ফুটবল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বেছে নেয়ার অপেক্ষা ফুরোলো বলে! বাকি রয়েছে কেবল তিন ম্যাচ। ৩২ দল নিয়ে শুরু হওয়া টুর্নামেন্টে এখন টিকে আছে মোটে চারটি দল। আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, মরক্কো – এই চারদলের একটি পড়বে এবারের বিশ্বকাপের জয়ের বরমাল্য।
এই চারটি দলই নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের শেষ চারে। গোটা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্লাবে খেলা ফুটবলারদের এক সুতোয় গেঁথে দল সাজিয়েছেন কোচেরা। বিশ্বকাপে এখনও টিকে আছেন বায়ার্ন মিউনিখ থেকে সর্বোচ্চ ছয়জন ফুটবলার। অন্যদিকে দুই স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ এবং সেভিয়া থেকে আছেন পাঁচজন করে ফুটবলার।
- বায়ার্ন মিউনিখ – জার্মানি
জার্মান ফুটবল জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের সর্বোচ্চ ছয়জন ফুটবলার রয়েছেন ফাইনালের দৌড়ে। এর মাঝে চারজনই খেলেন বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের হয়ে। দিদিয়ের দেশমের রক্ষণের দুই স্তম্ভ সেন্টারব্যাক দায়োট উপামেকানো, রাইটব্যাক বেঞ্জামিন পাভার্ড ক্লাব ফুটবলে খেলেন বাভারিয়ানদের হয়ে।
ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া লেফটব্যাক লুকাস হার্নান্দেজও বায়ার্ন এবং ফ্রান্স একাদশের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এছাড়া আক্রমণ ভাগে লেফট উইঙ্গার কিংসলে কোম্যানও খেলেন বায়ার্নের জার্সিতে। তবে শুরুর একাদশে নয়, দেশম তাঁকে ব্যবহার করছেন বদলি ফুটবলার হিসেবে।
ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডার জোসেফ স্ট্যানিসিচের ক্লাবও বায়ার্ন। বায়ার্নের বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা তরুণ এই ডিফেন্ডার অবশ্য এবারের বিশ্বকাপে এখনও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। মূলত ভবিষ্যতের দল গড়ার লক্ষ্যেই তাঁকে কাতার নিয়ে এসেছেন ক্রোয়াৎ কোচ জলাৎকা দালিচ।
মরক্কোর সেমিতে ওঠার ঐতিহাসিক যাত্রার পেছনে মূল অবদান তাঁদের রক্ষণ ভাগের। গোটা টুর্নামেন্টে এক আত্নঘাতি গোল ছাড়া তাঁদের জালে বল পাঠাতে পারেনি কোনো দলই। মরক্কো রক্ষণের অন্যতম মূল ভরসা নৌসায়ের মাজরাউই ক্লাব ফুটবলে খেলেন বায়ার্নের হয়ে। কেবল রক্ষণ সামলানো নয়, আক্রমণে ভূমিকা রাখতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এবারের মৌসুমেই আয়াক্স থেকে বায়ার্নে নাম লেখান মরক্কোর এই তারকা।
- অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ – স্পেন
ক্লাবের জার্সিতে মৌসুমটা ভাল না কাটলেও বিশ্বকাপে ঠিকই দারুণ সময় কাটাচ্ছেন স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের ফুটবলাররা। আর্জেন্টিনা দলেই আছেন অ্যাতলেটিকোর তিন ফুটবলার। মিডফিল্ডার আনহেল কোরেয়া এবং রদ্রিগো ডি পলের পাশাপাশি লিওনেল স্কালোনির স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছেন রাইটব্যাক নাহুয়েল মলিনা। কোরেয়া প্রথম একাদশে জায়গা না পেলেও মলিনা এবং ডি পল আর্জেন্টিনার একাদশের নিয়মিত মুখ।
এছাড়া তাঁদের মূল তারকা আতোয়ানে গ্রিজম্যান এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের মূল তারকাদের একজন। এমবাপ্পে এবং জিরুডকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণ ভাগ। ফ্রান্সের প্রতিটা আক্রমণের সূচনা ঘটে তাঁর পা থেকেই। এছাড়া ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক ইভো গ্রোভিচ ক্লাব ফুটবলে খেলে থাকেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে।
- সেভিয়া – স্পেন
বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদকে ছাপিয়ে তৃতীয় স্থানে সেভিয়ার নাম দেখে চমকে উঠতে পারেন অনেকেই। কিন্তু অবাক হলেও সত্যি সেভিয়ার পাঁচজন ফুটবলার এখনও টিকে আছেন বিশ্বকাপ জেতার দৌড়ে। মরক্কোর সেমিতে ওঠার পেছনের দুই মূল নায়ক গোলরক্ষক বোনো এবং ইউসেফ এন নেসরি দুজনেই খেলে থাকেন সেভিয়ার।
বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বোনোকে পরাস্ত করতে পারেননি কেউই, এমনকি স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারেও ক্লিনশিট রাখেন এই তারকা। অন্যদিকে, পর্তুগালের বিপক্ষে জয় সূচক গোল করে গোটা মরক্কোবাসীকে উল্লাসে ভাসিয়েছেন ইউসেফ এন নেসরি। তিন গোল করে বিশ্বকাপে মরক্কোর ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি।
এই দুজন ছাড়াও আর্জেন্টিনার স্কোয়াডের তিনজন ফুটবলার খেলে থাকেন সেভিয়ার হয়ে। তাঁরা হলেন লেফটব্যাক মার্কাস আকুনা, মিডফিল্ডার পাপু গোমেজ এবং রাইটব্যাক গঞ্জালো মন্টিয়েল। এর মাঝে আকুনা বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচেই মাঠে নেমেছেন। যদিও হলুদ কার্ডের খড়গে খেলতে পারবেন না সেমিফাইনালে। অন্যদিকে, পাপু গোমেজ এবং মন্টিয়েলকে সুপারসাব হিসেবে খেলাতেই বেশি পছন্দ স্কালোনির।