শাস্ত্রী মশাই ভারতের হেড কোচ হিসেবে শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলে গেলেন যে সূচী নির্ধারণ এর বিষয়ে আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল। যেটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ লেভেলের দেখার বিষয়। ইঙ্গিত খুব পরিষ্কার এবং অনেকাংশেই বক্তব্যটি ঠিক। অর্থাৎ সৌরভ গাঙ্গুলি এবং জয় শাহ নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) চাইলে খেলোয়াড়দের কথা মাথায় রেখে একটু রিল্যাক্সড সূচী বানাতে পারতো।
মেনে নিলাম।
সত্যি, সেই জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া জৈব বলয় শেষ হবে সম্ভবত: নিউজিল্যান্ড দলের ভারত সফরের মাধ্যমে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসরের ফাইনাল ম্যাচের পরে জৈব বলয় উঠে যায় এবং খেলোয়াড়রা ইউনাইটেড কিংডমের যেকোন জায়গায় যেকোন ভাবে যাওয়া বা থাকার জন্য ফ্রি ছিলেন। প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগের প্র্যাকটিস ম্যাচের আগে আবার বলয়ে ঢুকতে হয়। সে যাই হোক।
এখন ভারতের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইয়ের একটা খুব বড় ভূমিকা এখানে কাজ করে আইপিএলের দ্বিতীয় ভাগ আয়োজনের মাধ্যমে এবং সম্ভত: ইঙ্গিতটাও সেদিকেই। আর ঠিক এই জায়গা থেকে একটু অন্যরকম ভাবে ভাবা যাক।
আইপিএল – ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড দ্বারা আয়োজিত ঘরোয়া কুড়ি বিশের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা যেখানে প্রচুর বিদেশি খেলোয়াড়রাও খেলেন। সে তো একসময় রঞ্জি ট্রাফিতেও বিদেশী খেলোয়াড় খেলেছেন। অর্থাৎ দিনের শেষে আইপিএল ভারতীয় বোর্ড দ্বারা আয়োজিত একটি ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা, যেমন রঞ্জি বা দুলীপ (হয়তো কাগজ পত্রের নিরিখে একটু আলাদা)।
কিন্তু এখানে পুরস্কার মূল্য, পারিশ্রমিক, জাঁকজমক বা জৌলুস অনেক বেশি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কোহলি বুমরাদের মতো খেলোয়াড়রা যারা সমস্ত ফরম্যাট খেলে যাচ্ছেন দিনের পর দিন, তাঁদের সামনে একই পরিস্থিতিতে (অর্থাৎ বলয়ের মধ্যে থেকে) যদি ইংল্যান্ড ট্যুর এবং কুড়ি বিশের বিশ্বকাপের মধ্যে রঞ্জি ট্রফির দুটো গুরুত্বপূর্ন গ্রূপ ম্যাচ থাকতো, তাঁরা কি খেলতেন? এক সেকেন্ড সময় না নিয়েও বলা যায় খেলতেন না।
কারণ, আপনি মনে করেও বলতে পারবেন না এনারা শেষ কবে রঞ্জি খেলেছেন (বাস্তব পরিস্থিতিতে হয়তো সম্ভব ও নয়)। অর্থাৎ বিষয়টা কি বিসিসিআই দ্বারা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় খেলার বাধ্যবাধকতা নাকি বাড়তি গ্ল্যামার বা অর্থ? কিংবা স্পনসর বা ফ্র্যাঞ্চাইজির চোখ রাঙানি? কোনটা তাঁদের এই দীর্ঘমেয়াদি জৈব বলয়ে থাকতে বাধ্য করলো? কাঁদুনি গাইবার আগে কোচ এবং তাঁর বাধ্য ছাত্রদের এটা ভেবে দেখা উচিত ছিল।
যদি ধরেও নিই যে, যে বয়সে দুনিয়ার সমস্ত পারফর্মাররা ক্যারিয়ার শুরু করেন সেই বয়সে খেলোয়াড়দের প্রফেশনাল জীবন প্রায় শেষ হয়ে যায় আর সেই যুক্তিতে তাদের প্রথম দিন থেকেই এই ক্ষুদ্র সময়ের মধ্যে যতবেশি সম্ভব উপার্জনের বিষয়টা নিয়েও ভাবতে হয় বাকি জীবন সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে সেক্ষেত্রে বলি এটার মধ্যে বিন্দুমাত্র অন্যায় নেই। কিন্তু এই অযথা কাঁদুনিটা কেন? এটা সত্যি নেওয়া যাচ্ছে না। দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে পারেননি, হেরে গেছেন। আপনাদের ভুল পরিকল্পনা, দল গঠন, খারাপ ফর্মও তার জন্য দায়ী। এটা মেনে নিতে এত অসুবিধে!