সময়ের সাথে মানুষে মাঝে যেকোন কাজেই আসে পরিপক্কতা। তবে নিজের মধ্যে থাকা সম্ভাবনার প্রকাশটা ছোট্ট কালেই পেয়ে যায়। বিকশিত হতে দিতে হয়, সুযোগের প্রয়োজন হয়। ক্রিকেট দুনিয়ায় বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া কাঠামোতে থাকে নানান বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। তবে একজন খেলোয়াড় প্রথম সবচেয়ে বড় সুযোগটা পায় অনূর্ধ্ব১৯ বিশ্বকাপে। সেখানেই নিজের সামর্থের জানান দিয়ে পরবর্তীতে জায়গা করে নেয় দেশটির জাতীয় দলে।
আজকের তালিকায় থাকছে ২০১৪ সালে যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলা সেইসকল খেলোয়াড়, যারা কিনা পরবর্তী সময়ে গায়ে জড়িয়েছেন জাতীয় দলের জার্সি।
- শ্রেয়াস আইয়ার (ভারত)
ভারতের টপ অর্ডারে ধীরে ধীরে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন শ্রেয়াস আইয়ার। ২০১৪ সালের আরব আমিরাতে বসেছিলো যুব বিশ্বকাপ। সেই আসরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলো ভারত। তবে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ বা সুপ্ত প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার।
এরপর ঘরোয়া লিগে নিয়মিত পারফর্ম করে তিনি ২০১৭ সালে জায়গা করে নেন জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দলে। তবে ২০২১ অবধি অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে টেস্ট ক্যাপের জন্য। প্রায় প্রতিটা ফরম্যাটেই বেশ উজ্জ্বল শ্রেয়াস আগামী দিনের আলোর উৎস হবার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছেন এখন অবধি।
- ইমাম-উল হক (পাকিস্তান)
চাচা ইনজামাম উল হকের বেশ নাম ডাক রয়েছে বিশ্বক্রিকেটে। তবে ইমাম িউল হক নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করেই পাড়ি দিয়েছেন জাতীয় দলে আসার পথ। ইমাম ছিলেন ২০১৪ সালের যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের রানার্স আপ দলের সদস্য। দলকে ফাইনাল অবধি তুলে নিতে ব্যাট হাতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদানই রেখেছিলেন তিনি।
ইমামের ব্যাটিং দক্ষতার যথাযথ প্রমাণ মিলেছিলো সেই বছর সাতেক আগেই। সেখান থেকে নিজেকে আরো শাণিত করে ইমাম উল হক যুক্ত হন জাতীয় দলের সাথে। ওয়ানডে দিয়ে অভিষেক হয় তাঁর ২০১৭ সালে। এরপর আঠারোতে টেস্ট ও উনিশে তিনি খেলেন টি-টোয়েন্টি।
- এইডেন মার্করাম (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২০১৪ যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন এইডেন মার্করাম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং অসাধারণ ব্যাটিং পারফর্মেন্সের বদৌলতে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দারুণ খেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিং এর দায়িত্ব যথাযথ পালন করে তিনি হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন মার্করাম।
সেই থেকেই তাঁর প্রতিভার আভাস পেয়ে গিয়েছিলো পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। তারপর স্বপ্নের সিড়ি ধরে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন প্রোটিয়া টেস্ট দলে। সালটা তখন ২০১৭। এরপর সেই বছর ওয়ানডের রঙিন জার্সিও তিনি নিজের গায়ে জড়ান। ২০১৯ এ এসে টি-টোয়েন্টি খেলা শুরু করেন তিনি জাতীয় দলের হয়ে। এরপর থেকেই প্রোটিয়া ব্যাটিং এর ভরসার জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছেন এইডেন মার্করাম।
- নিকোলাস পুরান (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে দলের নিয়মিত মুখ হার্ড হিটার নিকোলাস পুরান। এই নিকোলাস পুরানও ছিলেন ২০১৪ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী সম্ভাবনাময়ী খেলোয়াড়দের একজন। দলগতভাবে তাঁদের হাতে সফলতা ধরা না দিলেও পুরান নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন সেই ২০১৪ সালের যুব বিশ্বকাপেই।
