Social Media

Light
Dark

বেপরোয়া পরাগায়ন

ক্রিকেটারদের দায়িত্ব শুধু বাইশ গজে নেমে নিজের সেরাটা দেয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এখানে ভালো খেলার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে রোল মডেল হওয়াটাও জরুরী। সংযত আচরণের কোনো বিকল্প  একজন ক্রীড়াবিদের জীবনে নেই। কিন্তু  হাতের পাঁচটা আঙুল যেমন সমান নয়, তেমনি মাঠের সব ক্রিকেটারের আচরণও একই নয়।

যেসব ক্রিকেটার নিজেকে তথাকথিত আচরণের মাপকাঠিতে খাপ খওয়াতে চান নি কিংবা যারা সবার চেয়ে একটু আলাদা হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন, বরাবরই তাদের সাথে ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। সাবেক ক্রিকেটার বিনোদ কাম্বলি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি মাঠে খুব ভালো খেললেও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না।

প্রতিভা নিয়েও কোনো প্রশ্ন ছিল না তাঁর। তবে, শৃঙ্খলাজনিত কারণে মাত্র ২৩ বছর বয়সের পর তাঁকে আর টেস্ট মাঠে নামার সুযোগ দেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে মাত্র ১৭ টি টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী শেন ওয়ার্ন যদি ভারতীয় ক্রিকেটার হতেন, তবে হয়ত ডোপ টেস্ট বিতর্কের কারণে তাঁর ক্যারিয়ার মাঝপথেই থেমে যেতো।

প্রত্যাশিত নিয়মের মাপকাঠি মানতেন না বলে ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি রবি শাস্ত্রীও তার সময়ে সমালোচিত ছিলেন। কারণ শাস্ত্রী ছিলেন  স্পষ্টভাষী; তিনি তার জীবন উপভোগ করতে পছন্দ করতেন। আবার বিরাট কোহলি  ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটার হওয়া সত্ত্বেও শরীরে আঁকা ট্যাটু, আগ্রাসী মনোভাব আর আত্মবিশ্বাসের জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছেন নেটিজেনদের কাছে।

ভারতীয় ক্রিকেট অনুরাগীদের মতে আদর্শ ক্রিকেটার হওয়ার জন্য এখনও পুরনো ‘টেমপ্লেট’ই অনুসরণ করতে হবে । যেমন – মাঠের মধ্যে বিনয়ী হতে হবে, মাঠের বাইরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকা যাবেনা, পোশাক হতে হবে নম্র- মানে ক্রিকেটারকে সমাজের বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি অনুযায়ী খাপ খাওয়াতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখা হয় না যে মানুষ হিসেবে ক্রিকেটারদের প্রত্যেকের মানসিকতাই হলো আলাদা ও অনন্য। কোন একজনের মাপকাঠিতে অন্যজনকে আশা করাটা তাঁর স্বকীয়টাকে বাঁধা দেয়।

সবাই কোহলি, ধোনি বা হার্দিক পান্ডিয়া নন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে সমালোচনা মোকাবেলা করার সক্ষমতা সবার হয়না। এভাবে তাই অনেক ক্রিকেট প্রতিভা অচিরে  হারিয়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি নেটিজেনদের সমালোচনার তোপের মুখে পড়েছেন অলরাউন্ডার রিয়ান পরাগ। বয়স তাঁর সবে কুড়ি বছর। ইতিমধ্যেই রিয়ান পরাগ ক্রিকেটের অঙ্গনে নাম করেছেন বেশ। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অনেকদিন হল খেলছেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। কিন্তু হয়ত নামের চেয়েও যেন দুর্নামই বেশি কুড়িয়েছেন এই অলরাউন্ডার।

তিনি খারাপ খেলোয়াড় নন। অন্তত ক্রিকেটের মাঠে তো ননই। তবুও তাকে নিয়ে  সমালোচনা বেশ প্রকট হয়ে উঠেছে ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনে।

২০২২ সালের আইপিএলে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর ধরা একটি ক্যাচ তৃতীয় আম্পায়ার বাতিল করে দেওয়ায় মাঠেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন রিয়ান। যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। আবার সেই আচরণ একেবারেই ভালোভাবে নেননি ধারাভাষ্যকাররা, কিংবা ক্রিকেট বোদ্ধারাও।

সাবেক অস্ট্রেলিয়া তারকা ম্যাথু হেইডেন তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ইয়ং ম্যানের জন্য আমার একটা পরামর্শ আছে। ক্রিকেট অত্যন্ত দীর্ঘ সময়ের খেলা। আর কিছু স্মৃতি অনেকদিন মনে থাকে দর্শকের। এখানে ভাগ্যের সাথে ছেলেখেলা করাটা বোকামি।’

একই সুরে সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা ইয়ান বিশপও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ভাল পারফর্ম করলেও মাঠে পর পর বিতর্কে জড়াচ্ছেন রিয়ান। আচরণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্মান না করার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

কিন্তু মাঠে রিয়ানের আচরণ নিয়ে সমালোচনা চললেও সে সব গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজস্থানের এই তরুণ অলরাউন্ডার। আইপিএলে এর আগেও সমালোচিত হয়েছেন তিনি। বিরাট কোহলিকে আউট করার পর তাঁর উচ্ছ্বাস দেখেও সমালোচনা করেন অনেকে। আবার  মোহাম্মদ সিরাজ এবং হার্শাল প্যাটেলের সঙ্গেও মাঠে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছেন। সব মিলিয়ে মাঠের মধ্যে রিয়ানের আচরণ ভাল চোখে দেখছেন না  ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারাও। তাছাড়া নেটিজেনদেরও কড়া নজরে রয়েছেন তিনি।

পরাগ সম্পর্কে ক্রিকেটার ডোয়াইন ব্রাভো বলেন, যতক্ষণ অব্দি পরাগ নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট ও আত্মবিশ্বাসী থাকবেন ক্রিকেটে তাঁর অগ্রজদের মতোই সফলতা ধরে রাখতে  পারবেন। সমালোচকদের মতামতের প্রেক্ষিতে নিজেকে সন্দেহ করা শুরু করলেই তিনি বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার গ্রেইম হিকের মতো নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। আশা করি সব সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে পরাগ একদিন ফুল হবেন। বাইশ গজে বাজিমাত করে জ্বলে উঠবেন আপন মহিমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link