চার পাণ্ডবের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ফায়দা কি!

নামের জোরে, পূর্বের অবদানের কথা মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য হবে আত্মঘাতী।

আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চার পাণ্ডবই খেলতে চলেছেন। আবেগ নয়, বরং বিবেক দিয়ে চিন্তা করলে বিষয়টি বেশ নেতিবাচক। ধারণা করা যাচ্ছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেই চার পাণ্ডব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতি টেনে দেবেন।

যদি তেমনটি হয়, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাদের অংশগ্রহণ কোনভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে সুখকর কিছু বয়ে নিয়ে আসবে না। গেল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ খেলেছিল সেমিফাইনাল। এবার অন্তত ফাইনালের টার্গেট নিয়ে খেলা উচিত। কিন্তু তেমনটি ঘটবে কি-না, তা নিয়ে রয়েছে প্রবল সন্দেহ।

অথচ, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরই এই চারজনের পরিবর্তে তরুণদের অল্প-স্বল্প সুযোগ দিয়ে তৈরি করা যেত। তাতে করে বিকল্প খেলোয়াড় নিয়ে হাপিত্যেশ করতে হতো না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই হয়ত বাংলাদেশ দল খেলাতে চলেছে চার পাণ্ডবকে।

কিন্তু চারজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের একসাথে বিদায়ে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ পড়বে বিপাকে। কেননা তাদের বিকল্প যে তৈরি হওয়ারই সুযোগ পাওয়া যায়নি কখনো। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অধিকাংশই যে নেই সঠিক ছন্দে। এমন চারজন খেলোয়াড় বরং হয়ে যেতে পারে দলের বোঝা।

সাকিব আল হাসান টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও একই পথে হাঁটছেন। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছেন। তারা প্রত্যেকেই এখনও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাবেন। তাদের প্রত্যেকের টার্গেট আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য সময় বাকি মোটে চার মাস। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ানডে খেলার সুযোগ রয়েছে তিনটি। ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে, এর থেকে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সুযোগ নেই বাংলাদেশের। অতএব এই চারজন ক্রিকেটারেরও সামনে সুযোগ আছে স্রেফ তিনটি ম্যাচ।

এই তিনটি ম্যাচের মধ্যে তারা নিজেদের ছন্দে ফিরবেন, সেটা ভাবা বোকামির সামিল। প্রায় এক বছর আগে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তামিম। সাকিব আল হাসান ২০২৩ সালের নভেম্বরে খেলেছেন ওয়ানডে। মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন চলতি বছরের মার্চে। একই সময়ে খেলেছেন মুশফিক।

এই চারজনের মধ্যে তামিম দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। তাছাড়া সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর পারফরমেন্স ক্রমশ নিম্নগামী। স্রেফ মুশফিক টিকে আছেন দারুণ ফিটনেসের জোরে। তার ব্যাটে রান আছে, তবে ওয়ানডে ফরম্যাটে সাম্প্রতিক পারফরমেন্স সন্তোষজনক নয়।

অতএব, এই স্বল্প সুযোগ আর অল্প সময়ের মধ্যে তারা প্রত্যেকে দারুণ ছন্দে ফিরবেন- এই ভাবনা অমূলক বটে। প্রথমত, এই ধারায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের পক্ষে ফলাফল না আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাছাড়া গেল আসরের সেমিফাইনালিস্ট এবারের আসরে নড়বড়ে হয়ে খেলতে যাবে। নামের জোরে, পূর্বের অবদানের কথা মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য হবে আত্মঘাতী।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নিতে চলেছে। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটে গেলে এই চারজনই থাকছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। ফলাফল ছাপিয়ে এই অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরও পিছিয়ে দেবে এবং সেটাই হতে চলেছে। পুরো ঘটনাটা নিশ্চিতরূপেই দর্শক-সমর্থকদের জন্য হতাশার।

Share via
Copy link