দুই মহীরুহ, দুই হতাশা আর ব্যর্থতা। ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই তারকা ক্রিকেটার। কিন্তু দু’জনেই ভাসছেন ব্যর্থতার সাগরে। ম্যাচের পর ম্যাচ ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না রোহিত শর্মা কিংবা বিরাট কোহলি। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) দু’জনই খেলে আসছেন ভিন্ন ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। কিন্তু এবারের আসরে দু’জনের পরিসংখ্যান গ্রাফটা প্রায় একই। দু’জনের নাম, প্রতিভা কিংবা পূর্ব পরিসংখ্যান বিচারে এক কথায় বলতে গেলে চরম হতাশাজনক।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের মালিক রোহিত শর্মা। এই তালিকায় তৃতীয় নামটি বিরাট কোহলির। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে বিরাটের গড়টাও পাহাড়সম উচ্চতায়। প্রায় ৫০ গড়ে টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন তিনি। এই দুই তারকা মিলে ভারতের হয়ে প্রায় দুইশোর বেশি ম্যাচে করেছেন ৬ হাজারের বেশি রান!
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে সফল এবং সেরা তারকার দুইজনই ভারতের। অভিজ্ঞতার দিক থেকেও দু’জনই বেশ এগিয়ে। কিন্তু সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না বিরাট-রোহিত জুটির।
আইপিএলের পঞ্চদশ আসরে প্রথম সাত ম্যাচ শেষে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এই দুই তারকা। সাত ম্যাচে বিরাটের সংগ্রহ প্রায় ২০ গড়ে ১১৯ রান। অপরদিকে, সমান সংখ্যক ম্যাচে ১৬.২৮ গড়ে রোহিত করেছেন ১১৪ রান। দু’জনেই এখন পর্যন্ত দেখা পাননি ফিফটির। আইপিএলের এই আসরের ‘সুপার ফ্লপ’ ক্রিকেটারদের তালিকা করলে অনায়াসে উপরের দিকে জায়গা করে নিবেন এই দুই ভারতীয় তারকা।
অধিনায়কত্ব থেকে আগেই সরে যাওয়ায় তুলনামূলক সমালোচনার ঝড়টা কম যাচ্ছে বিরাটের উপর। আবার তাঁর দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু আছে শক্ত অবস্থানে। অপরদিকে, অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টের প্রথম সাত ম্যাচেই হেরেছেন রোহিত। ব্যাট নিজের পারফরম্যান্সটাও উল্লেখযোগ্য নয়। অধিনায়ক হিসেবে চাপটা তাই বেশি, নিজের হতশ্রী পারফরম্যান্সে সেই চাপটা এখন পাহাড়সম। ট্রল আর সমালোচনার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছেন রোহিত।
২০১৬ আসরের পর থেকেই আইপিএলে সেরা ফর্মে নেই রোহিত শর্মা। গড় আর রানের পরিসংখ্যানটা সেটাই বলে। গেল পাঁচ আসরে কখনোই গড়টা ত্রিশ স্পর্শ করতে পারেনি রোহিতের! স্ট্রাইক রেটও ঘুরপাক খেয়েছে ১২৫-১২৭ এর মাঝেই। তবে বিরাটের পারফরম্যান্স সে তুলনায় বেশ ভাল। গেল আসর ধরে তিনি ফর্মহীনতায় ভুগছেন। গেল আসরে ২৯ গড়ে করেছিলেন ৪০৫ রান। গেল আসরে তিন ফিফটির দেখা পেলেও এই আসরে এখন পর্যন্ত ফিফটির খোঁজ পাননি তিনি।
জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের পর আইপিএলেও অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন বিরাট। তবুও নিজের চিরচেনা রূপে ফিরতে পারছেন না। রোহিতের দায়িত্ব অবশ্য বেড়েছে। জাতীয় দলে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক তিনি। আইপিএলের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হলেও বয়সের সাথে সাথে অধিনায়কত্বের চাপটাও স্পষ্ট। তাই সাবেক ক্রিকেটার সহ ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে বিরাটের মত রোহিতেরও উচিত আইপিএলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো।
একটা সময় ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানো দুই তারকাই এখন নিষ্প্রভ। ব্যাটে আগের সেই তেজটা আর নেই। ছন্দের দেখা পাচ্ছেন না কেউই। প্রশ্ন আছে অজস্র কিন্তু উত্তর নেই। উত্তরের খোজ করছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু মিলছে না। ব্যর্থতা এমনি। ব্যর্থতার গ্যাঁড়াকলে একবার পিষ্ট হলে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা অনেক কঠিন।
সফলতার রঙিন পথটা মাড়াচ্ছেন দীর্ঘসময়। সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিলেও হোঁচট খাননি। দু’জনই ছিলেন অদম্য। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দু’জনেই নিজেদের হারিয়ে খুঁজছেন। ফর্মে না ফিরতে পারার কষ্ট কিংবা হতাশা হয়ত মনে চেপে রেখেছেন কিন্তু চেহারায় হতাশার ছাপটা লুকাতে পারেননি।
ম্যাচের পর ম্যাচ প্রহর গুনেছেন। সাধনা করছেন। কিন্তু সফলতা আর ধরা দিচ্ছে না। ক্যারিয়ারে খারাপ সময় আসাটা স্বাভাবিক। কোনো মানুষের জীবন এক গতিতে চলতে পারে না। জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। সেখানে ক্রিকেট তো এক অনিশ্চয়তার খেলা। মূহুর্তেই পাল্টে যেতে পারে ক্যারিয়ারের চিত্র। শূন্য থেকে যেমন এক ম্যাচের ব্যবধানে নায়ক বনে যেতে পারেন তেমনি নায়ক থেকে শূন্যে নামতেও লাগে না সময়।
তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা যেখানে ভারতীয় ক্রিকেটকে দেখাচ্ছেন আশার আলো। ঠিক তার উলটোপথে হাটছেন বিরাট-রোহিত। তাঁদের সাম্প্রতিক ফর্ম যেন ভারতের জন্য বড় দুশ্চিন্তা। মাস কয়েক বাদেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। গেল বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর সমালোচনার রেশটা এখন অবধি আছে। তার মধ্যে রোহিত-বিরাটের এমন ফর্ম ভারতের জন্য নি:সন্দেহেই দুশ্চিন্তার কারণ।