ঋদ্ধি, ভুল সময়ের সিদ্ধি

নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। এজন্য অবশ্য ‘মহাপুরুষ’ খেতাব পেতে পারেন। তবে তিনি যে অবহেলার স্বীকার সেটা নিয়েও তো আলোচনা থেকে জল ঘোলা কম হল না। সবটাই তো দেখা সাড়া। তবে এই যে নিবেদিত প্রাণ ঋদ্ধিমানের ক্যারিয়ার দোলাচলের ইতি নিয়ে প্রশ্নের সঞ্চার হয়েছে নিশ্চয়ই।

একটা খেলোয়াড় নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়েছেন অন্য আরেকজনের বদলি হয়ে। আবার ঠিক যে সময় তিনি ভাবছেন তিনি হবে সকল পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ঠিক তখন তিনি হারাচ্ছেন তাঁর জায়গা। অন্যকেউ সেখানটায় এসে মেলে ধরে তাঁর রাজত্ব। ঠিক মেনে নেওয়াটা তো দুষ্কর। আর তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার জন্যে নির্বাচকদেরও নিশ্চয়ই কম সমালোচনা সইতে হয়নি।

আসলে বিষয়টা হচ্ছে, নিয়তি কিংবা ভাগ্য। আরেকটু জটিল করলে ভুল সময়ে জন্ম। আবার আরও একটা ভুল, উইকেট রক্ষণ করবার ইচ্ছা। কেননা উইকেটরক্ষকের কাজটা খুব একটা আলোকিত হয় না। বিশেষ করে টেস্ট দলে।তবে এই উইকেট রক্ষকের কাজটাই অত্যন্ত জটিল। তবে স্বীকৃতি খুব একটা মেলে না। টেস্ট ক্রিকেটে একটা উইকেট আদায় করতে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়ে।

বোলার পরিকল্পনা সাজিয়ে একনাগাড়ে বল করে একটা উইকেট শিকারের সম্ভাবনার জন্ম দেন। একটু খানি ব্যাটের খোঁচা। আর সে খোঁচা লাগা বল যদি উইকেট রক্ষক দস্তানা বন্দী করতে না পারেন তবে তো সব পরিশ্রম আর পরিকল্পনাই বৃথা। কিন্তু এসব কিছুই যেন আড়াল হয়ে যায় একজন উইকেট রক্ষকের ব্যাটিংয় সামর্থ্যের একটা অভেদ্য পর্দায়।

আধুনিক ক্রিকেটে স্বয়ংসম্পূর্ণ  হওয়া যেন অবধারিত। তবে আহামরী খারাপ ব্যাটার ঋদ্ধিমান কোন কালেই ছিলেন না। বরং সুযোগের অভাবে তিনি নিজের ব্যাটিংটা আরেকটু বেশি পরিপক্ক করতে পারেননি। তবুও তাঁর নামের পাশে রয়েছে তিন খানা শতক। কিন্তু তিনি জায়গা হারালেন, তরুণ ঋষাভ পান্তের কাছে। একটাই কারণ, পান্তের ব্যাটিং।

ঋষাভ প্যান্ত ব্যাট করেন কোনরকমের ভয়ডর ছাড়াই। তাঁর খুব বাজে দিনেও ভারতের জন্যে কিছু না কিছু করার চেষ্টাটা করেন পান্ত। আর উইকেট রক্ষণে খানিকটা ঘাটতি ছিল পান্তের। তবে সে জায়গাটা সামলে নিয়েছেন তিনি। ঋষাভের মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে এবং তিনি তরুণও বটে। নিজের প্রথম দশ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মত বৈরী কন্ডিশনে দুই খানা শতক রয়েছে তাঁর নামের পাশে।

সুতরাং টেস্ট দলে তাঁর মত একজন তরুণের জায়গা পাওয়া যুক্তিসংগত বটেই। তবে সকল প্রশ্নের, সমালোচনা মাথা চারা দিয়ে ওঠে যখন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দল থেকে বাদ পড়েন ঋদ্ধিমান সাহা। এর পেছনেও তো একটা যুক্তি রয়েছে। ঋদ্ধিমানের বয়স হয়েছে। এটাই অনেক বড় একটা কারণ। ভারতীয় দলকে সামনের দিকে তাকাতেই হত।

কেননা এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ চলমান। তাকে দলে রেখে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হত না। কেননা ঋষাভ প্রথম পছন্দ এটা সুনিশ্চিত। আর বদলের চিন্তা কেবল সে ইনজুরিতে পড়লেই আসবে। তখন নিশ্চয়ই প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি চলে যাওয়া ঋদ্ধিমানের উপর ভরসা করতে পারবে না দল। কেননা উইকেটরক্ষণে শরীরে বেশ ধকল পড়ে। আর ঋদ্ধিমানের ইনজুরি প্রবণতাও রয়েছে।

অগ্যতা তরুণ একজনকে দলের সাথে যুক্ত করতেই হত দলের ম্যানেজমেন্টকে। নতুবা অভিজ্ঞতা প্রীতি ধ্বস বয়ে নিয়ে আসতে পারে। যেমনটা হয়েছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের সাথে। মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশানরা প্রায় একই সময়ে অবসর নেওয়ার পর থেকেই লংকান ক্রিকেটে ধস নামে। পরিবর্তনের একটা চক্রে আটকে উন্নতি আর করা হচ্ছে না।

ভারতের মত একটা ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ নিশ্চয়ই এই ভুল করতে চাইবে না। তাছাড়া উদাহরণ যখন পাশের দেশ তখন একই ভুল করাটা রীতিমত অপরাধে্র সামিল। তাই ঋদ্ধিমানের বাদ পড়া কিংবা পর্যাপ্ত সুযোগ না পাওয়া বিষয়টা স্রেফ তাঁর ভাগ্যের নির্মমতা বলেই চালিয়ে দেওয়া যায়। অথবা নানানরকম নোংরা তথ্য যুক্ত করতে বাঁধা দেবে কে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link