ব্রাজিলিয়ান তরুণদের প্রতি রিয়ালের আগ্রহের নেপথ্যে

নেইমারকে চেয়ে-চিন্তেও পাননি। রিয়াল মাদ্রিদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকেই বেছে নিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকার। সেই আক্ষেপ মেটাতেই কিনা ব্রাজিলিয়ান উঠতি প্রতিভাবান তারকাদের দলে ভেড়ানোর মিশনে নেমেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। ভিনিসিয়াস জুনিয়র, এডার মিলিটাও, রদ্রিগোদের পর এবারে লস ব্ল্যাংকোসদের ডেরায় নাম লিখিয়েছেন ব্রাজিলিয়ান বিস্ময়বালক এন্ড্রিক। 

২০১৩ মৌসুমে নেইমারকে দলে ভেড়ানোর সর্বাত্নক চেষ্টা করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু সান্তোস থেকে স্পেনে পাড়ি জমানো নেইমার তখন বেছে নিয়েছিলেন বার্সাকেই। পরবর্তীতে কাতালান ক্লাবটি ছেড়ে পাড়ি জমান সুদূর প্যারিস সেইন্ট জার্মেইতে।

এরপর থেকে নেইমারের ক্যারিয়ার যতটা পিছিয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদ ততটাই স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়েছে। বিগত আট বছরে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এসেছে পাঁচ বার। অন্যদিকে, নেইমারের ক্যারিয়ারে সবেধন নীলমণি ২০১৫ মৌসুমের ট্রেবল। 

তরুণ ফুটবলার তুলে আনার ব্যাপারে রিয়াল মাদ্রিদের তেমন নামডাক ছিল না কোনোকালেই। তবে বিগত কয়েক বছরে খেলোয়াড় স্কাউটিং এ মনোযোগী হয়েছে তাঁরা। তাকেফুসো কুবো এবং ফেদে ভালভার্দের মত উঠতি প্রতিভাকে বেশ কম মূল্যেই দলে টেনেছে তাঁরা।

ব্রাজিলিয়ান প্রতিভাদের ক্ষেত্রে অবশ্য উদার চিত্তে খরচ করেছেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। ১৬ বছর বয়সী এন্ড্রিককে দলে ভেড়াতে খরচ করেছেন ৭২ মিলিয়ন ইউরোর। এছাড়া শোনা যাচ্ছে ১৭ বছর বয়সী ভিক্টর রৌকোর দিকেও নজর রাখছে তাঁরা। তবে কি ব্রাজিলিয়ান প্রতিভাদের নতুন নিবাসস্থল হতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ।

গত পাঁচ বছরে ব্রাজিলিয়ান তরুণ প্রতিভাদের পেছনে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ব্যয় করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। জুনি কালাফাত এবং তাঁর স্কাউট দল দুর্দান্ত কাজ করেছে ব্রাজিলে স্কাউটিং নিয়ে। তাঁরা মনে করেন বাকি দেশগুলোর তুলনায় ব্রাজিলিয়ান প্রতিভাদের প্রস্ফুটিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। এছাড়া শীর্ষ সারির ফুটবলে তাঁদের দ্রুত মানিয়ে নেবার সক্ষমতা রয়েছে। 

এছাড়া ব্রাজিলিয়ান তরুণরা বিগত কয়েক বছরে রিয়াল মাদ্রিদকে হতাশ করেনি। তাঁদের উপর বিনিয়োগ করা অর্থ তাঁরা চাইলেই তুলে ফেলতে পারবে দলবদল থেকে। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কথাই ধরা যাক, টিনেজার থাকা অবস্থায় তাঁর উপর ৪৫ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, ছয় বছরের চুক্তিতে প্রতি বছরে যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে সাত মিলিয়নে। অথচ চার বছর বাদে ভিনিসিয়াসের ভিত্তিমূল্য ১০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ চাইলেই তাঁকে বিক্রি করে তাঁদের বিনিয়োগ তুলে ফেলতে পারে। 

অন্যদিকে, ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলো চার বছর বাদে ২০০ মিলিয়নে বিক্রির চাইতে বরং ক্যারিয়ারের শুরুতেই ৪০ মিলিয়নের আশেপাশে ছেড়ে দিতে চাইবে। আর্থিকভাবে দুর্বল থাকায় ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলো খুব বেশিদিন খেলোয়াড় ধরে রাখতে পারে না। অন্যদিকে, রিয়াল মাদ্রিদের এ দুশ্চিন্তা নেই। টানা ফ্লপ খেলোয়াড় কেনার মত ঝুঁকি নিলেও তাঁদের তেমন ক্ষতি হবে না। 

ইউরোপে বেড়ে ওঠা ফুটবলাররা যেমন একাডেমিতে কঠোর নিয়ম-শৃংখলা মেনে বেড়ে ওঠেন। অন্যদিকে, বেশিরভাগ ব্রাজিলিয়ানের ফুটবলের সাথে পরিচয় রাস্তায় কিংবা অলিগলিতে খেলতে গিয়ে।

তাঁদের স্কিল, আউট অফ দ্য বক্স চিন্তাভাবনার সাথে তাই তাল মেলাতে পারেন না ইউরোপে বেড়ে ওঠা তরুণরা। রিয়াল মাদ্রিদ তাই ব্রাজিলিয়ানদের জন্য পরিবেশটা সৃষ্টি করেছে। সুযোগ দিয়েছে তাঁদের ভেতরের প্রতিভা পুরোটা প্রস্ফুটিত হওয়ার, ব্রাজিলিয়ানরা তাই দুহাত ভরে সেই সুযোগটা নিয়েছে। 

নেইমারকে না পাওয়ার ফলেই কিনা রিয়াল মাদ্রিদ ব্রাজিলিয়ানদের প্রতি মরিয়া হয়ে ছুটেছে। মার্কেটের গতিপ্রকৃতি বদলানোর আগ পর্যন্ত ব্রাজিলিয়ান প্রতিভাদের প্রতি রিয়াল মাদ্রিদের আগ্রহ কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link