বিশ্ব একাদশ-এশিয়া একাদশের নস্টালজিয়া

বিশ্ব একাদশটা একটা মজার ব্যাপার ছিল এক সময়। গোটা বিশ্ব থেকে বাছাই করা শীর্ষ ক্রিকেটাররা আইসিসির পতাকাতলে এসে খেলতো। কখনো তাদের প্রতিপক্ষ হত এমসিসি একাদশ, এশিয়া একাদশ কিংবা প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়া। আবার আফ্রিকান সেরা একাদশ ও এশিয়ান সেরা একাদশকে নিয়ে হত আফ্রো-এশিয়ান কাপ।

তখন তো আজকালকার মত আইপিএল-বিগ ব্যাশ বা বিপিএল ছিল না। তাই, পছন্দের সব তারকাদের এক সাথে দেখার সবচেয়ে বড় মঞ্চ ছিল এই ম্যাচগুলো। একবার ভাবুন তো, বোলিং করার আগে ওয়াসিম আকরাম একটু আলাপ করে নিচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে। কিংবা শচীন টেন্ডুলকার ব্যাট করতে নামছেন সনাথ জয়াসুরিয়ার সাথে। অজয় জাদেজা আর আব্দুল রাজ্জাককে এক সাথে ব্যাট করতে দেখাটাও কম আনন্দদায়ক নয়।

চলুন নির্বাচিত একাদশের অসাধারণ পাঁচটি ম্যাচের স্মৃতিচারণা করা যাক।

  • এমসিসি একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশ (১৯৮৭)

এমসিসির ২০০তম বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে তুলতে পাঁচ দিনব্যাপী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মুখোমুখি হয় এমসিসি একাদশ ও বিশ্ব একাদশ। উভয় দলেই এত প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিলেন যে ম্যাচের হার-জিত নয়, ড্র হওয়াটাই একমাত্র ন্যায়সঙ্গত ফলাফল ছিল। গ্রায়াম গুচ, মাইক গ্যাটিং, সুনীল গাভাস্কার, গর্ডন গ্রিনিজের সেঞ্চুরি এবং ইমরান খানের অসাধারণ ৮২ রানের ইনিংসের সুবাদে এই ম্যাচে রান হয়েছিল প্রচুর।

  • প্রিন্সেস অফ ওয়েলস মেমোরিয়াল ম্যাচ (১৯৯৮)

প্যারিসে প্রিন্সেস ডায়নার দু:খজনক মৃত্যুর এক বছর পর এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি মূলত তার স্মৃতিসৌধের জন্য ফান্ড উঠানোর জন্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে প্রায় এক মিলিয়ন পাউন্ড পরিমাণ অর্থ উঠে আসে। শচীন টেন্ডুলকার এবং ওয়াসিম আকরাম খেলেছিলেন এই ম্যাচে বিশ্ব একাদশের হয়ে। টেন্ডুলকারের দ্রুত সেঞ্চুরির সুবাদে লর্ডসে বিশ্ব একাদশ এমসিসি একাদশকে ছয় উইকেটে পরাজিত করে।

  • অস্ট্রেলিয়া বনাম বিশ্ব একাদশ (২০০৫)

পরপর দুবার বিশ্বকাপ জেতা সহ সেই সময়ের তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া সন্দেহাতীত ভাবে সেই সময়ে বিশ্বের সেরা দল ছিল। তাই আইসিসি ভেবেছিল শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করার মত বিশ্ব একাদশ বানালে মন্দ হবে না। ভাবনাটা ভালো হলেও এর পরিণতি খুব একটা ভালো হয়নি কারণ কোন ম্যাচেই বিশ্ব একাদশ অস্ট্রেলিয়া দলের সামনে দাড়াতেই পারে নি। অনুষ্ঠিত তিনটি ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া ৯৩, ৫৫ এবং ১৫৬ রানের বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। এই ফলাফলই বুঝিয়ে দেয় সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়া কতটা শক্তিশালী ছিল।

  • আফ্রিকা একাদশ বনাম এশিয়া একাদশ (২০০৭)

দশ বছর আগে এমন এক সময় ছিল যখন ভারতীয় খেলোয়াড়েরা পাকিস্তানি খেলোয়াড়দদের বিপক্ষে খেলতে নারাজ ছিলেন। তবে তারা একই সঙ্গে একই দলে খেলেছিলেন আফ্রো-এশিয়ান কাপে। এশিয়ান এবং আফ্রিকান ক্রিকেট কাউন্সিলের অর্থভাণ্ডার পূরণের জন্যে এই ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়। এবং এগুলোকে আন্তর্জাতিক মর্যাদাও দেয়া হত। এর আগে ২০০৫ সালেও হয়েছিল আফ্রো-এশিয়ান কাপ।

এই কারণে লুক রনচি ও গ্র‍্যান্ট এলিয়টের আগে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও মাহেল জয়াবর্ধনের করা ২১৬ রানের পার্টনারশিপ ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে। এই ম্যাচেই ধোনির ওয়ানডেতে করা তৃতীয় সর্বোচ্চ রান এবং তার দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়। এই সিরিজেই গ্রায়াম পোলকের বোলিং থেকে ব্যাটিং বেশি কার্যকর হওয়ার বিরলতম ঘটনা দেখে বিশ্ব। আফ্রো-এশিয়ান কাপে ছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও। এখানে খেলেছেন মোহাম্মদ রফিক, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, আব্দুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ আশরাফুল।

  • এশিয়া একাদশ বনাম বিশ্ব একাদশ (২০০০)

বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগে ক্রিকেটকে প্রসারের জন্য প্রচুর ম্যাচের আয়োজন করত। ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজনের দুই বছর পর বাংলাদেশে আইসিসি সপ্তাহও আয়োজিত হয়। বিশেষ বিশেষ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচগুলোর মধ্যে এই আয়োজনটি ছিল সেরা। কি ছিল না এই ম্যাচে! এই ম্যাচ ছিল হাইস্কোরিং ম্যাচ। মাত্র ৫০ ওভারে ৬৩৯ রান হয়েছিল, যা সেই সময়ের জন্য অতিরিক্ত বেশিই ছিল। সেই সময়ে ম্যাচ প্রতি ২৫০ রানের বেশি হত না।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল মাইকেল বেভানের রান তাড়ার কীর্তি। বিপদের সময় দলের আশা জ্বালিয়ে রেখেছিলেন; মাত্র ২২ ওভারে ৮.৪ রানরেটে ১৮৫ রান করেছিলেন। ঠিক যেন একটি টি-টোয়েন্টি ইনিংস দেখে ফেলেছিল বিশ্ব টি-টোয়েন্টির ভাবনা মাথায় আসার আগেই। মাত্র ১ রানে এশিয়া একাদশ জয়ী হয় তবে এই ম্যাচটি অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচেই ওয়াসিম আকরামকে টেনিস বল দিয়ে বল করে বাকি সবাইকে বোকা বানাতে দেখা গিয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link