কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাদ শুরুর সময় থেকেই ক্রিকেটসহ যাবতীয় সব খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জীবনযাত্রাই যেখানে তার স্বাভাবিকতা হারিয়েছিল, সেখানে খেলাধুলার জগৎ স্বাভাবিক থাকে। তবে, সব কিছুর মত কালক্রমে আগের অবস্থানে ফিরতে শুরু করেছে ক্রীড়াবিশ্ব।
দীর্ঘদিন পর অবশ্য বায়ো-বাবল প্রটোকল মেনে খেলাটাকে মাঠে ফেরানো হয়েছে, কিন্তু সবার মনে এখনও একটা প্রশ্ন ঠিকই রয়ে গেছে- কোভিডজনিত কারণে খেলাধুলার ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ ঠিক কতটা? এই প্রশ্নের অনুসন্ধানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘medRxiv’ নামক একটি হেলথ সাইন্সের একটি প্রি-প্রিন্ট সার্ভার!
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, গবেষকেরা মোট ১০ টি খেলার ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। পরীক্ষণে ৪০ মাইক্রোমিটার অব্দি ড্রপলেটের পরীক্ষা করা হয়েছে।
সেই গবেষণার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোভিডের জন্যে খেলাধুলার রিস্ক ফ্যাক্টর যতটা ভাবা হচ্ছিল, বাস্তবে আসলে রিস্ক ফ্যাক্টর মোটেও ততটা না। শুধু তাই না, রাগবি, ফুটবল বা রেসিংসহ অন্য খেলার তুলনায় ক্রিকেটে লাল বলে কোভিডের ঝুঁকি আরো কম।
আরো পড়ুন
লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সিনিয়র লেকচারার, ড. এমিলি অ্যাডামস বলেছেন, ‘টেনিস বল বা চামড়ার তৈরি কোন ক্রিকেট বলের পক্ষে আসলে কোন জীবন্ত ভাইরাস বহন করা সম্ভব না। তাই স্পোর্টস ইক্যুইপমেন্টের পক্ষে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা আসলে খুবই কম।’
এই গবেষণাতে সাদা আর লাল বলের মধ্যে কোনটি কোভিডের সংক্রমণে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এরকম একটি প্রশ্নেরও উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে (কারণ ক্রিকেটে তো এই দুই বলেই খেলা হয়)। এতে পাওয়া গেছে, লাল বলের তুলনায় কোভিড সংক্রমণের জন্যে সাদা বল উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবেদনে আছে, ‘সাদা আর লাল বলের দুটোই বোভাইন লেদারে তৈরি হলেও, এর সার্ফেসে ভিন্ন কোটিং ব্যাবহার করা হয় ( লাল বলের জন্যে সিনথেটিক গ্রিজ, সাদা বলের জন্যে নাইট্রোসেলুলোজ)। আর কোভিড ছড়ানোতে এই কোটিং এর পার্থক্যই লাল বলকে কম ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।’
ক্রিকেট ম্যাচে কোভিড ছড়ানোর দুটি সম্ভাবনা আছে। এক, খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে কোভিড ছড়াতে পারে আর দুই, খেলার সরঞ্জামের মাধ্যমে কোভিড ছড়াতে পারে। এই গবেষণাতে গবেষকেরা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন এই দুটির মধ্যে কোনটিতে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। আর তাতে উঠে এসেছে, সরঞ্জামের তুলনায় নিজেদের মধ্যে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি, ‘ক্রিকেট আর সকারের মত নন-কন্ট্যাক্ট স্পোর্টসে কোভিড ছড়ানোর মাত্রা আসলে খুবই কম’ – যেমনটা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে!
তবে ২০২০ সালে বোরিস জনসন দাবি করেছিলেন ক্রিকেট বল হল কোভিডের জন্যে ‘ন্যাচারাল ভেক্টর অব ডিজিজ’। আপাতত দৃষ্টিতে এই গবেষণাতে সেরকমটা অবশ্য মনে হচ্ছেনা।
তা যা হোক, এখন মাঠে তো খেলা ফিরেছে। ইউরোপের প্রথম সারির লিগগুলো খেলা হচ্ছে, নিয়মিতভাবে ক্রিকেট আয়োজন হচ্ছে। বায়ো-বাবল প্রটোকল মেনে নানা সিরিজ আয়োজন করা হচ্ছে। তবে, এই পৃথিবী দ্রুত সুস্থ আর স্বাভাবিক এটাই আমাদের চাওয়া।