ভারতের জার্সিতে আর কখনও মাঠে নামবেন না বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা—এমন খবরই যেন কাঁপিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়াকে। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের ব্যাটিং কাণ্ডারি হয়ে থাকা এই দুই মহাতারকার ভবিষ্যৎ নাকি এক কলমে মুছে দিয়েছে বিসিসিআইয়ের নির্বাচক কমিটি। সিদ্ধান্তটা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন সামনে এখনো আড়াই বছরের পথ বাকি ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের।
মাত্র চৌদ্দ মাসের ব্যবধানে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন দুজনেই। ভক্তদের আশা ছিল অন্তত ওয়ানডের আঙিনায়, বিশেষ করে বিশ্বকাপে, একবার শেষবারের মতো জুটি হয়ে ফিরবেন এই দুই কিংবদন্তি। কিন্তু হঠাৎ করেই দিক পরিবর্তন করল বোর্ড। আফ্রিকার মাটিতে হতে যাওয়া ২০২৭ আসরের আগে তারা চাইছে নতুন রক্তকে গড়ে তুলতে, তৈরি করতে আগামী দিনের নেতৃত্ব।
তবে বোর্ড একেবারে দরজা বন্ধ করে দেয়নি। শর্ত বেঁধে দিয়েছে—যদি সত্যিই খেলতে চান পরের বিশ্বকাপে, আগে প্রমাণ দিতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটে। নামতে হবে ভারতের প্রধান ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট, বিজয় হাজারে ট্রফিতে। মুম্বাইয়ের হয়ে রোহিত, দিল্লীর হয়ে বিরাট—হয়তো আবার ব্যাট তুলে দাঁড়াতে হবে সেই অচেনা, ছোট ভেন্যুগুলোতে। সেখানেই ব্যাটের রানে বোর্ডকে বোঝাতে হবে, তারা এখনও ফুরিয়ে যাননি।
সাথে প্রমাণ দিতে হবে ফিটনেসেরও। কিন্তু, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে থেকে কি করে ফিটনসে নিয়ে কাজ করা যায়। প্রশ্ন আসতে পারে, এত শর্ত কেন? বোর্ডের যুক্তি—এখন সময় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার। ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে থাকা অভিজ্ঞদের বদলে তরুণদের দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ দিতে হবে। ফলে, এক যুগ ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের মুখ হয়ে থাকা বিরাট-রোহিত যুগ হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে ঠিক ২২ গজের বাইরেই।
২০২৩ বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান এখনো বলে দেয়, কেন এই সিদ্ধান্ত এত বিতর্কিত। সেই আসরে বিরাট কোহলি ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক—১১ ইনিংসে ৭৬৫ রান। রোহিত শর্মা ছিলেন দ্বিতীয়—৫৯৭ রান। তবুও আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।
আজ বোর্ডের এই নতুন নীতিতে ভেসে উঠছে সেই ছবিই—বিরাটের নীরব দৃষ্টি, রোহিতের চোখ আকাশের দিকে তাকানো, হয়তো সেই ছিল ভারতের নীল জার্সিতে তাদের শেষ অধ্যায়ের সূচনা। এবার হয়তো সত্যিই পর্দা নামছে ক্রিকেটের এক মহাকাব্যিক যুগের।