আইপিএলের প্রতি আসরেই উত্থান ঘটে তরুণ কোনো তারকার। ২০১৮ মৌসুমটা যেমন ছিল বরুণ চক্রবর্তীময়, রহস্য স্পিনে কলকাতাকে সেবার তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে। মাঝে হারিয়ে যাবার আভাস থাকলেও এবারের মৌসুমে বরুণ ফিরে এসেছেন পুরনো ছন্দে।
বরুণ চক্রবর্তীর ক্রিকেটে আসার গল্পটা চমকে দেবার মতোই। কিশোর বয়সে ছিলেন উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। ধোনির মতো ফিনিশিং কিংবা দুর্দান্ত সব স্ট্যাম্পিংয়ে মুগ্ধ করবেন গোটা বিশ্বকে, কিশোর বরুণের দু’চোখে তখন খেলা করে ধোনি হবার স্বপ্ন। কিন্তু জীবনটা তো আর স্বপ্নের মতো রঙিন নয়, সেই কারণেই কিনা বাস্তবতায় ফিরতে সময় লাগলো না। বয়সভিত্তিক দল থেকে বাদ পড়ে বিদায় জানালেন ক্রিকেটকেই।
বেছে নিলেন পড়াশোনাকে, কিপিং গ্লাভস ছেড়ে যোগ দিলেন স্থাপত্যবিদ হবার দৌড়ে। কিন্তু যার শয়নে স্বপনে ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন, তিনি কি আর বাইশ গজ থেকে দূরে থাকতে পারেন! বরুণ তাই এবারে বনে গেলেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
কিন্তু বরুণের কপাল মন্দ, মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই পড়লেন গুরুতর ইনজুরিতে। ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিলেন পেস বোলিংটা তোমাকে দিয়ে হবে না বাপু! বরুণের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এতদিনে হাল ছেড়ে দিতো। কিন্তু বরুণ যেন অন্য ধাতুতে গড়া, ক্রিকেটটা তাঁর রক্তে। সেই কারণেই কিনা এবারে বনে গেলেন স্পিনার, যেনতেন নয় একদম রহস্য স্পিনার।
এরপর থেকেই মূলত ক্যারিয়ারের চাকা ঘুরতে শুরু করে এই তারকার। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বিজয় হাজারে ট্রফি, সবখানেই বরুণের রহস্য স্পিনে খাবি খেয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। আইপিএল নিলামেও তাঁকে নিয়ে হইচই, সাড়ে আট কোটি রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব কিংস।
কিন্তু সেই মৌসুমটা নিশ্চিতভাবেই ভুলে যেতে চাইবেন এই তারকা। মাত্র এক ম্যাচে মাঠে নেমে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের কাছে। সবাই ধরেই নিয়েছিল অলৌকিক কিছু না করলে বরুণের আইপিএল ক্যারিয়ারের সেখানেই ইতি।
কিন্তু বরুণ যেন অলৌকিক কিছু করতেই আরো একবার ফিরলেন আইপিএলে। তবে জার্সিটা বদলে গেল, বরুণের ঠিকানা হলো কলকাতা নাইট রাইডার্স। ২০২১ মৌসুমে মাত্র সাড়ে ছয় ইকোনমিতে ১৮ উইকেট শিকার করে কলকাতাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে।
এরপর অবশ্য আবারো ছন্দপতন। জাতীয় দলে অভিষেক ঘটলেও জায়গা পাকা করতে পারেননি। আইপিএলেও সময়টা ভালো যাচ্ছিলো না, সবাই ধরে নিয়েছিল বরুণ রূপকথার এখানেই সমাপ্তি।
তবে, ভরসা হারায়নি কলকাতা ম্যানেজমেন্ট, হাজারো সমালোচনা সত্ত্বেও বরুণকে তাঁরা ধরে রেখেছিল বড় অংকের বিনিময়েই। এবারের মৌসুমেই যেন আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন এই তারকা।
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তেই ছিল কলকাতা। শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র ৩৮ রান দরকার ছিল দলটির। কিন্তু বরুণ যেন নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন ডেথ ওভারের জন্য।
টানা তিন ওভারে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে দেননি প্রতিপক্ষকে। শেষ ওভারে মাত্র নয় রানের পুঁজি নিয়েও দলকে এনে দিয়েছেন পাঁচ রানের অবিশ্বাস্য জয়। তাঁর গুগলি, ফ্লিপার কিংবা ক্যারম বলের কোনো জবাব ছিল না হায়দ্রাবাদের ব্যাটারদের কাছে।
জীবন সবাইকেই দ্বিতীয় সুযোগ দেয়, কিন্তু সবাই সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে না। বরুণ চক্রবর্তী সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বিধায়ই বাইশ গজে আজো রূপকথার গল্প লিখে যান।