অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট আক্ষেপনামা

ক্রিকেটে সফলতা যেমন আছে তেমনি ব্যর্থতাও আছে। অনেকেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন সফলতার শীর্ষে। কেউ কেউ আবার সেরাটা দিয়েও ছিলেন উপেক্ষিত। অস্ট্রেলিয়ার আশি বা নব্বই দশকের পর এমন অনেক ক্রিকেটারই সেরাটা দেওয়ার পরেও অল্পতেই থেমে গেছে তাদের টেস্ট ক্যারিয়ার। কারণ দিনে দিনে অস্ট্রেলিয়া দলটা হয়ে উঠেছিল তারকাদের মেলা।

১৯৮৫ সালের পর থেকে জাতীয় দলে টেস্টে নজর কাঁড়া পারফরম্যান্সের পরেও বাদ পড়ে গেছেন – এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা কম নয় অস্ট্রেলিয়ায়। এমনই সাত অভাগা ক্রিকেটারদের নিয়ে আজকের আলোচনা।

  • ডিন জোন্স

ডিন মারভিন জোন্সকে বলা হত ওয়ানডে ক্রিকেটের অগ্রদূত। যদিও টেস্ট ক্যারিয়ারেও ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। ক্যারিয়ারের শেষ সাত ইনিংসে করেছিলেন ৮৫ গড়ে ৪২৬ রান! যার মধ্যে ছিল ২ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটি। উড়ন্ত ফর্মে থাকার পরেও ১৯৯২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য জোন্সকে বাদ দিয়ে নির্বাচকরা ডেমি মার্টিনকে দলে সুযোগ দেয়।

নির্বাচকরা চাচ্ছিলেন দলে একটু ভিন্নতা আনতে। আর নির্বাচকদের এই সিদ্ধান্তে ক্যারিয়ার থমকে যায় জোন্সের। এরপর আর কখনোই সাদা পোশাকে জাতীয় দলের হয়ে নামতে পারেননি এই অজি তারকা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫২ টেস্টে প্রায় ৪৭ গড়ে ১৪ ফিফটি আর ১১ সেঞ্চুরিতে ৩৬৩১ রান করেছেন জোন্স।

  • ব্র‍্যাড হজ

বেশ সংক্ষিপ্ত টেস্ট ক্যারিয়ারেও অনেক সফল ছিলেন ব্র‍্যাড হজ। যদিও সাদা পোশাকে নিয়মিত মুখ হতে পারেননি তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ব্যাটার খেলেছেন মাত্র ৬ টেস্ট। এই ৬ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি আর ২ ফিফটিতে ৫৬ গড়ে করেছেন ৫০৩ রান। এর মাঝে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে!

পার্থে মাখায়া এনটিনি, শন পোলক, আন্দ্রে নেলদের বিপক্ষে করেন অসাধারণ এক ডাবল সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির পর সুযোগ পান আর মাত্র দুই ম্যাচ! এরপর দুই বছরের জন্য সাদা পোশাকে আর সুযোগ পাননি।

দুই বছর বাদে দলে ফিরে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ২৭ রান। এর পরই বাদ পড়েন তিনি! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ১৭ হাজার রান করা হজ জাতীয় দলে ৬ টেস্টে ৫৬ গড়ে রান করার পর আর ফিরতেই পারলেন না!

  • ডগ বলিঞ্জার

লম্বা রেসের ঘোড়া হিসেবেই জাতীয় দলে সম্ভাবনা জাগিয়ে এসেছিলেন বাঁ-হাতি পেসার ডগ বুলিঞ্জার। ২০০৯-১০ মৌসুমে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট ও ওয়ানডে দলে জায়গা পান এই পেসার। তবুও টেস্ট ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ হয়নি এই পেসারের।

