পর্দার আড়ালে থাকা বিশ্বজয়ের যোদ্ধা

মাস দু’য়েক আগে লেখা হয়েছিল এক মহাকাব্য। মঞ্চায়ন হয়েছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত এক রুপকথার গল্পের। ৩৬ বছর ধরে করা অপেক্ষার অবসান। সেই সাথে প্রায় কুড়ি বছর ধরে দেখা স্বপ্নের একটা পরিসমাপ্তি। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মনের বাসনা পূরণ করে আর্জেন্টিনা জিতে নিয়েছিল বিশ্বকাপ শিরোপা। শেষ অবধি বিশ্বকাপের সেই স্বর্ণালী ট্রফিটি পেয়েছিল লিওনেল মেসির ছোঁয়া।

একটা আক্ষেপ ছিল মেসির জীবনে। ক্লাব পর্যায়ে প্রায় সব কিছু জেতা শেষ। ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিটাও পরিপূর্ণ। আক্ষেপটা ছিল কেবল একটা আন্তর্জাতিক শিরোপার। ২০২১ সালে ভাঙে যায় অদৃশ্য সে দেয়াল। মেসির হাতে ওঠে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ট্রফি। সেখান থেকেই শুরু। গোটা আর্জেন্টিনা দলটা হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। এরই ধারাবাহিকতায় শেষ অবধি বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের করেই ক্ষান্ত হয় আলবিসেলেস্তারা।

১৮ ডিসেম্বর যখন কাতারের বুকে আনন্দ-উল্লাসে মাতোয়ারা সবাই, ঠিক তখনই এক আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। বহুল আকাঙ্ক্ষিত কোন শিরোপা জয় নিশ্চিত রুপেই আবেগের সঞ্চার ঘটায়। তবে উদ্দীপনার স্নায়ুবিক গতি যখন আলোর গতিকে হার মানায় তখনই মেসিকে পরম মমতায় আলিঙ্গন করেন এক মধ্য বয়স্কা নারী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই নারীকে নিয়ে নানানরকম গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। কেউ বলছেন সেই নারী ছিলেন মেসির মা। আবার কারো কারো ভাষ্যমতে, তিনি ছিলেন কুন আগুয়েরোর মা। তবে তিনি আসলে ছিলেন না এদের কেউই। তাঁর ভিন্ন এক পরিচয় রয়েছে। তিনি খেলোয়াড়দের মধ্যে করো মা না হয়েও, পরম মমতায় আগলে রেখেছেন দলের সবাইকেই।

সেই নারীর নাম অ্যান্তোনিয়া ফারিয়াস। তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। না দলের সাথে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তবে দলের খেলোয়াড়দের ভীষণ পছন্দের এক মানুষ অ্যান্তোনিয়া ফারিয়াস। তিনি আর্জেন্টিনা দলের সাথে থাকে রন্ধনশিল্পীদের একজন। তিনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সাথে থাকা রাঁধুনিদের দলের প্রধান ডিয়েগো ইয়াকোভনের সাথে সরাসরি কাজ করে থাকেন।

আর্জেন্টিনার তথা মেসির প্রতিটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের সঙ্গী ছিলেন ফারিয়াস। ২০২১ কোপা আমেরিকা, ২০২২ ফিনালিসিমা ও ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ এই তিন শিরোপা জয়ে তাঁর অবদানও রয়েছে। কেননা তিনি খেলোয়াড়দের সুস্বাদু সব খাবার রান্না করে দিয়েছেন। তাঁর রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ আর্জেন্টিনা দলের সবাই।

মূলত প্রতিটি ম্যাচ জয়ের পর, যেকোন এক বেলা গোটা দল মুখরোচক কোন খাবার খাওয়ার সুযোগ পেত। আর ঠিক তখনই সুস্বাদু সব খাবার রান্না করে দিতেন অ্যান্তোনিয়া ফারিয়াস। তাইতো মেসি থেকে শুরু করে দলের বাকিদের কাছে তাঁর গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। আর এই সব সাফল্যেও তিনি সমান ভাগিদার। কেননা তিনিই তো খেলোয়াড়দের মন প্রফুল্ল রাখতে সহয়তা করে গেছেন পর্দার আড়ালে থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link