সুয়ারেজ কেন কামড়ান!

ম্যাচ তখন ৭৯ মিনিটের দিকে ছুটছে। হঠাৎ করে ইতালির ডি-বক্সে পড়ে গেলেন দুই ভিন্ন দলের দুই খেলোয়াড়। ইতালির রক্ষণের আস্থাভাজন জর্জিও কিয়েলিনি। আর তাঁর থেকে খানিকটা দূরে উরুগুরে দুরন্ত স্ট্রাইকার লুইজ সুয়ারেজ। মাঠে থাকা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখা কোন দর্শকই ঠিক আন্দাজ করতে পারলেন না কি ঘটেছে তাঁদের মাঝে।

বেশ খানিকক্ষণ পরে জানা গেল, লুইজ সুয়ারেজ রীতিমত কামড় বসিয়ে দিয়েছেন কিয়েলিনির কাঁধে। ব্যাস মুহূর্তেই হাস্যরসের এক প্রবল হাওয়া বয়ে গেল গোটা ফুটবল বিশ্বে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপটা হয়ত ল্যাটিন আমেরিকার বহু সমর্থক ভুলে যেতে চাইবে। তবে সুয়ারেজের অমন কামড় কাণ্ড নিশ্চয়ই তা খুব সহজে স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে দেবে না।

তবে এই কামড় কীর্তি যে প্রথমবারই করেছিলেন সুয়ারেজ, তা কিন্তু নয়। বরং তিনি আরও দুই দফা ফুটবল মাঠেই এমন অবান্তর কাজ করেছেন। প্রথমবার তিনি করেছিলেন ২০১০ সালে। তখন তিনি ছিলেন ডাচ ক্লাব আয়াক্সের আক্রমণভাগে। সেবার পিএসভি আইধোবেনের মিডফিল্ডার ওটম্যান বাক্কালকে কামড়ে দিয়েছিলেন।

এরপর ২০১৩ সালেই তিনি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান। এবার লিভারপুলের লাল জার্সি গায়ে। ম্যাচটা ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। সেবার তিনি কামড়েছিলেন ব্রেনস্লাভ ইভানোভিচকে। ফুটবল মাঠে বহুভাবেই তো প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে আঘাত করা যায়। তবে এমন অদ্ভুত এক পন্থা অবলম্বনের পেছনে ঠিক কি রহস্য রয়েছে তা জানতে চাইবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

তবে মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এমন উদ্ভট কাণ্ডের পেছনে কাজ করে আবেগ ও স্নায়ুচাপ। ফুটবল খেলাটা সব সময়ই বড্ড আবেগের। ঠিক যেই মুহূর্ত থেকে রেফারি কিক-অফের বাঁশি বাজান ঠিক সে মুহূর্ত থেকেই খেলোয়াড়দের প্রতিটি ধমনীতে যেন রক্তের বিচরণ বেড়ে যায়। দৌড়ে ক্লান্ত হওয়ার সাথে হৃদকম্পনটা বাড়ে ঠিক। তবে তাঁর থেকেও বাড়ে ঐ যে আবেগের তাড়নায়। আর হৃদকম্পন বাড়লে প্রতিটা কোষের উদ্দীপনা বাড়ে। সেটা তো বড় সাধারণ বিজ্ঞান।

আর আবেগ দুই ভাবেই কাজ করতে পারে। এই আবেগ বিষয়টাই লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের চ্যালেঞ্জ নিতে সাহায্য করে। এই আবেগই তাঁদের মত ফুটবলের সর্বকালের সেরা দুই ফুটবলারকে সবুজ মাঠের মাঝে অশ্রু ঝড়াতে বাধ্য করে। আর ঠিক এই আবেগই সুয়ারেজকে এমন উদ্ভট কাণ্ডের জন্য প্রভাবিত করেছে।

২০১০ সালে যখন তিনি প্রথম কামড় কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন সে ম্যাচটা ছিল প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ। জয় বড্ড প্রয়োজন ছিল। স্নায়ুচাপ তখন তুঙ্গে। কেননা ম্যাচটি তখন ড্রয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। ঠিক তখন নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সুয়ারেজ। স্নায়ুচাপটা ঠিক নিজের আয়ত্ত্বে রাখতে পারেননি। কামড় বসিয়ে দেন।

ঠিক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিই ঘটেছে ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। ফুটবল মাঠে মেজাজ হারিয়ে ফেলার ঘটনা নতুন নয়। প্রায়শই রক্ষণের খেলোয়াড়দের আগ্রাসী হতে দেখা যায়। প্রচণ্ড মানসিক চাপ তাঁদেরকে আগ্রাসী হতে বাধ্য করে। রিয়াল মাদ্রিদের পেপে আর সার্জিও রামোসের আগ্রাসন তো এক সময় প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের ভয়ের অন্যতম কারণ ছিল।

তবে পুরো বিষয়টাই মানসিকতার। ফুটবলের মাঠের প্রতিটা সেকেন্ডে তীব্র একটা প্রতিযোগিতার স্রোত বয়ে যায়। ঠিক যেমন জলে টইটুম্বুর নায়াগ্রা ফলস। দম ফেলার ফুরসত নেই। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতে হয়। এই বুঝি এল সুযোগ কিংবা এই বুঝি হারাল সব। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সইতে পারেন না বহু খেলোয়াড়। তাইতো সুয়ারেজরা কামড় বসান। আবার জিনেদিন জিদান সজোরে হেড মারেন প্রতিপক্ষের বুকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link