২০০৯ সালে অভিষেকের পর ধারাবাহিক পারফর্ম করছিলেন বলিঞ্জার। ২০১০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানে ৩ উইকেট শিকারের পর ভারতের বিপক্ষে পরের টেস্টে নেন ৫ উইকেট। সেখান থেকে সুযোগ পান ২০১০ সালের অ্যাশেজ সিরিজে। মিশেল জনসনকে বিশ্রামে দিয়ে অ্যাডিলেড টেস্টে সুযোগ দেওয়া হয় বুলিঞ্জারকে। সুযোগ পেলেও এক ইনিংসে নেন ১৩০ রানের বিনিময়ে এক উইকেট! ওই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় পায় ইংলিশরা।

অ্যাডিলেডের ফ্ল্যাট উইকেটে বল হাতে ব্যর্থ হন তিনি। যদিও ওই টেস্টের আগে তাঁর ফিটনেস নিয়েও চলছিল বেশ আলোচনা। এরপরই দল থেকে বাদ পড়েন বুলিঞ্জার। সাদা পোশাকে যাত্রাটা থমকে যায় মাত্র ১২ টেস্টে! ২ বার পাঁচ উইকেট সহ ১২ টেস্টে ৫০ উইকেট নেওয়া এই পেসার সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারেননি আর।

  • জেসন গিলেস্পি

পেসার হওয়া সত্ত্বেও ক্রিকেট পাড়ায় সমর্থকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন একজন ব্যাটার হিসেবে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ রানের কীর্তিটা গিলেস্পির দখলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৬ সালে চট্রগ্রামে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নেমে ২০৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি।

ওই সিরিজের দুই টেস্টে বল হাতে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। ব্যাট হাতে ঐতিহাসিক এক ইনিংস খেললেও ওই সময়ের বোলিং পারফরম্যান্সের কারণে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। এরপর আর সাদা পোশাকে ফিরতে পারেননি তিনি। জাতীয় দলের যাত্রাটাও ছিল ওই পর্যন্তই! তবে বিদায়ী টেস্টে গিলেস্পি নিজেকে রেখে গেছেন ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায়।

  • কলিন মিলার

দুই দিকেই স্যুইং করানোর ক্ষমতা আর বলের গতি পরিবর্তনে পারদর্শীতার কারণে বিখ্যাত ছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান পেসার কলিন মিলার। জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল ৩৪ বছর বয়সে এসে! তবুও বল হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ১৮ টেস্টে নিয়েছেন ৬৯ উইকেট! ক্যারিয়ারের শেষ ৪ টেস্টে মাত্র ২২ গড়ে নেন ২৬ উইকেট।

এর মধ্যে শেষ টেস্টে ভারতের বিপক্ষে নেন ৬ উইকেট! তবে চেন্নাইয়ে ওই টেস্টে হারের পর বাদ পড়েন মিলার। বয়সটা ৩৭ হলেও বল হাতে মিলার ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। তবুও আর সাদা পোশাকে খেলতে পারেননি কলিন মিলার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরেও এমন বিদায়ে আক্ষেপটা থেকে গেছে কলিনের।

  • মার্টিন লাভ

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাজার হাজার রানের পরেও জাতীয় দলে কেন যেন থিতু হতে পারেননি মার্টিন লাভ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ সেঞ্চুরি আর ৭৮ হাফ সেঞ্চুরিতে প্রায় ১৭ হাজার রানের মালিক লাভ জাতীয় দলের হয়ে টেস্টে খেলেছেন মোটে পাঁচটি।

অভিষেকেই ফিফটি আর ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পরেও পাঁচ টেস্টে সীমাবদ্ধ ছিল লাভের ক্যারিয়ার। ৫ টেস্টে ৪৭ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে করেছেন ২৩৩ রান। জাতীয় দলের যাত্রাটা লাভের জন্য থমকে গেছে মাত্র ৫ টেস্টেই!

  • কার্টিস প্যাটারসন

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৯ সালে সাদা পোশাকে অভিষেক। প্রথম ইনিংসে ৩০ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে পাননি ব্যাটিংয়ের সুযোগ। পরের টেস্টে ক্যানবেরায় প্রথম ইনিংসেই খেলেন ১১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় টেস্টেই সেঞ্চুরি পাওয়ার পরেও বাদ পড়েন কার্টিস প্যাটারসন। ১৪৪ গড় নিয়েও আর জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি এই সম্ভাবনাময় তারকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link