সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বেলেছি

বাংলাদেশ ক্রিকেটের গোড়াপত্তন থেকেই বাঁ-হাতি স্পিনারদের আধিক্য ছিলে দলে। সেই তালিকাতেই সবশেষে সংযোজন তরুণ নাসুম আহমেদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদচারণাটা খুব বেশিদিনের নয়। চলতি বছর মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে অভিষেক! চার সিরিজের ব্যবধানেই ডাক পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও।

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরব আমিরাতে বাংলাদেশের হয়ে পারফরম করতে দেখা যাবে নাসুমকে। বলতে গেলে গেলো দুই সিরিজের পারফরম্যান্সই তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। সাকিবের সাথে জুটি বেঁধে স্পিন বিভাগের গুরুদায়িত্বে থাকবেন নাসুম।

গেলো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে প্রায় পাঁচ ম্যাচে ৫ ইকোনমি রেটে ৯২ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট! পরের নিউজিল্যান্ড সিরিজে পাঁচ ম্যাচে ৫ এর কম ইকোনমি রেটে শিকার করেন ৮ উইকেট! দুই সিরিজে দুইবার সর্বোচ্চ ৪ উইকেট করে নেন নাসুম।

পর পর দুই সিরিজে নজরকাঁড়া পারফরম্যান্স নাসুমকে জায়গা করে দেয় স্বপ্নের বিশ্বকাপ দলে। অথচ এর আগে গেলো জিম্বাবুয়ে সিরিজে এক ম্যাচে ৩ ওভারে ৩৭ রান দেওয়ার পর নাসুমকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মুখর ছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলোতে।

তাঁর দলে থাকা নিয়েও উঠছিলো নানা প্রশ্ন! এরপর সেখান থেকে পর পর দুই সিরিজে দলের হয়ে অন্যতম সেরা পারফরম করে বিশ্বকাপের টিকেটটা নিশ্চিত করেন তিনি। মিরপুরের উইকেট নিয়ে বেশ সমালোচনা হলেও আপাতত নাসুমের লক্ষ্য বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা দেওয়া।

বিশ্বকাপে নাসুম কেমন করবে বলে মনে করছেন?

এখন পর্যন্ত চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দ্বিতীয় অংশে আরব আমিরাতে অনেকটা বোলিং সহায়ক উইকেটই লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে আবুধাবি এবং শারজাহতে স্পিনাররাই বেশি সুবিধা পেয়েছে। বিশ্বকাপের মূল পর্বের আগে আরব আমিরাতের পাশাপাশি অবশ্য ওমানে বাছাইপর্বে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। সেখানের উইকেট অচেনা হওয়ায় কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকলেও সাম্প্রতিক ফর্ম ধরে রাখলে বাছাইপর্বে কোনো সমস্যা হবার কথা নয় বাংলাদেশের।

আইপিএলের উইকেট বিবেচনায় নিলে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পিনাররা এই উইকেট থেকে বাড়তি সুবিধাই পাবে বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নাসুম আহমেদ মিরপুরের মতো সেখানেও নিজের সেরাটা দিতে পারেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়।

অভিজ্ঞতার বিচারে যদি বলি নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ আসর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দিতে না দিতেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ! স্বপ্ন দেখতে না দেখতেই যেনো সবকিছু বাস্তবে রূপ দিচ্ছে। তবে, এখন পর্যন্ত খুব বেশি কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়নি এই তরুণ স্পিনারকে।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন মাত্র ১৪ ম্যাচ। প্রায় ৬.২ ইকোনমিতে শিকার করেছেন ১৮ উইকেট। যার মধ্যে ১৬ উইকেটই নিয়েছেন ঘরের মাঠে গেলো দুই সিরিজে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

দেশের বাইরে খেলেছেন মোটে ৪ ম্যাচ। যদিও আরব আমিরাতের উইকেট স্পিনারদের সহায়তা করবে বলে এখন পর্যন্ত সবার ধারনা। পাওয়ারপ্লেতে এখন পর্যন্ত বেশ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তিনি। পাওয়ারপ্লেতে বিশ্বকাপের মঞ্চেও হতে পারেন দলের অন্যতম ভরসা। এমন একটা আসরে নাসুমের জন্য বড় সুযোগ নিজেকে প্রমাণের। বিশ্বকাপের সেরাটা দিতে পারলেই লম্বা সময়ের জন্য পেয়ে যাবেন জাতীয় দলের টিকেট। অপরদিকে, ব্যর্থ হলে বাদ পড়তে পারেন দল থেকেও।

পেস বিভাগের পাশাপাশি বিশ্বকাপের বাংলাদেশের ঝুলিতে কিছুটা প্রাপ্তি রাখতে হলে স্পিন বিভাগেও দিতে হবে নিজেদের সেরাটা। এদিক সাথে অভিজ্ঞ সাকিবের সাথে নাসুমের জুটিটা হতে পারে বেশ কার্যকরী। নাসুমের ব্যক্তিগত লক্ষ্যটাও থাকবে বোলিং বিভাগে সেরা পারফরম করা।

আর নাসুমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল – কোনো দলই এখন অবধি তাঁর দুর্বলতা বা শক্তির জায়গাটা বুঝতে পারার জন্য যথেষ্ট ম্যাচ পায়নি। বিশ্বের কাছে এখনও নাসুম অনেকটাই অপরিচিত। সেদিক থেকে এই বিশ্বকাপই হতে পারে নাসুমের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link