২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে কিলিয়ান এমবাপ্পে একাই করেছিলেন আট গোল! আর ফ্রান্স সবমিলিয়ে করেছিল ষোল গোল। অথচ দুই বছরের ব্যবধানে দলটা গোল করতেই ভুল করেছে, চলতি ইউরোতে সবমিলিয়ে তাঁরা করেছে স্রেফ একটি গোল। সেটাও আবার ওপেন প্লে থেকে নয়, স্পট কিক থেকে পোল্যান্ডের বিপক্ষে জালের দেখা পেয়েছিলেন এমবাপ্পে।
অথচ একই সময়ে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দুই দুইবার গোল উপহার পেয়েছে তাঁরা। বলতে গেলে আত্মঘাতী গোলে ভর করেই সেমিফাইনালে জায়গা হয়েছে তাঁদের; সেটাও আবার অপরাজিত থেকে। কিন্তু কেন ফ্রান্স গোল করতে পারছে না সেই উত্তর মেলেনি কোথাও, তাই তো প্রশ্নটা চায়ের কাপ থেকে শুরু করে টকশোর টেবিলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অধিনায়ক এমবাপ্পে ছাড়াও দলটির ফরোয়ার্ড লাইনে আছেন ওসমান ডেম্বেলে, অলিভার জিরুড, অ্যান্টনি গ্রিজম্যানের মত পরীক্ষিত তারকা। আবার মার্কাস থুরাম, কোলো মুয়ানিও কোন অংশে কম নন। কিন্তু মাঠের খেলায় তাঁরা কেউই জ্বলে উঠতে পারলেন না এখনো, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইনকে ফাঁকি দিয়ে গোল করতে পারলেন না এরা কেউই।
ম্যাচ বাই ম্যাচ বিশ্লেষণ করলে কারণটা অবশ্য কিছুটা বোঝা যায়, দুই বছর আগের বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলে ছিলেন জিরুড যিনি একজন প্রোপার গোলস্কোরার; অন্যদিকে গ্রিজম্যান গোল বানিয়ে দেয়ার কাজটা এত অবলীলায় করতেন মনে হতো এর চেয়ে সহজ কাজ বোধহয় আর নেই। চলতি ইউরোতেও তাঁরা আছেন কিন্তু দু’জনেই এখন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়। আগের সেই ফর্মের ছিটেফোঁটাও নেই।
ফলে চাপ বেড়েছে বাকিদের ওপর; যদিও ডেম্বেলের ফিনিশিং নিয়ে সমস্যা বহু আগের, কোলো মুয়ানি এখনো অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারেননি। এর ফলে এমবাপ্পের উপর অতি-নির্ভর হয়ে পড়েছে ফরাসিদের আক্রমণভাগ, প্রতিপক্ষের জন্য তাই তাঁদের থামিয়ে দেয়াটা তুলনামূলক সহজ হয়ে গিয়েছে।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সাবেক পিএসজি স্ট্রাইকারের ইনজুরি। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে নাকে চোট পাওয়ার কারণে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারেননি, এখন মাঠে নামলেও ব্যবহার করতে হচ্ছে মাস্ক – কি জানি, সেটা হয়তো অস্বস্তি দিচ্ছে তাঁকে।
এত এত সমস্যা নিয়েও ডিফেন্ডারদের কল্যাণে সেরা চারে পৌঁছে গিয়েছে ফ্রান্স। এখন অন্তত গোলের উৎস খুঁজে বের করতে হবে দিদিয়ের দেশ্যমকে। একটা ট্যাকটিক্যাল চেঞ্জ হয়তো আনা যায়, কিলিয়ান এমবাপ্পেকে স্ট্রাইকার পজিশনে খেলিয়ে উইংয়ে ডেম্বেলে আর বারকোলাকে নামানো। সেক্ষেত্রে অবশ্য আক্রমণের ধার কমবে, তবে গোলের সংখ্যা বাড়লেও বাড়তে পারে।
সেমিফাইনালে পরাক্রমশালী স্পেনের মুখোমুখি হবে তাঁরা, সেদিনও কি আত্মঘাতী গোল কিংবা পেনাল্টির আশায় থাকবে দলটি নাকি নিজেরাই গোল করবে; সেই প্রশ্ন থেকেই যায়?