শচীন টেন্ডুলকার টু কোহলি। রেকর্ডের হাতবদল হলো। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটবদলও কি তবে হলো? ৪৯ তম সেঞ্চুরিতে শচীনকে ছুঁয়েছিলেন নিজের ৩৫ তম জন্মদিনে। এরপর ৪৯ থেকে ৫০-এ যেতে লাগল মাত্র ১০ দিন। ওয়ানডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির শ্রেষ্ঠত্বে তাই বিরাট কোহলিই এখন সবার উপরে।
৪৯টি শতক করতে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ৪৫১ ইনিংস। কোহলি সেটি ছুঁয়ে ফেলেছিলেন ২৭৭ ইনিংসেই। আর ৫০ সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছাতে তাঁর সময় লেগেছে ২৭৯ ইনিংস। কোহলির ৪৯ সেঞ্চুরির পরই টুইটারে শচীনে লিখেছিলেন, ‘৪৯ থেকে ৫০-এ আসতে আমার ৩৬৫ দিন লেগেছে। আশা করি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ৪৯ থেকে ৫০-এ গিয়ে তুমি আমার রেকর্ডটা ভেঙে দেবে।’
সেটাই করে দেখিয়েছেন কোহলি। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ৪৯ থেকে সেঞ্চুরির অর্ধশতকে পৌঁছেছেন তিনি। আর তাঁর সেঞ্চুরিতে দলও এখন রয়েছে ফাইনালের মঞ্চে, এক যুগের বিশ্বকাপ শিরোপাখরা কাটানোর দ্বারপ্রান্তে।
ভারতের হয়ে একবার বিশ্বকাপ জিতেছেন শচীন টেন্ডুলকার। ২০১১ বিশ্বকাপের শিরোপাজয়ী সে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন কোহলিও। এবার বিশ্বকাপ শিরোপার দিক দিয়ে তাই শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি কোহলির সামনে। কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপটা শিরোপা জয়ের উৎসবে শেষ করতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দিবে। তবে একদিনের ক্রিকেটে তিনি যে শ্রেষ্ঠত্বের পথে হাঁটছেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রতি ৯.২২ ইনিংসে সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রতি ৫.৫৮ ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বিরাট কোহলি। রান চেজের ক্ষেত্রেও শচীনের চেয়ে বেশ এগিয়ে কোহলি। ৪৯ সেঞ্চুরির মধ্যে এ ব্যাটার রান তাড়া করতে নেমেই করেছেন ২৭ টা সেঞ্চুরি। যার মধ্যে ২৩ টা ম্যাচই ভারত জিতেছে। রান চেজের ক্ষেত্রে শচীন টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করেছেন ১৭ টা। আর সেই ১৭ সেঞ্চুরিতে ভারত ম্যাচ জিতেছে ১৪ টাতে।
দেশ এবং বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরির দিক দিয়ে, দুই ক্ষেত্রেই শচীনের চেয়ে এগিয়ে বিরাট কোহলি। ভারতের মাটিতে শচীনের সেঞ্চুরি ২০ টা, বিরাটের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ২৪। আর বিদেশের মাটিতে যেখানে শচীনে ১২ টি শতক হাঁকিয়েছেন সেখানে, কোহলি পেয়েছেন ২১ টি শতক। তবে বিরাট শুধু শচীনের শতকের রেকর্ড ভেঙেই ক্ষান্ত থাকেননি। তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে এখন অনেক রেকর্ডই অতীত।
রান তাড়ায় মাইকেল বেভান, মাইকেল ক্লার্ক, এ বি ডি ভিলিয়ার্সের সফলতা সর্বজন স্বীকৃত। তবে বিরাট কোহলি ছাপিয়ে গিয়েছেন তাদেরকেও। রান তাড়ায় মাইকেল ক্লার্কের ব্যাটিং গড় ৫৩.৯, মাইকেল বেভানের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৫৬.৫। আর এ বি ডি ভিলিয়ার্স রান চেজে ব্যাটিং করেছেন ৫৬.৮ গড়ে। সেখানে বিরাট কোহলি পরে ব্যাটিং নেমে ব্যাট করেছেন ৬৫.৫ গড়ে। এমনিতেই কি আর নামের পাশে ‘চেজ মাস্টার’ তকমা লেগেছে! পরে ব্যাট করে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি কিংবা ব্যাটিং গড়- দুটো রেকর্ডই কোহলির দখলে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের ব্যাটিং শ্রেষ্ঠত্ব আসলেই ভিভ রিচার্ডসের নাম আসতে বাধ্য। ক্যারিয়ারে ৪৭ গড়ে ৬৭২১ করেছেন এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার। বিরাট কোহলির চেয়ে সংখ্যাতত্ত্বে যা বেশ পিছিয়ে। তবে তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন। আশির দশকে তাঁর মতো আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পারতেন খুব কম ব্যাটারই। মূলত তাঁর ব্যাটিংয়েই আক্রমণাত্বক ভঙ্গিমার একটা সংজ্ঞা খুঁজে পেয়েছিল ওয়ানডে ক্রিকেট। শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে বিরাট কি তাঁকেও ছাড়িয়ে গেলেন?
পরিসংখ্যানে নিশ্চিতভাবেই ছাপিয়ে গেছেন। তবে ভিভ যেভাবে তাঁর সময়ে বোলারদের শাসন করেছেন, তেমন আধিপত্য বিস্তার কি এই সময়ে এসে কোহলি করতে পেরেছেন? খুব সম্ভবত পেরেছেন। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছেন গত ম্যাচেই। মাত্র ২৭৯ ইনিংসেই পেয়েছেন ৫০ সেঞ্চুরির ছোঁয়া। আধিপত্য বিস্তারের সংজ্ঞায়নে এতটুকুই তো যথেষ্ট।
কে সেরা, এই বিতর্ক চলতেই থাকবে। সময়ের স্রোতে সেটা বরং আরো বেগবান হবে। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে যে কটা নাম উচ্চারিত, তা সংক্ষিপ্ততম তালিকাতেও নিশ্চিতভাবেই থাকবেন কোহলি। কারণ তাঁর ব্যাটেই নতুন রেকর্ডের নিশানা পেয়েছে ক্রিকেট।
শচীনের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ডও যে একদিন অতীত হয়ে যাবে, এটাই বা ভেবেছিল কে! কোহলি সেটা শুধু ভাবনাতেই আনেননি, বাস্তবে করেও দেখিয়েছেন। শূন্য থেকে পঞ্চাশের এই যাত্রাকে তাই ‘সেরা’ বলতেই হয়।