একটা জার্সি, পুরো একটা দেশ। একটা দল পুরো এক জনগোষ্ঠী। ঠিক একারণেই তো আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট গুলো নিয়ে এত মাতামাতি হয়। আর সে মঞ্চে পারফরমেন্স করবার জন্যে মুখিয়ে থাকা স্বপ্ন বিভোর কিশোর কিংবা তরুণের সংখ্যা তো আর কম নয়। একটা জাতির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার চাইতে আর গর্বের আর কি-ই বা হতে পারে।
আর ছোট্ট বয়সেই বৈশ্বিক এক টুর্নামেন্টের মঞ্চে পারফর্ম করাটাও তো নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়। তবে ভারতের হয়ে এমন কঠিন কাজটা করেছেন বহু খেলোয়াড়। তাদেরকে নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন। ভারতের সে নীল জার্সিটি গায়ে জড়িয়ে সবচেয়ে কম বয়সে আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জেতা খেলোয়াড়রা থাকছেন আজ।
- বিরাট কোহলি
ভারতের অন্যতম সফল ব্যাটার বিরাট কোহলি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন অগণিতবার। তেমনই এক উদাহরণ হল ২০০৯ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এক ম্যাচে। পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়ার পথটা সুগম করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সে ম্যাচ জেতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভারতের জন্যে। ১২৯ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অল আউট করে দিয়ে কাজটা সহজ করে দিয়েছিল ভারতের বোলাররা।
তবে ব্যাট করতে নেমে বিপাকে পড়ে যায় ভারত, ১২ রানের মাথায় দুই উইকেট হারিয়ে। ঠিক তখন ২০ বছর ৩২৯ দিন বয়সী বিরাট দলের হাল ধরেন। ক্যারিবিয়ান পেস তাণ্ডবের সামনে দাঁড়িয়ে ১০৪ বলে ৭৯ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন বিরাট। অনায়াসে সে ম্যাচটা সাত উইকেটে জিতে নেয় ভারত। ফলশ্রুতিতে নিজের প্রথম ম্যাচ সেরার পুরষ্কারটা জিতে নেন বিরাট।
- রোহিত শর্মা
ভারতের বর্তমান দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও থাকছেন এই তালিকায়। মারকাটারি ব্যাটার রোহিত শর্মাকে একটা সময়ে দলে জায়গা করে নিতে লড়াই করতে হয়েছে। আর নিজের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েই তিনি ভারতের মত ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হতে পেরেছেন।
সেই ২০০৭ সালে তিনি তাঁর সামর্থ্যের প্রথম ঝলকটা দেখিয়েছিলেন। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে ভারতের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে, খোদ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমেছিল ভারত।
লড়াই তো দূরের কথা, শুরুতেই হোচট খায় দলটি। ৬১ রানের মাথায় চার উইকেট হারিয়ে ফেলে। একটা লড়াকু সংগ্রহ যখন বহুদূরের মরিচীকা ঠিক তখন ২০ বছর ১৪৩ দিনের রোহিত নিজের আসল রুপটা দেখাতে শুরু করেন। কঠিন মুহূর্তে ব্যাট করতে নেমে তুলে নেন ৪০ বলে অর্ধশতক। তাতে ভর করেই পরে ভারত ১৫৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিল এবং শেষমেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি হেরেছিল ৩৭ রানে। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার তো তারই প্রাপ্য ছিল।
- শচীন টেন্ডুলকার
ক্ষুদে বিস্ময় হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে পদার্পণ করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। বিস্ময়ের ডালপালা মেলে তিনি হয়ে রয়েছেন বিশ্বক্রিকেটের এক কিংবদন্তি। বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি শতকের পর শতক করে গড়ে গেছেন এক অভেদ্য রেকর্ড। তাঁর সেই রেকর্ডের ধারে কাছেও যেন যাওয়া মুশকিল। তিনি বরাবরই দলের জন্যে করে গেছেন। ১৯৯২ বিশ্বকাপ অন্যতম এক উদাহরণে্র ধারক।
সেবার কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার তিনি জিতেছিলেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। তিন দিনের ব্যবধানে। দ্বিতীয়বার যখন যেতেন তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর ৩১৭ দিন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষের ম্যাচে দ্রুত ব্যাট চালিয়ে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ৮১ রানে। বৃষ্টি আইনের মারপ্যাঁচে সে ম্যাচে ৫৫ রানের বড় জয় পায় ভারত। আর ম্যাচ সেরার পুরষ্কার নিজের করে নেন শচীন।
- শচীন টেন্ডুলকার
শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটে ভর করে তো আর কম রেকর্ডের জন্ম হয়নি। তিনি যেন ক্রিকেটকে আলাদা এক রঙে রাঙিয়ে গিয়েছেন। ১৯৯২ সালে মাত্র ১৮ বছর ৩১৪ দিন বয়সেই তিনি বাগিয়ে নিয়েছিলেন ম্যাচ সেরার পুরষ্কার। তাও আবার পাকিস্তানের মত শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নেমে ৬২ বলের ৫৪ রানের এক ইনিংস খেলেন শচীন।
তাতে একটা লড়াকু সংগ্রহ পায় ভারত। পাকিস্তানের ব্যাটারদের রীতিমত খাবি খাইয়ে জয় তুলে নিয়েছিল ভারত। আর গ্রুপ পর্বের সে জয়ের সুবাদে ম্যাচ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন আঠারো পার করা তরুণ ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার।
- যুবরাজ সিং
ক্যান্সার জয় করে আবারও যে ক্রিকেট মাঠে ফেরা যায় তেমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিয়ে গেছেন যুবরাজ সিং। কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ছিলেন আজন্ম লড়াকু। তাই তো বেশ অল্প বয়সেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের ঠিকানা। এমনকি ভারতের নীল জার্সি জড়িয়ে তিনি খেলেছিলেন আইসিসি নকআউট টুর্নামেন্টে, আজকাল যা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে।
২০০০ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফ্রি নিয়ে হওয়া সে আসরে কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাল্টা আক্রমণ চালান যুবরাজ। সেটাই যেন ছিল তাঁর স্বভাবচারিত ব্যাটিং। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ভারত যুবরাজের ব্যাটে ভর করে ২৬৫ রানে বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়। যুবরাজ করেন ৮০ বলে ৮৪ রান। একদিকে ভারতীয় বোলাররা জিতে নেয় ম্যাচ, অন্যদিকে ১৮ বছর ২৯৯ দিনের যুবরাজ জিতে নেয় ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।