ইয়াসির ও মিউজিক্যাল চেয়ার

অপেক্ষাই যেন তাঁর জীবনের নিত্য সঙ্গী। এই অপেক্ষাই ইয়াসির আলী রাব্বির জীবনের একমাত্র সত্য। প্রায় বছর তিনেকের অপেক্ষার পর জাতীয় দলে অভিষেক। অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭২ বলে ৩৬ রানের অপরাজিত ইনিংস। এই সংখ্যা দিয়ে আসলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ইনিংসটার গুরুত্ব বোঝানে যাচ্ছেনা।

চট্টগ্রামে রাব্বির এই ইনিংসে ভর করেই ম্যাচটা বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে হঠাতই এক বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেলেন। এরপর আর মাঠেই নামতে পারলেন না রাব্বি। তনে নিজের অভিষেক ম্যাচেই সেই ৭২ বলের ইনিংসটা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল। নিখুঁত সেই ইনিংসটা একটা ভবিষ্যতের আশ্বাস দিচ্ছিল।

আমাদের চোখ যে চট্টগ্রামে ভুল দেখেনি তা প্রমাণ হতে বেশি সময় লাগলো না। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গিয়ে ৫৫ রানের লড়াকু ইনিংস। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে রাব্বি তাঁর আগমনটা জানান দিলেন। তবে কখনো বাংলাদেশ তাঁকে নিশ্চয়তা দিয়ে একাদশে রাখেনি। ভালো করলেও বাদ পড়তে হতে পারে এমনটা জেনেই ছেলেটাকে মাঠে নামতে হয়। কেননা টেস্টে তিনি খেলেন সাকিব আল হাসানের জায়গায়। ফলে সাকিব যখন ফিরবেন তখন একাদশে রাব্বির জায়গা থাকবে তো?

বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাব্বি অনেক বড় সম্পদ হতে পারেন। তবে সেই সম্পদ ব্যবহার করার সঠিক পরিকল্পনা আমাদের আছে কী? ব্যাটসম্যান রাব্বি তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের হয়ে খেলার সামর্থ্য রাখেন। গত তিন মাসেই তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে তাঁর। তবে কোন ফরম্যাটেই তাঁকে নিয়ে কোন স্থায়ী পরিকল্পনা নেই।

অন্তত একটি ফরম্যাটে তাঁকে থিতু হওয়ার সময় দেয়া উচিত। তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ তাঁকে মাঠে নামিয়ে দিয়েছে বটে তবে কোন ফরম্যাটেই রাব্বিকে নিয়ে দলের যেন কোন মাথা ব্যাথাই নেই। কোন ফরম্যাটে খেলানো হচ্ছে সাকিবের জায়গায়, কখনো খেলানো হচ্ছে মিডল অর্ডারে, কখনো আবার স্লগার হিসেবে।

অথচ ইয়াসির আলী রাব্বি ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পারফর্মারদের একজন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৫০ গড়ে ব্যাটিং করেছেন। এরপর প্রায় তিন বছর ধরে জাতীয় দলের সাথে আছেন। এরমাঝে অনেক ক্রিকেটারই জাতীয় দলে এসেছেন আবার চলে গিয়েছেন। তবুও রাব্বিকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার আগ্রহটা দেখাচ্ছেনা বাংলাদেশ।

যেমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে অভিষেক হলো। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান রাব্বিকে এই ম্যাচে দেয়া হলো স্লগারের রোল। সাত নাম্বারে রাব্বি যখন নেমেছেন তখন তেমন কিছুই আর করার ছিল না।

তবে তারচেয়েও বড় প্রশ্ন রাব্বি কিছু করলেও কী পরের ম্যাচে তাঁকে একাদশে রাখা হতো? কেননা টি-টোয়েন্টি একাদশে রাব্বি জায়গা দেয়া হয়েছে আবার মুশফিকের জায়গায়। আঙুলে চোট পেয়ে মুশি প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে আবার তিনি একাদশে ফিরেছেন। আর তিনি ফিরেছেন সেই ইয়াসির আলী রাব্বির জায়গায়ই। ফলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে মাত্র একটা সুযোগ পেয়েই বাদ পড়ে গেলেন রাব্বি।

ফলে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই তাঁকে নিয়ে যেন ছেলেখেলা হচ্ছে। তাঁর জন্য নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই। এরমধ্যে ওয়ানডে ফরম্যাটটায় তবুও টানা তিনটি সুযোগ দেয়া হয়েছে। যদিও এর মধ্যে এক ম্যাচে ব্যাটিং করেননি। তবুও কারো না খেলাতে কিংবা কারো ইনজুরিতে যখনই রাব্বি সুযোগ পাবে নিজেকে প্রমাণ করে যাক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link