বিপিএলে নাম আছে, কিন্তু মান!

হরভজন সিং চট্টগ্রামের হয়ে বিপিএল খেলতে আসবেন এমন একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ভারতের সাবেক এই স্পিনারের সাথে কথাবার্তাও বলেছে চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজি। এটিই নাকি এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় খবর। বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম বড় তারকা। অথচ এই স্পিনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই খেলছেন না বছর পাঁচেক ধরে। আইপিএলেও বোলিং একেবারেই সাদামাটা। তবুও শুধু নামের পিছনে ছুটে চলা, আদতে বিপিএলে ক্রিকেটের মান কতটুকু বাড়ছে?

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে হরভজন অন্যতম সফল স্পিনার তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেশটির হয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই বিশ্বকাপই জিতেছেন। তবে এসবকিছুই যে অতীত সেটা কী আমরা বুঝতে পারি? এই স্পিনার ভারতের হয়ে খেলছেন না লম্বা সময়, বিসিসিআইয়ের চুক্তিতেও আর নেই। এবছর আইপিএলে সাকিব আল হাসানের সতীর্থ ছিলেন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিন ম্যাচ খেলে ছিলেন উইকেট শূন্য। এমনকি শেষ ম্যাচে রান দিয়েছেন ৩৮। বোলিংয়ে নেই আগের সেই ধাঁর। আর থাকবেই বা কেনো, ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা যে পিছনে ফেলে এসেছেন অনেক আগেই। সেটা হরভজন সিং নিজেও বুঝেন, তাইতো এখন সিনেমায় অভিনয় করতেও দেখা যায় তাঁকে। তবে বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো সেটা বোঝে? ‍শুধু নামের ভারে কী ক্রিকেট খেলা হয়?

ভারতের ক্রিকেটারদের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার অনুমতি নেই। ফলে ভারতের কোন ক্রিকেটার বিপিএলে খেলতে আসেন না স্বাভাবিক ভাবেই। তাই হরভজন সিং এর মত বড় নাম বিপিএলে আসলে অনেক হৈচৈ হবে হয়তো। বিজ্ঞাপন বাজারও হয়তো খানিক গরম হবে। তবে এই মানের বিপিএল দিয়ে কী আদৌ আমরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার পাবো? আসলেই কী বদলাবে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চেহারা?

সমস্যাটা যে শুধু এবছরের তা না। আমরা কখনোই বিশ্বের নামী ক্রিকেটারদের তাঁদের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আনতে পারিনা। এরমধ্যে ব্যতিক্রম হিসেবে একবার স্মিথ, ওয়ার্নাররা খেলতে এসেছিলেন। এছাড়া বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের মধ্যে গেইল, আফ্রিদিরা এসেছেন। তবে তালিকাটা এই কয়েকজনেই সীমিত। হরভজন সিং বাদে এবার ক্রিস গেইলকেও আনার কথা। অথচ ক্যারিয়ারের একদম শেষ সময়ে এই ব্যাটসম্যান। এবার পাকিস্তান সুপার লিগেও (পিএসএল) দল পাননি তিনি।

এখন প্রশ্ন আসে আমাদের আসলে সমস্যাটা কোথায়? প্রথমেই প্রশ্ন উঠতে পারে সেরা ক্রিকেটারদের আনার মত টাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলো খরচ করতে পারে কিনা। অনেকের ধারণা টাকার জন্য বড় মাপের ক্রিকেটারদের আনা সম্ভব হয় না। বিষয়টা আসলে পুরোপুরি সত্য না। মূল সমস্যা হলো পেশাদারিত্ব ও অ্যাপ্রোচে।

এখন মোটামুটি অনেক দেশেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হয়। ফলে বড় মাপের ক্রিকেটাররা কোন লিগে কখন খেলবেন সেটার একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করে ফেলতে চান। অথচ আমাদের বিপিএলের নির্দিষ্ট কোন ক্যালেন্ডারই নেই। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোরও তো আসলে কোন নিশ্চয়তা নেই। পরের বছর তাঁদের দল থাকবে কিনা সেটাও অনিশ্চিত। ফলে ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোও লম্বা সময়ের জন্য কোন পরিকল্পনা করেনা। যেনো শুধু একটা লিগ আয়োজন করতে হবে বলেই আয়োজন করা, আর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য অংশগ্রহণ করতে হবে বলেই অংশগ্রহণ করা।

নেই কোন পেশাদারিত্ব, নেই লম্বা পরিকল্পনা। এমনকি বিদেশি ক্রিকেটারদের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করাও হয় না। এবছর মঈন আলীর খেলতে আসার কথা। অথচ জানা যায় তিনি আসছেন বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটারের অনুরোধে। ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আলোচনা করা, ক্রিকেটারদের সাথে যোগযোগ করা সেসবের কোন বালাই নেই। ফলে আগামীবছর মঈন আলী আসবেন কিনা তাঁর কোন নিশ্চয়তাও থাকছেনা। অবশ্য আগামীবার বিপিএল হবে কিনা, হলে কখন হবে কিংবা এই ফ্র্যাঞ্চাইজি আদৌ থাকবে কিনা এসবেরই বা নিশ্চয়তা কী?

ফলে মূল দায়টা আসলে বিসিবির উপরই বর্তায়। এতবছর ধরে আয়োজন করেও বিপিএলকে এখনো একটি পেশাদার কাঠামো দেয়া যায়নি। শুধু আয়োজন করার জন্যই যেনো করে যাওয়া হচ্ছে। বেরিয়ে আসছে না কোন প্রতিভাবান ক্রিকেটারও। আমাদের তাই বুড়িয়ে যাওয়া হরভজনরাই ভরসা। অথচ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট লিগ গুলোতেও  দেখা যাচ্ছে তারকার ছড়াছড়ি, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের রমরমা আসর।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link