মাউরিসিও পচেত্তিনো, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ যাত্রায় নব্য পথপ্রদর্শক

নির্দ্বিধায় এটা স্বীকার করাই যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের নেই কোনো প্রতিভার কমতি। না তারুণ্যের কমতি। তাদের দরকার কেবল একজন পথপ্রদর্শকের। এদিকে পচেত্তিনোর রয়েছে অশেষ অভিজ্ঞতার ঝুলি। কোচ হিসেবে তার অভিষেক ১২ অক্টোবর পানামার বিরুদ্ধে। সামনে আছে বিশাল সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগাতে পারবেন তা সময় বলে দেবে।

সম্প্রতিই যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল দলের দায়িত্বভার গ্রহন করেছেন আর্জেন্টাইন কোচ মাউরিসিও পচেত্তিনো। ২০২৬ বিশ্বকাপের অন্যতম আয়োজকরা নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করেছে জোরেশোরে। নি:সন্দেহে আলোচনার জন্ম হচ্ছে ফুটবল পাড়ায়।  হবারই কথা! আর্জেন্টাইন এই কোচ যে আগে টটেনহাম হটস্পার, প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর মতো বাঘা বাঘা সব দল পরিচালনা করেছেন।

স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্র এবারকার কোপা আমেরিকার শুরুতে অন্যতম আলোচ্য দল ছিল। কারণ ছিল তারুণ্যে ঠাসা এক দল। দেশের স্বর্ণালী প্রজন্মখ্যাত এই দল গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ে যায়। এমনই এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলীয় চিত্রে প্রবেশ করেন পচেত্তিনো। 

নিজ ভূমিতে বিশ্বকাপ যেকোনো দলের জন্য কেবল সম্মানজনকই নয়, ভাল খেলাটা তখন হয়ে পড়ে অপরিহার্য। সেই হিসেবে আগামী ২১ টা মাস পচেত্তিনো এবং তার দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা প্রশ্ন কিন্তু রয়েই যায়। এত তারুণ্য নির্ভর নয়া প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের খুঁত টা কোথায় ছিল? এক্ষেত্রে পচেত্তিনোরই বা করণীয় কি?

প্রথমেই তাকে মাঝ মাঠের সমন্বয় বাড়াতে হবে। সৃষ্টি করতে হবে শৈল্পিক মাঝ মাঠ। মাঝ মাঠে সৃষ্টিশীল ফুটবলের জন্য প্রাথমিক কাচা মাল হিসেবে রয়েছেন চমৎকার সব খেলোয়াড়। রয়েছেন এ এফ সি বোর্নমাউথের ২৫ বছর বয়েসি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার টাইলার এডামস। সাথে আছেন জুভেন্তাসের ২৬ বছর বয়সী ওয়েস্টন ম্যাককিনি এবং ২১ বছর বয়সী এসি মিলানের ইউনুস মুসা।

কিন্তু দু:খজনক হলেন  সত্য যে, তারা কেউই বিগত কোপায় জ্বলে উঠতে পারেননি। গ্রুপ পর্বের শেষ খেলায় উরুগুয়ের সাথে তারা কেবল ৫২টি পাস পূর্ণ করতে সক্ষম হয়। ডুয়েল জেতার ক্ষেত্রেও দেখা যায় অপরিপক্কতা। ম্যাককিনি ১৮ টি গ্রাউন্ড ডুয়েলে কেবল চারটিতে জয় পান। এরিয়াল বলে ১২টি থেকে দু’টি তার পক্ষে যায়।

মাঝ মাঠ ছাড়াও ছিল আক্রমণ ভাগে অপতৎপরতা। জিও রেইনা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নান্দনিক প্লে মেকার। ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ২০২৪ কনকাফ নেশন্স লিগে মেক্সিকানদের বিরুদ্ধে ছিলেন দুর্দান্ত। যা তাকে যোগ্য ১০ নম্বর জার্সির দাবিদার বানায়। এদিক পোচেত্তিনোও তরুন খেলোয়াড়দের নির্মাতা হিসেবে খ্যাতিমান।

তার হাতেই উঠে এসেছিল ডেলে আলি, হ্যারি কেন রা। তাই নি:সন্দেহে জিও রেইনার দিকে তার আলাদা নজর থাকা প্রয়োজন। যদিও ইনজুরি আক্রান্ত রেইনার জায়গায় তিনি পাবেন পিএসভি আইন্ডহোভেনের মালিক টিল ম্যান বা সেল্টা ভিগোর লুকা ডে লা টোরে-কে।

এসবের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি দুর্বল দিক হচ্ছে একজন সত্যিকারের নাম্বার নাইনের অভাব। তবে এক্ষেত্রে কভেন্ট্রির আক্রমণ ভাগের হাজি রাইট কে তিনি বিবেচনায় আনতে পারেন। ২০২২ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের সাথে গোল করা ছাড়াও কনকাফ নেশন্স লিগে গোল রয়েছে তাঁর।

সেমি ফাইনালে জ্যামাইকার সাথে করেন জোড়া গোল। তাছাড়া জুভেন্তাসের আক্রমন ভাগের টোমোথি উইয়াহও রয়েছেন। আগের কোচ গ্রেগ বার হল্টারের সময়ে যদিও উইং সামলাতেন তিনি। তবে তারও ঝুলিতে রয়েছে বিশ্বকাপে গোল করার মতো ক্ষমতা। এছাড়াও আছে ফ্লোরিয়ান বালাগুন। যিনি বিগত কোপাতেও পানামার সাথে গোল করেছেন।

নির্দ্বিধায় এটা স্বীকার করাই যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের নেই কোনো প্রতিভার কমতি। তাদের দরকার কেবল একজন পথপ্রদর্শকের। এদিকে পচেত্তিনোর রয়েছে অশেষ অভিজ্ঞতার ঝুলি। কোচ হিসেবে তার অভিষেক ১২ অক্টোবর পানামার বিরুদ্ধে হতে চলেছে। সামনে আছে বিশাল সম্ভাবনা কতটা কাজে লাগাতে পারবেন তা সময় বলে দেবে।

Share via
Copy link