ট্রফি হাতে প্রস্থান

তপ্ত রোদে নিজেকে পোড়ানো ছেলেটাও স্বপ্ন দেখে একদিন জিতবে শিরোপা। নিজ দেশের হয়ে পতাকা খচিত জার্সিটা পড়ে উল্লাসে মাতবে। ক্রিকেট খেলুড়ে প্রতিটা দেশের শিশু-কিশোরদের স্বপ্ন সেটাই। আর জাতীয় দলে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড় নিজের ক্যারিয়ার সাজান আইসিসির বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টকে ঘিরে।

ক্রিকেট বোর্ডগুলোর পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতেও থাকে সেই টুর্নামেন্টগুলো। প্রতিটা খেলোয়াড়দের একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে অন্তত একটি বারের জন্যে হলেও তাঁরা যেন একটি শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়। তবে ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক খেলোয়াড় রয়েছে যারা সেই শিরোপা জয় করেছেন একেবারে ক্যারিয়ারে শেষ মুহূর্তে।

এমনকি শিরোপা জয়ের ম্যাচটিও তাঁরা খেলেছেন এবং সেটিই ছিল তাঁদের নির্দিষ্ট ফরম্যাটের শেষ ম্যাচ। এমন গল্পগুলোই থাকছে আজকের আয়োজনে।

ইমরান খান (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় ইমরান খান উপরের দিকেই বিরাজমান। এই কিংবদন্তি খেলোয়াড় ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিলেন পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়ে। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৪০। বিশ্বকাপ জেতার ঠিক ছয় মাসের মাথায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্রিকেটকে বিদায় দেওয়ার।

সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন। আর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। ব্যাট-বলে আগুন ঝড়ানো ইমরান খান তুলে রাখানে নিজের ক্রিকেটের সরঞ্জাম। তবে আক্ষেপ নিয়ে ক্যারিয়ারটা শেষ করতে না পারায় একটা স্বস্তি নিশ্চয়ই কাজ করে।

গ্লেন ম্যাকগ্রা (অস্ট্রেলিয়া)

বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া। অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল একটা সময়। সে সময় দলটির অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। বল হাতে তিনি প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপের কোমড় ভেঙে দেওয়ার কাজটাই করতেন। তিনি ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিলেন ২০০৭ সালে।

২০০৭ সালে বিশ্বকাপের পরই তিনি রঙিন পোশাকের ফরম্যাটটাকে বিদায় জানান। সে বিশ্বকাপটা অবশ্য তিনি জিতেছিলেন। শুধু তাই নয়, টুর্নামেন্ট জুড়েই অনবদ্য পারফরমেন্সের বদৌলতে টুর্নামেন্ট সেরার পুরষ্কারটাও নিজের করে নিয়েছলেম গ্লেন ম্যাকগ্রা। আর কার্যত ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালটাই ছিল তাঁর খেলা ওয়ানডে ফরম্যাটের শেষ ম্যাচ।

মাইকেল ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)

অজিদের বহু ম্যাচ জয়ের কারিগর ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়কদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হন তিনি। দলের মিডল অর্ডার সামলানোর পাশাপাশি দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন শক্ত হাতে। তিনিও নিজের শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে।

২০১৫ সালের বিশ্বকাপটা তাঁর নেতৃত্বেই জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। সে বিশ্বকাপের ফাইনালটাই ছিল তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। তিনিই অস্ট্রেলিয়াকে পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছিলেন। ক্রিকেট দুনিয়ায় এক অনন্য দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া রীতিমত রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বিজে ওয়াটলিং (নিউজিল্যান্ড)

এইটা ধারণা করা হয় যে বিজে ওয়াটলিং নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান উইকেটরক্ষকদের একজন ছিলেন। এই ক্রিকেটারও নিজের ক্যারিয়ার একবার অন্তত বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা হাতে ধরতে পেরেছিলেন। নতুন আয়োজিত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন তিনি।

টেস্টে শক্তিশালী দল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের যেই উর্ধ্বগতি তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বিজে ওয়াটলিং। তিনি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনাল ম্যাচের আগেই ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন যে তিনি টেস্ট থেকে অবসর নিতে চলেছেন। শেষ ম্যাচ চ্যাম্পিয়ন হয়েই বিদায় জানিয়েছিলেন ওয়াটলিং।

ব্র্যাড হ্যাডিন (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ উইকেট রক্ষক ছিলেন ব্র্যাড হ্যাডিন। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট যখন ছিলেন তাঁর নিজস্ব ফর্মের সেরা সময়ে সে সময়ে দলেই ছিলেন হ্যাডিন। গিলক্রিস্টের অবসরের পর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দস্তানা হাতে তুলে নেন তিনি। এরপর তো রীতিমত জিতে নেন বিশ্বকাপ।

২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ী দলে তিনিও ছিলেন। এমনকি ফাইনাল ম্যাচে তিনি একাদশেও ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচটাই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সমাপ্তি রেখা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে পঞ্চম শিরোপা জয়ের সাক্ষী হওয়ার পরপরই তিনি বিদায় জানান ক্রিকেটকে।

রোহান কাহ্নাই (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ভারতীয় বংশদ্ভুত খেলোয়াড় রোহান কাহ্নাই। তবে তিনি ক্রিকেটটা খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। ৭৯টা টেস্ট ম্যাচ খেলা এই ব্যাটার ছিলেন নিজের সময়ের অন্যতম সেরাদের একজন। কিংবদন্তি এই ব্যাটার মাত্র সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে এক ম্যাচেই তিনি নিজেকে ইতিহাসের সাক্ষী করে রেখেছিলেন।

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে দুর্দান্ত এক দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে দলের হয়ে তিনি খেলেছিলেন ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ। এমনকি ফাইনালে শিরোপাও তিনি নিজে ছুঁয়ে দেখেছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি সে ম্যাচে দুর্দান্ত এক অর্ধশতক করেছিলেন। এরপর আর কখনো ক্রিকেট দুনিয়ার তৎকালীন ক্ষুদ্র সংস্করণে দেখা যায়নি রোহান কাহ্নাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link