ফিরে আসার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই

২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তাঁর অন্তুর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল তুমুল বিতর্কের। কিন্তু ক্রমাগত ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় একপ্রকার হারিয়েই গিয়েছিলেন দৃশ্যপট থেকে। তবে এবারের আইপিএলে ফর্মে ফিরে বিজয় শংকর যেন জানান দিলেন থ্রিডি ক্রিকেটার হতে না পারলেও এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি। 

২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তাঁর অন্তুর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছিল তুমুল বিতর্কের। পরবর্তীতে ক্রমাগত ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় একপ্রকার হারিয়েই গিয়েছিলেন দৃশ্যপট থেকে। তবে এবারের আইপিএলে ফর্মে ফিরে বিজয় শংকর যেন জানান দিলেন থ্রিডি ক্রিকেটার হতে না পারলেও এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি। 

২০১৯ বিশ্বকাপে আম্বাতি রাইডুর বদলে বিজয় শংকরকে দলে নেয়ার ফলে গোটা ভারতীয় ক্রিকেট যেন দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর কার্যকরী বোলিংয়ের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ের সুবাদে শংকরকে তখন ভারতীয় নির্বাচকরা আখ্যায়িত করেছিলেন থ্রিডি ক্রিকেটার নামে। সেই সময়টাতে ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ ভাবা হতো তাঁকে।

কিন্তু বিশ্বকাপের মাঝপথেই ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যেতে হয় দল থেকে। এরপরে আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। কেবল তাই নয়, ইনজুরি আর ফর্মহীনতায় হারিয়ে যেতে বসেছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের দৃশ্যপট থেকেই। 

আইপিএলেও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে তিন মৌসুমে একটাও ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি। বরং মিডল অর্ডারে ক্রমাগত রানখরা তাঁকে ঠেলে দিয়েছে ব্যর্থতার বৃত্তে। ২০২১ মৌসুমে সাত ম্যাচে মোটে ৫৮ রান করেন এই অলরাউন্ডার। স্ট্রাইকরেটটা আরো বিবর্ণ, মাত্র ১১১। 

বিজয় শংকরের প্রতিভা নিয়ে কারো কখনোই সংশয় ছিল না। কিন্তু তাঁর উপর ভরসা করার সাহস দেখায়নি কোনো ফ্যাঞ্চাইজিই। তবে ২০২২ আইপিএলে তাঁকে দলে ভেড়ায় নবাগত দল গুজরাট টাইটান্স। সেখানেও আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন বিজয়, চার ম্যাচে করেন মোটে ১৯ রান। সবাই ধরেই নিয়েছিল বিজয়ের পক্ষে আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা সম্ভব নয়।

তবে তিনি নিজের উপর বিশ্বাস হারায়নি। জানতেন পরিশ্রম চালিয়ে গেলে একদিন সফলতা পাবেনই। ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা করেন রঞ্জি ট্রফি দিয়ে। তিন সেঞ্চুরি আর পঞ্চাশের অধিক গড় নিয়ে মৌসুম শেষ করেন ৪৮৩ রানে। 

সবকিছু সত্ত্বেও এবারের আইপিএলে তাঁকে ধরে রাখবে গুজরাট এমনটা ভাবেনি কেউই। কিন্তু আশিষ নেহরা ভরসা রেখেছিলেন পুরনো সেনানীর উপর। অন্যদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বিজয়ের জন্য এটাই ছিল শেষ সুযোগ। মৌসুমের শুরুতে জায়গা না পেলেও সাই সুদর্শনের অফফর্মের কারণে একাদশে ফিরতেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

প্রতিটি ম্যাচেই মিডল অর্ডারে নেমে দলকে এনে দিয়েছেন লড়াকু সংগ্রহ। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেন্সে তো খেলেছেন অপরাজিত ৫১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। ১৮০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একশো পেরোনোর আগেই তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিলো গুজরাট। কিন্তু ব্যাট করতে নেমেই পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেন শংকর। ডেভিড মিলারের সাথে মাত্র ৩৯ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন ১৪ বল বাকি থাকতেই। 

তাঁর বিধবংসী ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব যেন ছিল না কলকাতার বোলারদের কাছে। চারের চাইতে যেন এদিন ছক্কা হাঁকানোতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি। মাত্র ২৪ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলার পথে দুই চারের পাশাপাশি ছক্কা হাঁকিয়েছেন পাঁচটি।  এবারের আইপিএলে যেন ফিনিক্স পাখির ন্যায় ধ্বংসস্তুপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা লিখলেন বিজয় শংকর।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...