শুরুটা করেছেন মাইকেল ক্লার্ক।
তিনি ঋষভ পান্তের প্রশংসা করতে গিয়ে সম্ভবত একটু বেশিই উচ্ছসিত হয়ে পড়েছিলেন। বলেছেন, পান্তকে তার কাছে ধোনি আর গিলক্রিস্টের মিশ্রন মনে হয়। গিলক্রিস্টের কথা বাদ দিন; ধোনির সাথেই কী পান্তের তুলনা হয়? সেটা কী করা উচিত?
প্রথমত পান্ত মোটেও সর্বোচ্চ মানের একজন উইকেটরক্ষক নন। ধোনি বা গিলক্রিস্ট ব্যাটে অসাধারণ ছিলেন। মিডল অর্ডারে ঝড় তুলেছে বিখ্যাত হয়েছেন, ঠিক আছে। কিন্তু তারা সেই সাথে স্ট্যাম্পের পেছনে যথেষ্ট বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু পান্তকে এখন পর্যন্ত মোটেও তা মনে হচ্ছে না।
ক্লার্ক অবশ্য পান্তের এই দুর্বলতাটা মেনে নিয়েই বলেছেন, ‘ঋষভ পান্তের মতো একজনকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়াই যায়। হ্যাঁ, একটি-দুটি ক্যাচ সে ছাড়তে পারে। কিন্তু সে টেস্ট সেঞ্চুরিও করতে পারে বা ডাবল সেঞ্চুরি, ট্রিপল সেঞ্চুরিও করতে পারে। ব্যাট হাতে দলকে ম্যাচ জেতাতে পারে সে। তার ব্যাটিংয়ের ধরনে ধোনি, অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মিশ্রন আছে। সত্যিকারের মহাতারকা সে।’
এরপরই আরেক ধাপ এগিয়ে গেছেন। বলেছেন কিংবদন্তি গিলক্রিস্ট ও ধোনির সাথে তার মিল আছে। কেবল মিল আছে, তা নয়। দু’জনের মিশ্রন মনে করেন তিনি পান্তকে। বলছিলেন, ‘আইপিএলে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়ও আমি পান্তকে দেখেছি। সবসময়ই মনে হয়েছে সে সুপারস্টার। আমার মনে হয়, ভারত প্রথম টেস্টে ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে তাদের সেরা কিপারকে (ঋদ্ধিমান সাহা) দলে নিয়েছিল।’
এখন পান্ত সুপার স্টার হয়ে উঠতেই পারেন।
তার ব্যাটে সে শক্তি আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আইপিএলে তো সেটা আগেই দেখিয়েছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া সফরেও বুঝিয়েছেন, যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যাট কথা বলতে পারে। যেটা ছিলো ধোনির সবচেয়ে বড় শক্তি।
ধোনির ব্যাপারটাই ছিলো বিরূপ পরিস্থিতিকে নিজের নাগালে নিয়ে আসা। সেটা হয়তো ব্যাট হাতে পান্ত করলেও করতে পারেন। হতে পারে উইকেটের পেছনেও পান্ত আগের চেয়ে ভালো হয়ে উঠলেন।
কিন্তু ধোনি কী কেবলই একজন ভালো উইকেটরক্ষক বা কেবলই একজন ভালো ক্রাইসিস ম্যাচ ছিলেন? ঘটনাটা এতো সরল নয়। ধোনি একটা ক্রিকেটের ব্র্যান্ড তৈরী করেছেন। তিনি নতুন এক ধরণের ক্রিকেট নেতৃত্ব; ব্যাটে-উইকেটকিপিংয়ে, দল সামলানোয়, সামনে এনেছিলেন। ধোনি তার এই নতুন ক্রিকেট দিয়ে প্রায় সবকিছুই জয় করেছেন ক্রিকেটে।
ধোনি কেবল একজন ক্রিকেটার নন; তিনি একটা স্টাইল।
এটা কোনো তরুণ তারকার সামনে গোল সেট করে দেওয়া যায় না। আপনি ট্রেনিং নিয়ে, নিজেকে ঘষেমেজে আর যাই হোক, ধোনি হতে পারবেন না। ধোনি ফ্যাক্টরিতে বানানো যায় না। ওটা একেবারে ইউনিক একটা জিনিস। ওটা একটাই হয়। ফলে কোনো তরুনের সামনে আপনি ধোনিকে রেখে সেদিকে দৌড়াতে বলা মানে, শুরুতেই তাকে একটা বাঁধার মধ্যে ফেলে দেওয়া।
আপনি একজন নতুন ধোনির স্বপ্ন দেখতে পারেন; সে স্বাধীনতা আপনার আছে। কিন্তু কোনো নতুনকে ‘ধোনি হতে চাই’ ভাবতে বলাটা ওই তরুণের সাথে এক ধরণের অন্যায়।
আমার মনে হয়, এই ব্যাপারটা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছেন পান্ত নিজে। তিনি আজই মিডিয়াতে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আর যাই হোক, ধোনি হওয়ার চাপ তিনি নিতে রাজী নন।
তিনি বলছিলেন, ‘এমএস ধোনির সঙ্গে তুলনা করলে যে কারোরই ভালো লাগবে, আর আমাকে তার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এটা দারুণ। তবে আমি চাই না কারো সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে। ভারতীয় ক্রিকেটে নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই। কারণ একজন কিংবদন্তির সঙ্গে একজন তরুণের তুলনা করা ঠিক নয়।’
এটাই সার কথা। পান্ত হয়ে উঠুন ‘ঋষভ পান্ত’; ভালো বা মন্দ। হতে পারে তিনি নতুন একটা কিছু হলেন। কিন্তু ধোনি হওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবেন না।