আন্তজার্তিক ক্রিকেটে ভারত এখন রীতিমতো উড়ছে। ইংল্যান্ডকে সাদা বলে সিরিজ হারানোর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও ধরে রেখেছে আধিপত্য। কিন্তু এশিয়া এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিরাট কোহলি। একসময়ের বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানের সমস্যা হয়ে উঠার গল্প সবার জানা।
ধারনা করা হয়েছিল আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফরে অংশ নিয়ে ফর্মে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। কিন্তু এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করে হলো দল ঘোষণার পর; বিরাট কোহলিকে ছাড়াই আফ্রিকান দলটির বিপক্ষে খেলবে টিম ইন্ডিয়া।
সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দল থেকে বিরাট কোহলিকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জন বেশ ডালপালা মেলেছে। অথচ এমন কিছু কয়েক মাস আগেও অকল্পনীয় ছিল। ভারতের তো বটেই, ক্রিকেট বিশ্বেই সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন ছিলেন তিনি; বিরামহীন রান করেছেন।
বর্তমান প্রজন্মের রান মেশিন খ্যাত বিরাট কোহলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ৫০ এর বেশি ব্যাটিং গড়ে ২৩৬৯৩ রান করেছেন। কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারেরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এত বেশি গড় নেই, তিনি ইনিংস প্রতি ৪৮.৫২ রান করেছেন। এমনকি সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মাঝে ৫০ এর বেশি ব্যাটিং গড় আছে শুধুমাত্র কোহলির।
অথচ এখন বিরাটের ব্যাটিং হয়ে পড়েছে ক্ষণস্থায়ী, অনেকটা টিকটক ভিডিও-র মত। যতক্ষণ ক্রিজে থাকেন সাবলীলভাবেই খেলেন। কিন্তু হঠাৎ ছোটখাটো ভুল করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন। বিরাট কোহলির ক্লাস নিয়ে কারো সন্দেহ নেই, নিজের দিনে তিনি যেকোনো বোলিং লাইনআপকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারেন।
কিন্তু বর্তমান সময়ে পুরোনো বিরাটকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক বছরের ব্যাটিং গড় বড্ড বেমানান তাঁর নামের পাশে। এখন নির্বাচকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোহলির ফর্ম। তারা চাইলেও তাকে বাদ দিতে পারছে না, আবার পুরোপুরি সেবাও পাচ্ছে না কোহলির।
এমতাবস্থায় ভারতে সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে তিনটি কাজ করতে পারে টিম ম্যানেজম্যান্ট। প্রথমেই তাকে ঘরোয়া ক্রিকেটে পাঠানো যেতে পারে যাতে তিনি ভুলত্রুটি শুধরে ফিরে আসতে পারেন। এছাড়া দলের সাথে রেখে আশা করে থাকা যেতে পারে যে, কোহলি ফর্মে ফিরবেনই। আবার কিছু সময়ের জন্য ক্রিকেট থেকে বিরাট কোহলি দূরে থাকার সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। সাময়িক অবসর শেষে হয়তো আত্মবিশ্বাসী কোহলিকে পাওয়া যাবে।
কিন্তু শুরুতেই প্রথম অপশনটি বাদ দেয়া যায়, বিরাট কোহলি আসলে ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়ে বড়। তিনি প্রায় এক দশক আগে সর্বশেষ রঞ্জি ট্রফিতে খেলেছিলেন। তাছাড়া বিজয় হাজরে টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন এক যুগ আগে।
অন্যদিকে শেষ কয়েক বছরে বেশ কিছু সিরিজে বিশ্রাম নিয়েছিলেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাতেও খুব একটা উন্নতি হয়। তাই আসন্ন জিম্বাবুয়ে সফর হতে পারতো কোহলির জন্য হতে পারতো প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। সামনেই এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ; ইন ফর্ম কোহলিকে বড্ড দরকার ছিল ভারতের।
হ্যাঁ এটা মানতেই হবে, ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের ১৫ নম্বরে থাকা একটি দলের বিপক্ষে খেলাটা বিরাট কোহলির জন্য কিছুটা ভিন্ন স্বাদের মনে হবে। কিন্তু তারপরও এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়; কোন দল-ই সহজে রান করতে দিবে না। সবমিলিয়ে বিরাট কোহলির জন্য সুবর্ণ সুযোগ ছিল; কিন্তু সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেন সাবেক নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান।
খুব সম্ভবত এশিয়া কাপে পূর্ণ মনোযোগ দিতেই জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ছুটি নিয়েছেন বিরাট কোহলি। মূল কারনটা তিনিই ভাল বলতে পারেন। ২৩ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করা একজন তারকাকে তো রান করার উপায় বাতলে দিতে হয় না।
একজন নিরপেক্ষ ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে দিল্লীর ছেলে বিরাটের এমন রূপ দেখতে চায় না কেউ। আবারো কোহলির ব্যাটে রান ফোয়ারা দেখতেই সবার যত আগ্রহ; তিনি নিজেও হয়তো উন্মুখ হয়ে আছেন একটা বড় ইনিংসের জন্য।
সামনের এশিয়া কাপ কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়তো জ্বলে উঠবেন বিরাট কোহলি। বড় মঞ্চে স্বরূপে আবির্ভূত হওয়ার মন্ত্র ভালো ভাবেই জানা আছে তাঁর।