হতাশা কিংবা বিরক্তি, দুটোরই উদ্রেক স্থল যেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। প্রতি আসর গড়াতেই প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে জায়গা নেয় বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, এক যুগ বয়সী ফ্র্যাঞ্চাইজিটা কতটা এগিয়েছে? নাকি সময়ের ব্যবধানে শুধু পিছিয়েছেই?
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তারুণ্যের খেলা। অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো সেটিকে প্রথা মেনেই নতুনত্বের খোঁজে ছোটে। বৈপরীত্ব শুধু বিপিএলে। এখানে জায়গা নেয় চলিশ ছুঁইছুঁই অন্যান্য লিগে অবিক্রীত থাকা বিদেশী ক্রিকেটার। যেন বৈশ্বিক ক্রিকেটের অন্যতম এক বৃদ্ধাশ্রম এই বিপিএল।
এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে খেলবেন সামিত প্যাটেল। প্রায় চল্লিশ ছোঁয়া বয়স নিয়েও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মতো প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন। ইংলিশ এ ক্রিকেটারের এ পথচলাকে অবমূল্যায়ন করার কোনো প্রশ্নই নেই। তবে শুধু তো বয়সের কারণে তো আর তাঁর চাহিদা কমেনি। পারফরম্যান্সের কারণেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের এ বাজারে তাঁর চাহিদা শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে।
কিন্তু বিপিএলের দলগুলো যেন এমন ক্রিকেটারদেরই ছায়াতুল্য বন্ধুর মতোই পাশে থাকে। বয়সী ক্রিকেটারকে দলে ভেড়ানোয় ভুল কিছু নেই। অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে দল সাজাতে পারে অনেক টিমই। তবে বিপিএলের সিংহভাগ দল বোধহয় ভুলে যায়, তাঁরা এমন কাউকে দলে ভেড়াচ্ছে যার অবসরপ্রাপ্ত ক্রিকেটারদের লিগ লিজেন্ডস লিগেও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এই গত বছরের মার্চের কথা। লিজেন্ডস লিগ ক্রিকেট মাস্টার্সের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়ার্ল্ড জায়ান্টস আর এশিয়ান লায়নস। এশিয়ান লায়নসের শিরোপা জেতা সে ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন বাংলাদেশের আব্দুর রাজ্জাক। যিনি এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের নির্বাচক। এই দলেই আবার ছিলেন পাকিস্তানের বর্তমান অন্তর্বর্তী কালীন কোচ মোহাম্মদ হাফিজ। মজার ব্যাপার হলো, ওয়ার্ল্ড জায়ান্টসের হয়ে সে ম্যাচের একাদশে জ্যাক ক্যালিস, শেন ওয়াটসনের সাথে ছিলেন সামিত প্যাটেলও। আর সেই সামিতই কিনা এবার খেলেছেন বিপিএলে!
সামিত প্যাটেল বাইশ গজের ক্রিকেটে বড় কোনো নাম নন। গড়পড়তা ক্রিকেটার যাকে বলে। নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার আছে। ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিছু ম্যাচ খেলেছেন। এই যা। এর বাইরে ফ্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই যা একটু বিচরণ মিলেছে আরকি। পিএসএল, এলপিএল, সিপিএল খেলেছেন। কিন্তু এই সময়ে এসে সামিত প্যাটেলের সেই সময়টাও অতীত। ফর্ম নেই। বয়সের ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও নিয়মিত নন।
কিন্তু গতবারের ফাইনালিস্ট সিলেট স্ট্রাইকার্সের নজরে পড়লেন এ ইংলিশ ক্রিকেটার। এটা সামিত প্যাটেলের যোগ্যতা নাকি সিলেট রয়্যালসের অদূরদর্শিতার নমুনা, সেটি বেশ প্রশ্ন সাপেক্ষ। সামিত প্যাটেল সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছিলেন গত বছরে সেপ্টেম্বরে। শেষ ১০ ম্যাচের হিসেবেও যদি একটা পারফরম্যান্সের চিত্র আঁকা যায়, তাহলে ব্যাট হাতে মোটে ৫৯ রান আর বল হাতে ৩ উইকেট।
বিপিএল ২০২৪ এর ড্রাফট গড়িয়েছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি দল গুলোর ক্রিকেটার দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে নিজেদের চাহিদা, সাম্প্রতিক ফর্মের বিবেচনাটাই অনুমেয়। সামিত প্যাটেল সিলেট স্ট্রাইকার্সের ঠিক কোন চাহিদাটা মেটালেন, সেটাই এখন প্রশ্নের বিষয়।
অবশ্য বিপিএলের কটা দলই বা এই টুর্নামেন্টকে সিরিয়াসভাবে নেন। বিসিবিও ক্রীড়াসূচির একটা টুর্নামেন্টকে কোনোভাবে মাঠে গড়িয়ে নিজেদের সফল দাবি করে। যত্রতত্র সেই টুর্নামেন্টে দলগুলোরও যে গোছানো চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক।