সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমের এই যুগে একটা বিষয় হয়েছে। সম্পর্কের অবনতির একটা উদাহরণ হিসেবে আন ফলো করা কিংবা ব্লক করে দেওয়া একটা মানদণ্ডে পরিণত হয়েছে। এই যে ভারতীয় ক্রিকেট অঙ্গনে একটা গুঞ্জন রটে গেছে। রবীন্দ্র জাদেজার সাথে সম্পর্কের ইতি ঘটতে চলেছে চেন্নাই সুপার কিংসের। এই গুঞ্জনের স্ফুলিঙ্গর দেখা মিলেছে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেই।
ইন্সটাগ্রামে দুই পক্ষই আন ফলোর আশ্রয় নিয়েছে। এতেই যেন দানা বাঁধতে শুরু করেছে নতুন এক গুঞ্জন। তবে কি এবারই শেষ হয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্র জাদেজার সাথে চেন্নাই সুপার কিংসের বহু বছরের এক বন্ধন। সেই প্রথম আসরে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল যাত্রা শুরু করেছিলেন তরুণ অনভিজ্ঞ এক অল-রাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা। এরপর তাঁর ঠাঁই হয় চেন্নাই ডেরায়।
দীর্ঘ একটা সময় জাদেজা পার করেছেন হলুদ জার্সিতে। একজন সাদামাটা সম্ভাবনাময় তরুণ থেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার এই পুরো যাত্রাতেই জাদেজার সঙ্গী ছিল চেন্নাই সুপার কিংস। সম্পর্কটা আরও একটু দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা ছিল নিশ্চয়ই। তাইতো প্রায় ১৬ কোটির রুপির বিনিময়ে তাঁকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবেই রিটেইন করেছিল চেন্নাই।
এবারের আইপিএলের মেগা নিলামের আগে সর্বোচ্চ চারটি করে খেলোয়াড় রিটেইন করার সুযোগ ছিল ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর। অর্থাৎ চেন্নাই ও জাদেজার পরিকল্পনায় খুব সহসাই বিচ্ছেদ লেখা ছিল না। তাঁর আরেকটা প্রমাণ হয়ত মিলতে পারে এবারের আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়কের দায়িত্ব জাদেজার কাঁধে তুলে দেওয়া। আর এই পরিকল্পনাও নিশ্চয়ই হুট করে করা হয়নি।
তবে মাঠের ক্রিকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে খুব একটা প্রস্তুত মনে হয়নি। বরং অধিকাংশ সময়ই দেখা গেছে মহেন্দ্র সিং ধোনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের মত করে। আর জাদেজাকে দেখা গিয়েছে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে। সেটার পেছনে অবশ্য একটা ভিন্ন একটা কারণ রয়েছে। জাদেজা একজন দূর্দান্ত ফিল্ডার। তবে অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে বড্ড বেশি বিহ্বল মনে হয়েছে।
ভারতের সাবেক প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী বলেছেন, ‘সে কোথাও অধিনায়কত্ব করেনি, তাঁকে দেখে মনে হয়েছে জলের বাইরে থাকা কোন মাছ।’ অর্থাৎ রবীন্দ্র জাদেজার অধিনায়কত্বের গাফিলতি কিংবা দূর্বলতা ছিল একেবারেই স্পষ্ট। প্রথম দশ ম্যাচে হারের পাল্লাটা ভারি ছিল চার বারের চ্যাম্পিয়নদের। তবে এটাও সত্য দলে যখন মহেন্দ্র সিং ধোনির মত একজন সফল অধিনায়ক থাকেন তখন আসলে নতুন কারও নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ কম।
তাছাড়া এটাও স্পষ্ট যে চেন্নাই ম্যানেজমেন্ট অনেকটা বেশি নির্ভরশীল মহেন্দ্র সিং ধোনির উপর। তাঁরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেননি জাদেজার উপর। নতুন একজন অধিনায়ক এসেই যে একটা চ্যাম্পিয়ন দলকে আবারও চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দেবেন একেবারে শুরুতেই তাও সম্ভব নয়। অতএব জাদেজার উপর আস্থা রেখে আরেকটু সময় তাঁকে নিশ্চয়ই দেওয়া যেত। তবে সেটা আর তিনি পেলেন না।
তবে অধিনায়কের দায়িত্ব যেন রীতিমত জাদেজার জন্যে বোঝায় পরিণত হয়েছিল। অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকেই জাদেজা যেন ফিরেছিলেন নিজের স্বরুপে। ব্যাটে রান পাওয়ার পাশাপাশি বল হাতেও পারফরম করতে শুরু করেছিলেন তিনি। তবে সেখানটায়ও বাঁধ সাধে ইনজুরি। ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে তিনি ছিটকে যান আইপিএল থেকে।
আর এরপরই আসলে সম্পর্কে অবণতি লোকসম্মুখে আসতে শুরু করে। তবে এও গুঞ্জন ছিল যে সম্পর্কে অবণতির শুরু হয়েছে আরও আগে থেকেই। মূলত তাঁকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয় তখন থেকেই সম্পর্কের অবণতি। তারপরও তিনি বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছেন চেন্নাইয়ের হয়ে। জাদেজা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট বিন্দুমাত্র বুঝতে দেয়নি কাওকেই। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত এই আসরেই হয়ত শেষ।
একটা স্বর্ণালী সময়ের অবসান হচ্ছে। চেন্নাই সুপার কিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাশি বিশ্বনাথান বলেছেন যে ইনজুরি ছাড়া আর কোন কারণ নেই জাদেজার দল থেকে বাদ পড়ার পিছনে। তবে তিনি এও বলেন যে জাদেজাকে আবারও অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়াটা হবে খানিকটা বিস্ময়কর ব্যপার। যেখানে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের মত তরুণরা ক্রমাগত পরিপক্ক হচ্ছেন। এ থেকেই আভাসটা জোরালো হয় যে জাদেজা হয়ত থাকবেন না চেন্নাইয়ে।
অধিনায়কত্ব নিয়ে এমন দোলাচল নিশ্চয়ই জাদেজার মত একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার খুব হালকাভাবে মেনে নেবেন না। তিনি হয়ত বিষয়টা অপমানিত হওয়ার মত একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। আর সেটা সত্যি হলে জাদেজার দল ছাড়া সুনিশ্চিত। তাঁকে দলে নিতে নিশ্চয়ই আগ্রহের কমতি নেই বাকি থাকা ফ্রাঞ্চাইজি গুলোর। শেষ পরিণতি কি হয় তা হয়ত বলে দেবে সময়।