বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে জিম্বাবুয়ে ও নেপাল দুই অকৃত্রিম বন্ধুর নাম। যখনই বিপদে পড়ে তখনই দেশ দুটির শরনাপন্ন হতে দেখা যায়। ফুটবলে নেপাল আর ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাই খেলাটা একটু বেশি হয়ে থাকে। দুটি খেলাতেই দুই দেশকে ডাকা হয় নিজেদেরকে খেলার মধ্যে রাখতে।
তবে এবারের জিম্বাবুয়ে সফলটি বাংলাদেশের জন্য নানা কারণেই অন্যকম ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে। সিরিজে একটি টেষ্ট, তিনটি ওয়ানডে ও সমান সংখ্যক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশের। এক টেষ্ট খেলার আগে ও পরে যে ঘটনাগুলো ঘুটে গেছে তাতে করে সামনের দিনগুলো নিয়ে ভয়েই থাকার কথা। ইনজুরিকে এক পাশে রাখলে যদি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিষয়টিকে সামনে আনা হয় তাহলে অনেকিছুই জানা যাবে।
দীর্ঘ ১৭ মাস পর টেস্ট খেলতে নামার পরই দলের সমুহ বিপদের সময় ১৫০ রানের দারুণ এক কার্যকরী ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি। ম্যাচের চতুর্থদিন সকালে টিম মিটিংয়ে হঠাৎই নিজের অবসরের কথা জানান। কিন্তু ঢাকায় বিসিবি সভাপতি থেকে শুরু করে কোন কর্মকর্তাই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন না। সব ফরম্যাটে খেলবেন বলে কথা দিয়ে জিম্বাবুয়েতে গিয়ে রিয়াদের অবসর নেওয়ার বিষয়টিকে অনেকেই দেখছেন প্রতিবাদ হিসেবে। কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো থেকে শুরু করে নির্বাচক মণ্ডলীদের এখানে এক পাশে রেখে কাঠগড়ায় দাড় করাতে চাইছেন কেউ কেউ।
কিন্তু মিডিয়ায় কিছু না রিয়াদ ভবিষ্যতেও এ নিয়ে কথা না বলার বিষয়টি পরিস্কার করেছেন। অনেকেরই হয়তো মনে আছে জিম্বাবুয়েতে এক যুগ আগে সে সময়কার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের সাথে লেগে যায় মোহাম্মদ রফিকের। টিম ম্যানেজমেন্ট নিয়ম ঠিক রাখতে রফিককে হঠাৎ করেই দেশে ফেরত পাঠায়। এরপর থেকে জিম্বাবুয়ের সফর মানেই কোন না কোন ঘটনার ঘটার এটা সফর হিসেবেই ভাবছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এবার সেখানে ইনজুরির পাশাপাশি মাঠের বাইরে ঘটনা ঘটেছে বেশ।
টেস্টে তামিম ইকবালের পাশাপাশি পুরোটা খেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। যখন ওয়ানডে খেলে দেশে ফেরার চিন্তা করছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল ঠিক তখনি বায়ো বাবল নামক প্যারার কারণে তাকে টোয়েন্টি-২০ সিরিজে থাকতে হয়। কারণ ২ আগস্ট অষ্ট্রেলিয়ার আসার আগে থেকেই বায়ো বাবলে প্রবেশ করতে হবে ক্রিকেটারদের। জিম্বাবুয়ের সফরে যারা থাকবেন তারা এমনতিইে এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছেন।
কিন্তু, বিধি বাম, বগুড়ায় মুশফিকের বাবা-মা দুজনেই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সব ধরনের নিয়মকে পেছনে ফেলে দেশে ফিরতে বাধ্য হন এই উইকেটকিপার ব্যাটমন্যান। এখন তার অষ্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে কি হবে সেটি এখনও পরিস্কার নয়।
সবশেষ ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পাঁচটি বল করেই মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় মুস্তাফিজুর রহমানকে। ইনজুরির তালিকাটা এবার আরও লম্বা হলো। তবে দ্য ফিজের ইনজুরিটা তেমন গুরুতর নয় বলেই জিম্বাবুয়ে থেকে জানিয়েছেন নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক রাজ। তাই একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের জয় কতটা স্বস্থিতে রাখছে বাংলাদেশ সেই প্রশ্নটা করাই যায়।
যদিও, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেস্ট অবসর ওয়ানডে সিরিজে নাকি কোন প্রভাবই পড়বেনা বলে টিম ম্যামেনজমেন্ট থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষ হিসেবে জিম্বাবুয়ে যে বাংলাদেশের কতটা প্রিয় সেটির পক্ষে কথা বলতে পরিসংখ্যানই যথেষ্ট। আর ওয়ানডে লিগের জন্য সিরিজটির গুরুত্ব বেড়ে গেছে অনেক। সে কারণে তিনটি ম্যাচেই জয়ে চোঁখ রাখছে তামিম ইকবালের দল।
