গুড, গ্রেট ও গেইল

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত এক দশক ধরে গেইল নিজেকে ক্রিকেটারের চেয়ে বড় কোন অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি নিজে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডে  পরিণত হয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেটা আন্তর্জাতিক হোক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি সবচেয়ে বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল।

সুপার টুয়েলভে নিজেদের সব ম্যাচ শেষ করে বাড়ি ফিরেছে চ্যাম্পিয়নের তকমা নিয়ে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে গেইলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল। তবে গুঞ্জন শোনা বড় করে আয়োজন করে গেইলকে বিদায় দেয়া হবে। এছাড়া গেইল নিজেও ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলে বিদায় নেয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। ফলে গেইলকে অর্ধ বিদায় জানিয়েই আমাদের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাই।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গত এক দশক ধরে গেইল নিজেকে ক্রিকেটারের চেয়ে বড় কোন অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি নিজে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডে  পরিণত হয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেটা আন্তর্জাতিক হোক বা ফ্র্যাঞ্চাইজি সবচেয়ে বড় নাম হয়ে উঠেছিলেন ক্রিস্টোফার হেনরি গেইল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে হোক, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের (অধুনা পাঞ্জাব কিংস) হয়ে হোক কিংবা মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়েই হোক গেইল মানেই বাইশ গজে ঝড়। পাওয়ার প্লেতে ৮০ রান, ১৬ ওভারে ২০০ রান এই  সংখ্যাগুলোকেও বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিলেন তিনি। এই ক্ষমতার কারণেই একজন সাধারণ ব্যাটসম্যান থেকে ইউনিভার্স বস হয়ে উঠেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরো অনেক নজরকারা সব ব্যাটসম্যানদের দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্ল্যান মেক্সওয়েলারাও বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন। তবে শুধু বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বলে আসলে অন্যদের সাথে গেইলকে মিলিয়ে ফেলা যায় না। গেইলকে আপনি কোন গ্রুপের মধ্যেই ফেলতে পারবেন না। তাঁকে বোঝাতে হলে ইউনিভার্স বস শব্দটাই বলতে হয়।

২০১২ ও ২০১৬ সালে দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুটি বিশ্বকাপেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে তাফতটা গড়ে দিয়েছিলেন ক্রিস গেইলই। অন্যদল গুলো হয়তো নিজেদের নিয়ে নানারকম পরিকল্পনা করে। তবে ক্যারিবীয়দের সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা ছিল বোধহয় গেইল। এখানের অন্য ক্রিকেটারদের সাথে গেইলের পার্থক্য।

বিশেষ করে ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ ছিল তাঁর কারিয়ারের সেরা সময়। সেই সময় তাঁর সংখ্যাগুলো এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। ওই সময়ে মোট ১০৪ টি-টোয়েন্টি ম্যচ খেলেছিলেন তিনি। রান করেছেন ৫১.৪৪ গড়ে। এছাড়া তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ১৫৮.১৫। তারচেয়েও অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে ওই সময় মোট ১০ টি টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এছাড়া ওই সময়ে তাঁর চারের চেয়ে ছয়ের সংখ্যা ছিল বেশি।

সেই সময়টাতে আইপিএলেরও হৃদপিণ্ড ছিলেন তিনি। রান করেছে ৬২ গড়ে এবং স্ট্রাইকরেট ছিল ১৬৫ এর ও বেশি। অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগ গুলোতেও একইরকম বিধ্বংসী ছিলেন গেইল। এছাড়া সবমিলিয়ে তাঁর ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৪৫৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। সেখানে ৩৬.৪৪ গড়ে করেছেন ১৪৩২১ রান। পুরো ক্যারিয়ারে ব্যাট করেছেন ১৪৫.৪৪ স্ট্রাইকরেটে। এছাড়া এই ফরম্যাটে মোট ২২ টি সেঞ্চুরির মালিক তিনি।

সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এক অবিস্মরণীয় চরিত্র তিনি। শুধু ব্যাট হাতেই না, মাঠে তাঁর উপস্থিতিও ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এক আবেগের জায়গা। মাঠে তাঁর নানারকম খুনসুটিতে গোটা দুইটা দশক ক্রিকেট প্রেমীরা বিনোদিত হয়েছে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অনেক ভালো ব্যাটসম্যান এসেছে, অনেক গ্রেট ব্যাটসম্যান এসেছেন আর একজন ক্রিস গেইল এসেছিলেন। এখানেই বাকিদের সাথে গেইলের পার্থক্য। আর মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়, তাঁর মত ভবিষ্যতে কারো আসা প্রায় অসম্ভব।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...