দলে কার প্রভাব বেশি? একজন ক্রিকেট কোচের নাকি একজন ফুটবল কোচের!
খেলাধুলার দুনিয়ার খবর রাখেন এমন সবাই জানেন যে একজন ফুটবল কোচ তার অধীনে থাকা একটি দলের সর্বেসর্বা। কারন, সাফল্যের রসগোল্লার মালিক যেমন তিনি, তেমনি ব্যর্থতার করলার শরবতও তাকেই গিলতে হয়! ম্যানেজমেন্ট তাই একজন ফুটবল কোচকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদান করে।
অপরদিকে একজন ক্রিকেট কোচের দায়টা তুলনামূলক কম। দলের উপর সর্বেসর্বা প্রভাবটা তাই কিছুটা শিথিল থাকে। আমার যেমন ইচ্ছে টাইপ মনোভাব নিয়ে একজন ক্রিকেট কোচ খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। তবে, কিছুক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। মেজাজ হারিয়ে অথবা ঠাণ্ডা মাথায় একজন কোচ তাঁর কাজেকর্মে বুঝিয়ে দিতে পারেন, ড্রেসিং রুমে রিয়েল বস কে!
ঘটনা ২০০২ সালের। চলছে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি। ইংলিশদের বিপক্ষে ইংলিশ কন্ডিশনে মুখোমুখি ভারতীয় ক্রিকেট দল। দলের কোচ জন রাইট স্বতঃস্ফূর্ত, অমায়িক এবং একজন তুখোড় ট্যাকটেশিয়ান।
লন্ডন ওভালে খেলা। ফ্ল্যাট উইকেটে ম্যাচেই ছিল ভারত। শ্রীলঙ্কাকে ২০২ রানে আটকে ফেলেছে। জবাব দিতে নেমে অধিনায়ক সৌরভ দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন। তবে, গোলটা বাঁধলো যেদিন মারকুটে ব্যাটসম্যান বীরেন্দ্র শেবাগ তার স্বভাবমত উল্টো পাল্টা শট খেলে আউট হয়ে গেলেন। এমনটা আগেও হয়েছে, এবং ভবিষ্যতেও হবে বুঝতে পেরে জন রাইটের মাথা গেল বিগড়ে! ভারতের স্কোর তখন দুই উইকেটে ২৬ রান।
শেভাগ ড্রেসিং রুমে ঢুকতেই তার কলার চেপে ধরলেন জন রাইট। ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন, ‘আর যদি এভাবে আউট হয়েছো তো…’ না, আর এগোননি। এটুকু বলেই থেমে গেছেন।
হতভম্ব শেবাগ সেদিন খুব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিলেন ব্যাপারটা। মিডিয়ায় খবর রটে যে, অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি কোচ জন রাইটকে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। কিন্তু সৌরভ স্পষ্ট বলে দেন, এমন কিছুই তিনি জন রাইটের কাছে চাননি। মিডিয়া শুধু শুধু বাড়িয়ে বলছে।
তখনকার ভারতীয় দলে কোচ জনের প্রভাবটা একবার ভাবুন শুধু! সেই সাথে ভাবুন, আমাদের ক্রিকেট দলে কারো সাথে যদি এমনটা হত, তাহলে কোথাকার জল কোথায় গড়াতো!
আর বলাই বাহুল্য, কোচের শাসন, অধিনায়কের চোখ-রাঙানি, মিডিয়া কিংবা দর্শকের সমালোচনা – কোনো কিছু কোনোদিনও শেবাগকে বদলাতে পারেনি। বলটার জন্মই হয়েছে পেটানোর জন্য – এটাই আজীবন বিশ্বাস করে গেছেন শেবাগ। আর সেটা করেই তিনি বনেছেন ইতিহাসের সেরা মারকুটে ওপেনারদের একজন।