আজকের দিনটি অন্য কারণে ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারো কাছে টেষ্ট খেলুড়ে দেশগুলোর কাছে ব্যস্ততম দিনের একটি। আটটি দল যে আজকে মাঠে নামছে। তিনটি মহাদেশে চারটি আলাদা ম্যাচে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা-আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড-পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ-অস্ট্রেলিয়া মাঠে নামার অপেক্ষায়। ওয়ানডে সুপার লিগের কারণে বাংলাদেশের ম্যাচটি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
তিন ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের যেখানে ৩০ পয়েণ্ট টার্গেট সেখানে ১০ পয়েন্ট পেলেও খুশি থাকবে স্বাগতিকরা। পরিসংখ্যানের সাথে শক্তি আর পারফরমেন্ট বিবেচনায় লাল সবুজ প্রতিনিধিরা এগিয়েই থাকবে। কারণ সবশেষ ১৬ ওয়ানডের সবকটিতেই জয়ী দলের নাম যে বাংলাদেশ। কিন্তু, জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২০১৩ সালে সর্বশেষ খেলা ওয়ানডে সিরিজের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় রাসেল ডোমিঙ্গোর শীষ্যদের।
প্রথম ওয়ানডের মতো সবগুলোতেই মুশফিকুর রহিমের অভাবটা টের পাবে বাংলাদেশ। কারণ মিডল অর্ডারে তার মতো আস্থার খেলোয়াড় যে দ্বিতীয়টি নেই বাংলাদেশের। এদিকে ওয়ানডে সুপার লিগে এখনো ভাল অবস্থানে রয়েছে তামিম ইকবালের দল। আগের তিনটি সিরিজে ৯ ম্যাচ থেকে ৫ জয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে অবস্থান বাংলাদেশের।
জিম্বাবুয়ে যেখানে মাত্র ১০ পয়েন্ট নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে সবার নিচে রয়েছে। তাই ব্রেন্ডন টেইলরের দলের কাছে এক ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট পাওয়াটা অনেক বড় কিছুই মনে হচ্ছে। সে কারণে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবালের কাছে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এই সিরিজের, ‘বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নামবো আমরা। তবে যারা খেলবে তাদের পক্ষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতা সম্ভব বলেই মনে হচ্ছে। ওয়ানডে সুপার লিগ বলে তিনটি ম্যাচকেই সিরয়িাসলি নিয়েছি আমরা। পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট ভাল অবস্থানে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশকে।’
সিরিজটা জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেনা বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ তো সবখানে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে। এ পর্যন্ত মুখোমুখি হওয়া ৭৫ টি ওয়ানডে ম্যাচে ৪৭ জয় বাংলাদেশের, বিপরিতে ২৮ জয় জিম্বাবুয়ের। শুরুর দিকে দাপট দেখানো জিম্বাবুয়েকে এখন খর্বশক্তির দল বলা যায়। দুই দলের প্রথম ১০ মোকাবেলায় সবগুলো ম্যাচেই জয় এসেছিল জিম্বাবুয়ের। উল্টো দিকে এখন যেমন বাংলাদেশের জয়টা আসে বেশি।
২০১৩ সালে শেষবার জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপরের সিরিজগুলোতে থাকে বাংলাদেশের আধিপত্য। তবে যে হারারেতে তিনটি ম্যাচের সবকটিই অনুষ্ঠিত হবে সেখানে কিন্তু এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা। ১১ ম্যাচের পরাজয় বাংলাদেশের জয় মাত্র ৬ ম্যাচে। ৮ বছর আগের দলটাও যেমন এবার নেই আফ্রিকা মহাদেশের দলটির পাশাপাশি বাংলাদেশও কিন্তু পূর্ণ শক্তির নয়। তারুন্য নির্ভর দলটি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলে সিরিজ প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হবে। আয়ারল্যান্ড যেমন করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেছি। তেমন কিছু করার অপেক্ষায় নিশ্চয়ই থাকবে জিম্বাবুয়ে।