এক ওভারে তিন উইকেট! সেই তিনটা শিকারই আবার লেগ স্পিন ভেলকি দেখিয়ে। ৪ বলের ব্যবধানে রংপুরের ৩ ব্যাটারকে বোকাবনে পাঠিয়েছেন। সেই এক ওভার দিয়ে যেন আলোচনায় উঠে এসেছেন লঙ্কান লেগি দুশান হেমন্ত। হেমন্তের দেওয়া সেই আচমকা ধাক্কায় রংপুরের জয়ভাগ্য অবশ্য পাল্টায়নি। কিন্তু লাইমলাইটে ঠিকই চলে এসেছেন তিনি। কে এই অচেনা দুশান হেমন্ত?
শ্রীলঙ্কার হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ৫ টি। যার শুরুটা হয়েছিল ২০২৩ সালের এশিয়া কাপে। ইনজুরির কারণে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ছিটকে পড়ায় তাঁর জায়গায় দলে এসেছিলেন এই স্পিনার। অবশ্য বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও টুকটাক পারেন তিনি। স্বীকৃত ক্রিকেটে ৫ টা সেঞ্চুরি আছে তাঁর। তবে আলোচনায় এসেছেন নিজের বোলিং সত্ত্বা দিয়ে।
হেমন্তের বাবা সুজিত হেমন্ত নিজেও পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। কিন্তু কখনোই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তাঁর। তাঁর সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন ছেলে দুশান হেমন্ত। যার নেপথ্যেও ছিল বাবার ভূমিকা। কারণ হেমন্তের ক্রিকেটে হাতেখড়িটা যে তাঁর বাবার হাত ধরেই। ৯ বছর বয়সে অফস্পিনার হিসেবেই ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বাবা বদলে দিলেন সব কিছু।
বাবার পরামর্শে রিস্ট স্পিনার হয়ে উঠলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, এই ধারাবাহিকতায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও দ্যুতি ছড়াচ্ছেন বাবার দীক্ষায় লেগস্পিনার হয়ে ওঠা দুশান হেমন্ত।
হেমন্তের উত্থান স্কুল ক্রিকেট থেকে। সেন্ট পিটার্সের স্কুলে হয়ে টানা নেতৃত্ব দিয়েছেন বেশ কয়েকটি মৌসুম। অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স দিয়ে নজরও কেড়েছেন। ২০১১/১২ মৌসুমে ৬২ উইকেটের পাশাপাশি করেছিলেন ৫০০ এর বেশি রান। এরপরের মৌসুমে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন আগের মৌসুমের কীর্তিকেও। সেবার ব্যাট হাতে ৮৪০ রানের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৬০ উইকেট।
টানা দুই মৌসুমে এমন পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে দুশান হেমন্তের। মজার ব্যাপার, ততদিনে পেশাদার ক্রিকেটার বনে যাওয়া দুশান হেমন্ত তখন ক্রিকেটের পাশাপাশি অ্যাথলেটিক্সেও ছিলেন। বলাই বাহুল্য, স্বীকৃত ক্রিকেটে প্রবেশের আগে তিনি একজন দৌড়বিদ ছিলেন।
সাউথ এশিয়ান জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি একবারের মেডেলিস্টও ছিলেন। ১৫০০ মিটার দৌড়ের ইভেন্টে তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এমনকি ডাক পেয়েছিলেন ন্যাশনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক দলেও।
কিন্তু, ২০১০ সালে পাওয়া সেই ডাকটা কোনো একটা কারণে প্রত্যাখ্যান করে ফিরে এসেছিলেন ক্রিকেটে। সেই থেকে ক্রিকেটই হয়ে উঠেছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞ্যান। দুশান হেমন্ত যেভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে এরপর পারফর্ম করেছেন, তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পা পড়ে বেশ খানিকটা পরেই। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে এখনও তাঁর পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়নি।
কিন্তু, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলতে এসেই নজর কাড়লেন তিনি। ৯ বছর বয়সে তাঁকে তাঁর বাবা লেগস্পিনার হতে বলেছিলেন। সেই লেগস্পিন শৈলী দিয়ে বিপিএল আঙিনায় মুগ্ধতা ছড়ালেন তিনি। বাবা সুজিত হেমন্ত হয়তো এমন একটা দিনেরই অপেক্ষায় ছিলেন।