জাভি হার্নান্ডেজ তখন বার্সেলোনা যুব দলের পরিচিত মুখ। ক্লাব লনে বসে থাকার সময় কেউ একজন এসে খবর দিয়েছিল যে একটা ছেলে এসেছে যে নাকি অবিকল জাভির মতোই খেলে। জাভি প্রথম খেলা দেখার পর রাতে নিজের নোটবুকে লিখে রাখলেন – ‘Andres Can be the best player ever in spain.’
কাতালান জাভি বার্সার যুব দলের মাঝ মাঠে খেলার সময় লক্ষ্য করলেন স্প্যানিশ আন্দ্রেসের একটা অদ্ভুত ক্ষমতা, অবশ্য এই লক্ষ্য করার মধ্যে জাভির নিজেকে নতুন করে আবিস্কার করার ঘটনাটিও ঘটে গেল। আন্দ্রেস সেন্টার সার্কেলে বল পেলেই যেন কোন ঈশারা ছাড়াই বুঝিয়ে দিচ্ছে জাভির সম্ভাব্য অবস্থান।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো জাভি পৌঁছে যাচ্ছে সেখানে, নিখুঁত পাস জমা পড়ছে পায়ে – কিন্তু বার্সা যুব দলে এতদিন এত মিডফিল্ডারের সাথে খেললেও তো এমনটা হয় নি কখনো, কোনো ঈশারা নেই, শব্দ নেই অথচ জাভি যেন বশ হয়ে পৌছে যাচ্ছে আন্দ্রেসের বাড়ানো বলের কাছে, দুই জনের ছোটো ওয়ালে ভেঙে যাচ্ছে ডিফেন্স – খেলা এত সহজ লাগছে কেন আজ হঠাৎ? কে এই ছোট্ট ছেলেটা?
নিয়তিই হয়ত টেনে আনল দুই জনকে, নিয়তিই স্পেনের জাতীয় দলের ছয় আর আট নম্বর জার্সিদুটোকে পাশাপাশি নামিয়ে দিল সবুজ গালিচায়, চাণক্য পেপ আর স্যার দেল বস্কির নিখুঁত প্ল্যানিং-এ জাভি-ইনিয়েস্তা তখন স্পেনের ‘ভিঞ্চি-গ্যালিলিও’ – মাঝ মাঠের দুই শিল্পী!
ম্যানচেস্টার থেকে আর্সেনাল, রিয়াল মাদ্রিদ থেকে চেলসি, জার্মানি থেকে নেদারল্যান্ডস- বিশ্ব ফুটবলের ত্রাস সমস্ত দলই যেন মাথা নত করল স্প্যানিশ মাঝমাঠের এই দুই শিল্পীর সামনে, বিশ্বকাপ ফাইনালে গোলের পর সেই শক্ত করে জাপটে ধরা দুই জনের – রেকর্ড বুক বলছে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিডফিল্ড জুটি, পেপ গার্দিওলা বললেন – ‘ওদের চোখে কালো কাপড় বেঁধে মাঠে নামালেও দুজন ম্যাচ জিতিয়ে দেবে আমাদের।’
কিন্তু কী ছিল তাঁদের ইউএসপি? কোন মন্ত্রবলে চুম্বকের মতো ফুটবলটা প্রতিপক্ষের ভিড়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খুঁজে পেত দুজনের কাছে নিরাপদ আশ্রয়? কীসের এত টান যা কিনা মাঠের মধ্যে দুটো জোনাকি হয়ে জ্বেলে দিত ক্যাম্প ন্যু-এর সমস্ত ফ্লাডলাইটগুলো?
আসলে ‘জাভি-ইনিয়েস্তা’ সেই দোস্তানা ছবির অমিতাভ-শত্রুঘ্ন, সেই আনন্দ বক্সী-লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারেলাল জুটি যারা জীবনের আনন্দগান গেয়ে গেছেন সবুজ গালিচা জুড়ে, সেই কিশোর-রফি ম্যাজিক যা লিখে গেছে আগামী ১০০ বছরে মিডফিল্ড ফুটবলের সোনালি ব্লু-প্রিন্ট – ‘সালামাত রাহে দোস্তানা হামারা!’