যাবকোট ধাঁচের পোশাক আর দেখা গেল না কোনদিন। ইংলিশ শীতে তো এরপর ট্রাকশ্যুট, ব্লেজার এসবও দেখা গেছে বহুবার।
সেসময় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘হাউ ইজ দ্যাট’ এ সংস্থাটির চেয়ারম্যান তো বলেও দেন, ‘দীর্ঘ সময়ের পর পুরনো পোশাকগুলো বদলে নতুন কিছু সৃষ্টি করা উচিত।’ অবশ্য আম্পায়ারদের এ বিপ্লবের যে সমালোচনা হয়নি তা কিন্তু না, সমালোচনাও সে সময় হয়েছে বেশ, হয়েছে আলোচনাও। তবে শেষ পর্যন্ত কে জিতেছে তা তো আজ উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটার পোশাক দেখলেই বুঝতে পারবেন।
এদিক দিয়ে অবশ্য চার্লি কারনট আরো এক কাঠি সরেশ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক আন-অফিশিয়াল ক্রিকেট ম্যাচে তিনি আম্পায়ারিংয়ে নেমেছিলেন একটা পি-কোট পরে!
আসলে, ওয়ানডে ক্রিকেটে যেমন নানা সময়ে নানা পরিবর্তন এসেছে, আম্পায়ারদের পোশাক এমনকি পোশাকের রঙেও একটা যুগের সাথে তাল মেলানো পরিবর্তন নানা সময়েই বেশ জরুরি ছিল। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে।
দিবা রাত্রির ওয়ানডে ম্যাচ যখন প্রথমবারের মত চালু হল, দেখা গেল লাল বল (তখনও ওয়ানডেতে লাল বলে খেলা হত) রাতে ঠিক দেখা যায়না । ওয়ানডে ক্রিকেটে সাদা বলের ধরণ ঠিক তখন থেকে চালু হয়।
ঠিক একই সমস্যা ঘটে যদি আম্পায়ারেরা সাদা রঙের কিছু পরে থাকেন। সাদা রঙের ক্রিকেট বলের ছোটাছুটিতে আম্পায়ারের সাদা পোশাক আসলে বেশ সমস্যায় ফেলতে বাধ্য। তাই আম্পায়ারদের পরা দরকার ছিল গাঢ় কোন রঙ। বিপ্লবটা ঠিক এসব সমস্যা মাথায় নিয়েই ছিল।
যে বিপ্লবে জিতেছিলেন আম্পায়ারেরা। তাই তো বিলি বাইডেনকে নিখাদ কালো রঙে হাসতে দেখেছি আমরা অনেকবার।
ক্রিকেটে রঙিণ পোশাক চালু হয় ক্যারি প্যাকারের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট দিয়ে। আম্পায়ারদের রঙিণ পোশাকের প্রথম নজীরও ছিল সেটাই। তবে, আজকালকার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জমানায় রঙিণ পোশাক খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। টুর্নামেন্ট ভেদে এখন আম্পায়ারদের শরীরে শোভা পায় রঙবেরঙের শার্ট কিংবা পোলো টি-শার্ট।
আম্পায়াররা নিজেরাও কম বিপ্লবী নন। আজকাল তাঁরা নিজেরাও খুব ফ্যাশন সচেতন। ২০২০ সালের আইপিএলে পশ্চিম পাঠক নামের এক ভারতীয় আম্পায়ার নিজের বড় চুলের জন্য বিখ্যাত হন।
তবে, কিছু কাজ তারা করেন নিজেদের সুরক্ষার্থে। এই পশ্চিম পাঠকই এর আগে আইসিসির ম্যাচে হেলমেট পরে মাঠে নামেন। হেলমেট অবশ্য আজকাল অনেকই পরেন। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার জন ওয়ার্ড প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে হেলমেট মাথায় দিয়ে মাঠে নামেন।
তার অবশ্য আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন করার কোনো বিকল্পও ছিল না। আগের ডিসেম্বরেই রঞ্জি ট্রফির এক ম্যাচে বলের আঘাত লেগেছিল তাঁর মাথায়।
অজি আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড অবশ্য এখানে বাকিদের চেয়ে আলাদা। হাতে একটা পারস্পেক্স ডিস্ক নিয়ে নামেন, দেখতে অনেকটা ঢালের মত মনে হয়।