‘নায়ক’ শব্দটা দ্রুত পরিবর্তনশীল

আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই স্পোর্টস মানুষ দেখেই অনিশ্চয়তার জন্য। ফুটবল হয়তো এদিক থেকে আরো সুন্দর, ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড আপনার বিপক্ষে গেলেও আপনি ভিলেন হয়ে যেতে পারেন।

রবার্তো ব্যাজিওর গল্প তো সবারই জানা, ৯৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে পেনাল্টি মারেন পোস্টের ওপর দিয়ে। তাঁর আগ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিশ্বকাপের নায়ক। এই নায়ক শব্দটা অতীব দ্রুত পরিবর্তনশীল। সেই বিশ্বকাপে নায়কের চেয়ারে বসেছিলেন রোমারিও। এই ফুটবলারকে নিয়ে খোদ ব্রাজিল সমর্থকরাই এখন তেমন একটা আলোচনা করেন না। কারণ তার পরে এসেছেন রোনালদো, রোনালদিনহো।

ক্রীড়া সাংবাদিক, লেখক বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে একটা দায়িত্ব তো থাকেই। সেটার অনেকগুলো ধাপের মধ্যে এটা মানুষের ভুল ভাঙানো। বা মানুষকে জানানোর চেষ্টা করা।

যেমন এখানে কোহলির ব্যাটিং নিয়ে কিছু কথা বলবো। বিরাট কোহলি শেষ সেঞ্চুরি করেছেন ১৭ ম্যাচ আগে।
২০১৯ সালে। এরপর ক্রিকেট বন্ধ থাকুক আর যাই থাকুক। ২ বছর সেঞ্চুরি না পাওয়া কোহলির সাথে যায়না এটুকু নিশ্চিত! কোহলি নিজেও সেটা মানবেন।

কিন্তু, সেঞ্চুরি করা আর না করার ফারাক খুবই ছোট। কোহলির শেষ পাঁচটা ওয়ানডে ইনিংস- ৭, ৬৬, ৫৬, ৬৩, ৮৯! তার আগের পাঁচটটা- ৯, ১৫, ৫১, ৮৯, ৭৮! অন্তত তিনটা সেঞ্চুরি এখানে হতে পারতো। কিন্তু, হয়নি এটাই পার্থক্য।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার শেষ দশটা ইনিংস শুনলে আরো অবাক হবেন- ৯, ৫৭, ৮০*, ১, ৭৭*, ৭৩*, ০, ৮৫, ৪০, ৯।
নয় দিয়ে শুরু নয় দিয়ে শেষ এর মাঝেই ৫ টা ফিফটি! কোহলি খারাপ খেলছে এটা আপনার আমার ধারণা হতে পারে। কিন্তু সত্য ভিন্ন।

বিরাট কোহলি, যত ভালো ব্যাটসম্যান তত ভালো অধিনায়ক নন, এটা সত্য। কোহলি তাঁর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় টিম ইন্ডিয়ার ফাইটিং স্পিরিটটা এবারে তুলে ধরতে পারেননি এটাও সত্য, এবং প্রমাণিত। তাতে ক্রিকেটার কোহলি এক বিন্দুও ছোট হয় না। এতে কেবলই কোহলি যে ভালো ম্যানেজার না সেটাই প্রমাণিত হয়।

আর এখন অধিনায়ক বলে তার দিকে আঙুলটাও উঠবে এটাই স্বাভাবিক, কোহলিও তা অকপটে মেনে নিতে পারেন। কারণ এটাই কোহলির বিশালত্ব। মানুষ যত বড় হয় তত সহজে ভুল স্বীকার করে তত সহজে পরাজয়ের পর মাঠ ছাড়ে, তার পরের দিন আবারও খেলতে হবে।

আপনার আমার মতোই, যেমন আমরা কাজে ব্যর্থ হই, মাঝেমধ্যেই হয়ে ওঠে না, কখনো কখনো সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে চারিপাশ! তেমনই। তাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলও নিজেদের মাটিতে সাত গোল খায়, বিশ্বের সেরা ফুটবলার মেসি একটা পেনাল্টির আফসোসে পোড়েন পাঁচ বছর, রোনালদো নিজের ঘরের মাঠেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে পাঁচ গোল হজম করে ঠায় দাঁড়িয়ে দেখতে হয়।

এসবই স্পোর্টস, অনেক কিছু নিতে শেখায়, অনেক কিছু দিতে শেখায়, মানুষকে আরো মানুষ করে তোলে, আরো বেশি উপলব্ধি করায়। নাথিং ইজ টেকেন ফর গ্র্যান্টেড!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link