ইমার্জিং এশিয়া কাপকে বলা যেতে পারে উদীয়মান ক্রিকেটারদের পারফর্ম করার একটা মঞ্চ। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় হয়ে যাওয়া আসরটাতে বাংলাদেশ দলের সত্যিকারের উদীয়মান ক্রিকেটাররা কি আদৌতে সুযোগটা পেলেন?
বাস্তবতা বলছে, অভিজ্ঞদের জায়গা করে দিতে গিয়ে, দলে থাকা পারভেজ হোসেন ইমন, শাহাদাত হোসেন দিপু, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির মতো তরুণ ক্রিকেটাররা উপেক্ষিতই থেকে গেলেন।
ইমার্জিং এশিয়া কাপের শুরুটা ঠিক ১০ বছর আগে, ২০১৩ সালে। এখন পর্যন্ত ৫ টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবারেরটা বাদ দিয়ে আগের ৪ টি আসরই ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ বয়সীদের টুর্নামেন্ট।
মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সালে প্রথম যেবার এ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলো, সেবারও বাংলাদেশ দলে ছিলেন সৌম্য সরকার। ১০ বাদে, সেই তরুণ ক্রিকেটারদের টুর্নামেন্টেই আবারো দেখা মিললো ত্রিশ পেরোনো সৌম্যর।
না। ত্রিশ পেরোনো সৌম্যর এ টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাংলাদেশ এবার যে দলটা পাঠিয়েছিল, সেটি ছিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল। কিভাবে? স্কোয়াডের ৮ জনেরই ছিল টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা।
অথচ ইমার্জিং এশিয়া কাপকে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রবেশের সেতুপথই ভাবা হয়। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশ যে দল পাঠিয়েছে, তার সিংহভাগ সদস্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে পরিচিত।
সৌম্য সরকার শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলেননি, খেলেছেন ৫ টি আইসিসি টুর্নামেন্ট। নাইম শেখ সর্বশেষ আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও দলে ছিলেন।
খেলেছেন একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও। আর এই দুই ব্যাটারকে জায়গা দিতে গিয়ে একাদশে ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন শাহাদাত হোসেন দিপু আর পারভেজ হোসেন ইমন। টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচেও সুযোগ মেলেনি তাদের।
ইমার্জিং এশিয়া কাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষে দুই টেস্টের একটিতে ফিফটি করেছিলেন দিপু। সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও দেখিয়েছিলেন নিজের ব্যাটিং প্রতিভা। কিন্তু নিজের এ ফর্মটা তুলের ধরার মঞ্চটাই পেলেন না তরুণ এ ব্যাটার।
একই ভাবে, পারভেজ হোসেন ইমনও বিগত বছর গুলোতে ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। বিপিএলে ৪২ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের সক্ষমতার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। কিন্তু নাইম শেখকে জায়গা করে দিতে গিয়ে দলের সফরসঙ্গীই রয়ে গেলেন এ ব্যাটার।
সর্বশেষ বিপিএলে দারুণ বোলিং করেছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। তার সুবাদে আবুধাবি টি-টেন এ দলও পেয়েছিলেন। বোলিংয়ের পাশাপাশি তিনি টুকটাক ব্যাটিংও করতে পারেন। কিন্তু টিম কম্বিনেশনের কারণে তরুণ এ ক্রিকেটার একটি ম্যাচেও সুযোগ পাননি।
ইমার্জিং এশিয়া কাপ শেষে পাকিস্তান পেল তৈয়ব তাহিরের মতো ব্যাটার আর আরশাদ ইকবালের মতো বোলার। ভারতের প্রাপ্তিটাও কম নয়। গত বছর যুব বিশ্বকাপে তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইয়াশ ঢুলের নেতৃত্বে। এবার ভারত এ দল সামলালেন তিনিই। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি।
কিন্তু ভারতের তরুণ এ দল থেকে বেরিয়ে আসলো বেশ কিছু প্রতিভা। ইয়াশ ঢুল নিজে হয়েছেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার। ২৩৪ রান করেছেন। এরপরের অবস্থানটাও একজন ভারতীয় ব্যাটারের। তিনি অভিষেক শর্মা। ২২১ রান করেছেন বাঁহাতি এ ব্যাটার।
বোলিংয়ে দারুণ আধিপত্য দেখিয়েছে ভারতের তরুণ বোলাররা। সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী প্রথম তিনজনই ভারতের। সর্বোচ্চ ১১ টি উইকেট নিয়েছেন নিশান্ত সিন্ধু।
অথচ সেরা ১০ ব্যাটার কিংবা বোলিংয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন শুধু একজন। ব্যাটিংয়ে তো কেউ নেই। ৯ উইকেট নিয়ে সেরা ১০ বোলারের মধ্যে রয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব।
প্রশ্নটা হচ্ছে, তরুণদের এ টুর্নামেন্টে তাহলে বাংলাদেশের প্রাপ্তিটা কোথায়? ৪ ম্যাচে নাইম শেখ ১২৫ করেছেন। নেই একটা ফিফটিও। ৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা সৌম্য করেছেন ৯৫। যে দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের জন্য আবার সুযোগই পেলেন না, দিপু আর পারভেজ হোসেন ইমন।
মূলত কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহের চাওয়াতেই দলভূক্ত হয়েছিলেন সৌম্য, এটা ‘ওপেন সিক্রেট’ই বটে। একই ভাবে বিকল্প ওপেনার হিসেবে নাইম শেখকেও পরখ করে নেওয়ার লক্ষ্যেই দলে ভেড়ানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্নের উদয় হয় এখানেই।
নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টের প্রস্তুতির লক্ষ্যে এমন পদক্ষেপ তরুণদের পারফর্ম করার পথটা এতে বাধাগ্রস্ত হলো না? এ প্রশ্নের আপাতত কোনো উত্তর নেই। বড়জোর প্রাপ্তিশূন্য একটা আসরের খেরোখাতায় অঙ্কন করা যায়।