এরপর জাতীয় দলে যুক্ত হওয়া ছাড়াও বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগে নিজের একটা ডিমান্ড তিনি তৈরি করে ফেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলের জার্সি তিনি গায়ে জড়িয়েছেন ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ২০১৯ এ ওয়ানডে অভিষেক হলেও টেস্ট দলে এখন অবধি সুযোগ পাননি পুরান।
- কুশাল মেন্ডিস (শ্রীলঙ্কা)
দলকে নেতৃত্ব দিয়ে কুশাল মেন্ডিস ২০১৪ সালে যুব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও সেবারের রানার্স আপ পাকিস্তানের কাছে হেরে বিদায় নেয় তাঁর দল, কিন্তু তাতেও নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করে গিয়েছেন কুশাল মেন্ডিস। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালেই পেয়ে যান শ্রীলঙ্কান জাতীয় টেস্ট দলের সম্মানের প্রতীক ‘ক্যাপ’। লঙ্কান দলটা বর্তমানে নড়বড়ে অবস্থানে থাকলেও কুশাল নিজেকে জাতীয় দলে রেখেছেন অনড়। ২০১৬ তে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে অভিষেকের পর এখন তিন ফরম্যাটেই লংকান জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্যে পরিণত হয়েছেন কুশাল মেন্ডিস।
- কাগিসো রাবাদা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
বর্তমান সময়ে বিশ্বক্রিকেটের যে সকল বোলাররা দাপটের সাথে খেলে যাচ্ছেন তাঁদের মধ্যে কাগিসো রাবাদা অন্যতম। তিনি ২০১৪ যুব বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ী বোলার। দলের ব্যাটিং এর ভার যেমন সামলেছেন এইডেন মার্করাম ঠিক তেমনি বোলিং এর দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা। রাবাদা সেই যুব বিশ্বকাপ পরবর্তী সময় প্রোটিয়াদের হয়ে তিন ফরম্যাটেই থিতু হয়েছেন তিনি। আইসিসি বোলার র্যাংকিং এ টেস্ট ও ওয়ানডেতে সেরা দশে রয়েছেন কাগিসো রাবাদা। বেশ সম্ভাবনাময়ী এই বোলার ২০১৪ সালেই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। টি-টোয়েন্টি দিয়ে তিনি তাঁর যাত্রা শুরু করেন। এক বছরের মাথায় বাকি থাকা দুই ফরম্যাটেও তাঁর অভিষেক হয়ে যায়।
- কাইল জেমিসন (নিউজিল্যান্ড)
বাংলাদেশের কাছে হেরে দশম স্থানে শেষ করেছিলো নিউজিল্যান্ড ২০১৪ সালের যুব বিশ্বকাপ। সেই দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম সদস্য ছিলেন কাইল জেমিসন। বর্তমান সময়টাকে ধরা হয় ব্ল্যাকক্যাপদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা বোলারদের সময়। আর সেই সকল সেরা বোলারদের মধ্যে রয়েছেন কাইল জেমিসনও।
তাঁর জাতীয় দল ক্যারিয়ারটা একটু দেরিতে শুরু হলেও তিনি ঠিকই নিজের জায়গাটা বানিয়ে নিয়েছেন দলে। বিশেষ করে টেস্ট দলে। ২০২০ সালেই কিউইদের হয়ে তিন ফরম্যাটে খেলা শুরু করেন কাইল জেমিসন। টেস্ট ক্রিকেটের আইসিসি প্রদত্ত বোলারদের র্যাংকিং এ জেমিসন তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন।
- মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দূর্বোদ্ধ এক বোলারের আগমন ঘটেছিলো ২০১৫ সালে। তবে তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল আগের বছরের যুব বিশ্বকাপেই। বা-হাতি বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। ২০১৪ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলেই পরের বছরেই সম্ভাবনাময়ী এই বোলার জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলে।
দারুণ শুরুও করেছিলেন কিন্তু বর্তমান সময়ে তিনি খুব একটা ভাল ছন্দে নেই। ইনজুরিজনিত কারণে তাঁর বোলিং এর বেশ পরিবর্তন এসেছে। তাছাড়া দূর্বোদ্ধ বোলিং এখন প্রযুক্তির বদৌলতে আর আগের মতো আর বিধ্বংসী অবস্থানে নেই। তবুও তিনি সাদা বলের ফরম্যাটে বাংলাদেশের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ।